অলঙ্করণ: শেখর রায়।
খেলাটা শুরু হয়েছিল বাড়ির উঠোনে। পিসতুতো দাদাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম। সেটা অবশ্য খেলা বললে ভুল হবে। বাউন্ডারির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমার কাজ ছিল বল কুড়িয়ে আনা। নদিয়ার চাকদহে আমার গ্রাম। ক্রিকেট দুনিয়ায় আসার ইচ্ছেটা বোধহয় তখন থেকেই। আর একটু বড় হলাম। বাড়ির গন্ডি পেরিয়ে খেলা শুরু হল বাইরেও। তবে তখন আমি ছাড়া আর কোনও মেয়েই ওই গ্রামে ক্রিকেট খেলত না। গ্রামের ক্রিকেটেও একচ্ছত্র অধিকার শুধু ছেলেদের। ফলে গ্রামের মাঠে বেশ জাকিয়ে বসা ক্রিকেট খেলা দেখতে দেখতে কোনও দলে ভিড়ে যাওয়ার ইচ্ছাটা তাই মনের মধ্যেই দমন করতে হত। মেয়ে হয়ে ক্রিকেট খেলবে! তখন কেউ যেন ভাবতেই পারতেন না। তারপর ঠিক করলাম পেশাদারের কাছ থেকে ক্রিকেটে প্রশিক্ষণ নেব। কিন্তু সেখানেও বাধা। পরিবারকে বোঝানোটা অতটা সহজ ছিল না।
মেয়েদের ক্রিকেট!... কেন?... আর পড়াশোনা? সারাদিন রোদের মধ্যে প্র্যাকটিস করলে তো ত্বকের বারোটা বাজবে, তখন!... এরকম অনেক প্রশ্নেই জর্জরিত হতে হয়েছে। আসলে সমস্যাটা কোনও একজন বা দু’জনের নয়, সমস্যাটা সমাজের। এটা আসলে সমাজের প্রতিবন্ধকতা। মেয়ে মানেই যা হোক করে স্নাতক পাশ করিয়ে পাত্রস্থ করে দাও। ব্যস, বাবা-মায়ের সমস্ত দায়িত্ব শেষ। আর সেই মেয়ের একমাত্র দায়িত্ব হয়ে ওঠে সংসার সামলানো। এর বাইরে খুব জোর কোনও সরকারি চাকরি। এই চিরাচরিত গন্ডির বাইরে মেয়েরা বেরতে গেলেই মুশকিল। তাঁর উপর আছড়ে পড়ে নানা বাধা।
রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের হাত থেকে অর্জুন পুরস্কার নিচ্ছেন ঝুলন গোস্বামী। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
আমি যখন গ্রাম থেকে শহরে প্রাকটিস করতে আসতাম পাড়া-প্রতিবেশীরা অনেকেই আমাকে নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন। তবু বলব আমি অনেক লাকি। টুকটাক কিছু প্রশ্নবাণ ছাড়া তেমন কোনও বড় বাধার মুখোমুখি হতে হয়নি। উল্টে ভীষণভাবে সমর্থন পেয়েছি পরিবারের থেকে। কোচের থেকে। যার জন্য লক্ষ্যে স্থির থেকে এগোতে পেরেছি। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা হয় না। যেমন সাক্ষীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। সমাজের অনেক বেশি প্রতিকূলতাকে জয় করতে হয়েছে তাঁকে। খোলামেলা পোশাকে পারফর্ম করার জন্য দীপাদেরও কম কিছু সহ্য করতে হয়নি।
তবে সমাজের মানসিকতা আগের থেকে অনেক বদলেছে। আশা রাখছি আরও বদলাবে। আশা রাখছি সাক্ষীদের আর রাতের অন্ধকারে প্র্যাকটিস করতে হবে না।