মাসের কয়েকটা দিন পিরিয়ডের কারণে নানা সমস্যায় ভুগতে হয় প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের। অনিয়মিত পিরিয়ড ছাড়াও তলপেটে ব্যথা, কোমর ও পেশীর নানা সমস্যা, ক্লান্তি, অবসাদ ঘিরে ধরে মেয়েদের। এই মেয়েলি সমস্যার নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ কাজ করে। তবে নিয়ম করে কিছু বিষয় মেনে চললে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। জেনে নিন ওষুধ ছাড়া আরামের উপায়।
অনিয়মিত পিরিয়ডকে শায়েস্তা করতে যোগার শরণ নিতে বলেন চিকিৎসকরা। ২০১৩-য় আমেরিকায় হওয়া এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০-৩৫ মিনিট যোগব্যায়াম করলে ৬ মাসের মধ্যেই হরমোনঘটিত কারণে ঘটা পিরিয়ডের সমস্যা অনেকটাই কমে। মানসিক অবসাদ কাটাতেও সাহায্য করে যোগা। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাই শুরু করতেই পারেন তা।
ওবেসিটি কিন্তু পিরিয়ডের জটিলতা ডেকে আনে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুবই জরুরি। অনেক সময় পলিসিস্টিক ওভারির কারণেও ওজন বেড়ে যায় ও পিরিয়ডের সমস্যা দেখা যায়। এমন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। পিরিয়ডের সমস্যা কমাতে ওজন বাড়তে পারে যে সব কারণে, তা থেকেও দূরে থাকুন।
অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। খাবার সংরক্ষিত করে রাখার জন্য ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভ সহজেই শরীরের ওজন বাড়ায়। তা থেকেও কিন্তু পিরিয়ডের সমস্যা বাড়ে। তাই শরীরচর্চা, দৌড়োদৌড়ি ছাড়াও খাবারের বিষয়েও সচেতন থাকুন।
আদার জিঞ্জেরল ও সোগাওল রক্তের প্রাবল্য কমায়। ফলে পিরিয়ডের যন্ত্রণার ভাগও কমে অনেকটাই। তাই পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও যন্ত্রণা প্রতিরোধে রান্নায় আদা যোগ করুন। আদা ভেজানো জলওডায়েটে রাখতে পারেন। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পিরিয়ডের সময় ৭৫০-২০০০ মিলিগ্রাম আদাগুঁড়ো পিরিয়ডের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয় সহজেই।
আদার মতোই দারচিনি গুঁড়োও এই অসুখ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। পলিসিস্টিক ওভারির জটিলতা কমাতে, পিরিয়ডের সময় গা বমি ভাব দূর করতে ও যন্ত্রণাদায়ক রক্তপাত রুখতে দারচিনি অত্যন্ত কার্যকর। অনিয়মিত পিরিয়ডকে নিয়মিত করতেও দারচিনি কাজে আসে।
প্রতি দিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করুন ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি। টুনা মাছ, মাংস, ডিমের কুসুম, চিজ-সহ নানা দুগ্ধজাত পদার্থ, কলা, বিন ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন ডি ও বি থাকে। পিরিয়ডের জট কাটাতে এ সব যোগ করুন ডায়েটে। গর্ভবতীর ডায়েটেও এই দুই ভিটামিনকেই প্রাধান্য দেন চিকিৎসকরা। মেয়েলি শারীরিক সমস্যা সারাতে এদের জুড়ি নেই।
অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারও পিরিয়ডের সমস্যা দূর করতে সক্ষম বলে দাবি মার্কিন দেশের বিজ্ঞানীদের। প্রতি দিন ১৫ মিলিলিটার অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার খেলে ওজন তো কমেই, সঙ্গে রক্তচাপ ও ইনসুলিনের পরিমাণও নিয়ন্ত্রিত হয়। পিরিয়ডের সময় শরীরের সব কলকব্জাকে প্রস্তুত রাখতে ও রক্তপাতের ধকল সামলাতে এই পানীয়ের জুড়ি নেই।
পিরিয়ডের যন্ত্রণা কমাতে পারে আনারসও। আনারসে থাকাব্রোমেলিন অ্যান্টিইনফ্লেমটরি। প্রাকৃতিক বেদনানাশক হিসাবেও এর সুনাম আছে। তাই গরমকালে পিরিয়ডের সমস্যা ও ব্যথা থেকে দূরে থাকতে আনারস খান নিয়ম করে। আজকাল সংরক্ষণের জাদুতে আনারসও সারা বছর মেলে। তবে আনারসের প্যাকেটজাত রস বা অসময়ের আনারস না খাওয়াই ভাল।