কল্পনা চাওলা, সুনিতা উইলিয়ামসের পর এ বার তৃতীয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা হিসেবে মহাকাশ পাড়ি দিতে চলেছেন শাওনা পাণ্ড্য। পেশায় কানাডার অ্যালবার্টা ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে নিউরোসার্জন শাওনা একজন মহাকাশচারীও। বর্তমানে দুটি স্পেস মিশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
কানাডার সিটিজেন সায়েন্স অ্যাস্ট্রোনট প্রোগ্রামে ৩,২০০ জনকে পিছনে ফেলে এই মিশনের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন ৩২ বছরের শাওনা। ২০১৮ সালে আরও ৮ জন মহাকাশচারীর সঙ্গে মহাকাশে পাড়ি দেবেন তিনি।
শাওনার পরিবার থাকে মুম্বইয়ের মহালক্ষ্মীতে। সুখবর জানার পর মুম্বই আসেন শাওনা। মেডিসিন তাঁর পেশা আর ভালবাসা হলেও, ছোটবেলা থেকেই মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্নটা শুধু লালনই করেননি, উদ্যোগও জারি রেখে গেছেন। একই সঙ্গে তিনি একজন অপেরা গায়িকা, লেখিকা এবং আন্তার্জাতিক স্তারের একজন তাইকোন্ডো চ্যাম্পিয়ন। শাওনা মু তাইতে সামুদ্রিক সিলের সঙ্গে ট্রেনিংও নিয়েছেন। কী ভাবে পারেন এত কিছু সামলাতে? মুম্বইতে বসেই এক ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে শাওনা বলেন, ‘‘যদি আপনি নিজের নেশা ও দায়িত্বকে গুরুত্ব দেন তাহলে দেখবেন কত কিছু কী সুন্দর ভাবে সম্ভব হয়ে উঠছে।’’
মেসোস্ফিয়ারের উচ্চস্তরে পোলার সাবঅরবিটাল সায়েন্স প্রকল্পে অংশ হিসেবে মহাকাশে যাচ্ছেন শাওনা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়েই গবেষণা করবে এই প্রকল্প। মূলত বায়ো-মেডিসিন ও মেডিক্যাল সায়েন্স নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে ফিজিওলজিক্যাল, হেলথ্ ও এনভায়রনমেন্টাল অবজার্ভেশন নিয়েও কাজ করবে তাঁর টিম। এ ছাড়াও ফ্লোরিডার অ্যাকোরিয়াস স্পেস রিসার্চ ফেসিলিটিতে ১০০ দিন আন্ডারওয়াটার মিশন প্রজেক্ট পজিডন-এরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি।
মহিলা হিসেবে তৃতীয় হলেও ভারতীয় বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী হিসেবে শাওনা চতুর্থ। ১৯৮৪ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন রাকেশ শর্মা। তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পেস প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তার পর কল্পনা চাওলা। মার্কিন মাহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হয়ে জীবনের দ্বিতীয় মহাকাশযাত্রা সেরে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। এর পর মহাকাশে যান আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়ে সুনীতা উইলিয়ামস। তিনিও নাসার হয়েই।
ভারতীয়দের মধ্যে কেমন সম্ভাবনা দেখছেন শাওনা? বহুমুখি এই প্রতিভার উত্তর, ‘‘মুম্বইতে এসে আমি লীলাবতী পোদ্দার হাইস্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ওদের প্রশ্ন আমাকে অবাক করে দিয়েছে। মেডিক্যালের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার সময় দেখেছি ওদের মধ্যে অনেকেই অনেক কিছু করতে চায়, কিন্তু কী ভাবে করবে তার কোনও দিশা পায় না। আমি ওদের বলবো বিজ্ঞান কী ভাবে প্রতি দিন এগোচ্ছে সেই বিষয় ওয়াকিবহাল থাকো, স্থিতিশীল চিন্তা ভাবনা করো আর বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখো।’’
আরও পড়ুন: ১৬ বছর ধরে ফ্রিজে রাখা ভ্রুণ থেকেই কোলে এল সন্তান