National news

মাতৃত্ব অপেক্ষা করতে পারে, শিক্ষা নয়

২০১১ সাল। মাত্র কয়েক বছর আগের কথা। সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্টফোন, শপিং মল, প্রযুক্তির ভিড়ে ভারত তখন জেনওয়াই-এর কবলে। তবু আদমসুমারী বলছে, দেশের ১ কোটি ৩০ লক্ষ মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ১০-১৯ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে ৩৮ লক্ষ মেয়ে এর মধ্যেই মা হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ১৩:৫৪
Share:

সিনেমার একটি দৃশ্য

২০১১ সাল। মাত্র কয়েক বছর আগের কথা। সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্টফোন, শপিং মল, প্রযুক্তির ভিড়ে ভারত তখন জেনওয়াই-এর কবলে। তবু আদমসুমারী বলছে, দেশের ১ কোটি ৩০ লক্ষ মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ১০-১৯ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে ৩৮ লক্ষ মেয়ে এর মধ্যেই মা হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে ১৪ লক্ষের রয়েছে দুই বা তার বেশি সন্তান। বয়ঃসন্ধি পেরনোর আগেই। আগামিকাল আরও একবার সগর্বে মাদার’স ডে উদযাপন করবে দেশের শিক্ষিত, শহুরে প্রজন্ম। সোশ্যাল মিডিয়া ভরে উঠবে মা-কে নিয়ে কোট, সেলফি, পোস্টে। কেউ কেউ হয়তো মাকে কিনে দেবে দামি কোনও উপহার, বা নিয়ে যাবে কোনও পছন্দের বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয়। প্রতি দিনের মাতৃত্বের বোঝা বয়ে বেড়়ানো এই ৩৮ লক্ষ কিশোরীও কি সেই উদযাপনে সামিল হবে? সম্ভব নয়। কারণ এদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ যে শিক্ষার অধিকার থেকেই বঞ্চিত!

Advertisement

২০১১ সালের পর কেটে গিয়েছে আরও ৬টা বছর। হোয়াটসঅ্যাপে এখন করা যায় ভিডিও কল, ফেসবুকে হয় লাইভ। আইপিএল দশ পেরিয়ে পা দিয়েছে এগারোয়। সব কিছুই ‘আপডেটেড।’ তবে আদমসুমারীর সেই তালিকা বোধহয় নিজেকে আপডেট করতে ভুলে গিয়েছে। ২০১৫-’১৬ সালের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের রিপোর্ট বলছে, সমীক্ষা চলাকালীন দেশের ১৫-১৯ বছর বয়সী ৪৫ লক্ষ মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিল।

এ রাজ্যের ছবিটাও আলাদা নয়। ২০১১ সালের আদমসুমারী অনুযায়ী এ রাজ্যে ১০-১৯ বছরের মধ্যে বিয়ে হয়ে যাওয়া ৫০ শতাংশ মেয়েই নিরক্ষর। যারা বয়ঃসন্ধি পেরনোর আগে মা হয়েছেন। অন্য দিকে, ৩৭ শতাংশ মেয়ের কৈশোরে বিয়ে হলেও অক্ষরজ্ঞান ও ন্যূনতম শিক্ষার কারণে মাতৃত্ব ঠেকাতে পেরেছেন। চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ (ক্রাই)-এর সমীক্ষা বলছে, অসম, মণিপুর, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশাতেও সাক্ষরতা অনেক মেয়েকেই কৈশোরে বিয়ে ও মা হওয়ার শিকার হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ১০ বাড়ি কাজ করেই ফার্স্ট ক্লাস পেল আফসান

ক্রাই-এর ডিরেক্টর কোমল গানোত্রা বলেন, ছোট থেকেই শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছনোর আগেই বিয়ে করতে বাধ্য হয় তারা। কৈশোরে বিয়ে ও মাতৃত্ব এই সব মেয়ের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিক ভাবে হতে দেয় না। যার প্রভাব এদের সন্তানের উপরেও পড়ে। মা হওয়ার সময় শরীর যথেষ্ট পুষ্ট না হওয়ার কারণে তাঁরা রক্তাল্পতায় ভোগেন। যার প্রভাবে গর্ভাবস্থার সময় সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই অসুস্থ, অপুষ্ট সন্তানের জন্ম দেয় তারা।

মা যত শিক্ষিত হবে, সন্তান তত সুস্থ হবে। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ৪-এর ডেটা বলছে, যেই সব শিশু নিরক্ষর মায়ের সন্তান তাদের মধ্যে ৫১ শতাংশই শৈশবে ভ্যাক্সিনেশন ও ইমিউনাইজেশন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অন্য দিকে, সাক্ষর মায়েদের সন্তানদের মধ্যে ইমিউনাইজেশন থেকে বঞ্চিত হওয়ার হার কমে এসেছে ৩১ শতাংশে। আবার যে শিশুদের মায়েরা সেকেন্ডারি স্কুল পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেয়েছে তাদের শিশুদের মধ্যে ৬৭ শতাংশই ইমিউনাইজেশনের কোর্স সম্পূর্ণ করেছে।

কোমলের মতে, তাই মাদার্স ডে-তে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সুস্থ মাতৃত্ব। তার জন্য প্রথম প্রয়োজন সেকেন্ডারি এডুকেশন সকলের সামর্থের মধ্যে নিয়ে আসা। কারণ শিক্ষা শুধু যে বাল্যবিবাহের হার কমাবে তাই নয়, মেয়েদের সার্বিক স্বাস্থ্য, জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা উন্নত করবে। কারণ, সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য সুস্থ মাতৃত্ব আবশ্যিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement