চিকিত্সকদের কোলে প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয়ে জন্ম নেওয়া সেই শিশু। ছবি রয়টার্সের সৌজন্যে।
মৃত মহিলার দেহ থেকে গর্ভাশয় নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল এক ব্রাজিলীয় মহিলার শরীরে। প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয়ে ভ্রূণকে লালন করে সেই মহিলা জন্ম দিলেন এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের। তিনিই হলেন বিশ্বের প্রথম যিনি মৃতার গর্ভাশয় নিজের শরীরে প্রতিস্থাপন করিয়ে, তা থেকে জন্ম দিলেন সন্তানের।
ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে এই প্রতিস্থাপনের বিস্তারিত খবর সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ সাও পাওলোর গবেষকদলের প্রধান দানি এজেনবার্গ জানিয়েছেন, ‘‘অঙ্গ দাতা মৃত ব্যক্তি হলে গোটা প্রক্রিয়ার ঝুঁকি অনেকটা কম হয়। পাশাপাশি গোটা প্রক্রিয়ার খরচ অনেকটা কমে যায়। কারণ, দাতা মৃত হওয়ায়, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা, তাঁর দীর্ঘ অপারেশন করার ঝক্কি থাকে না। জীবিত দাতার ক্ষেত্রে কাজটা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।”
চিকিত্সকদের তরফে জানানো হয়েছে, ৩৫ সপ্তাহ ৩ দিন গর্ভধারণের পর সিজারের মাধ্যমে ওই কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া হয়েছে। জন্মের সময় বাচ্চাটির ওজন ছিল ২ কিলোগ্রাম ৫৫০ গ্রাম।
আরও পড়ুন: সফল উড়ান, আকাশে ভারতের সব থেকে শক্তিশালী কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বিগ বার্ড’
কী ভাবে গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ ল্যানসেট জার্নালে লেখা হয়েছে। মস্তিষ্কের রক্তবাহ ফেটে মৃত্যু হয়েছিল ৪৫ বছর বয়সী এক মহিলার। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় সাড়ে দশ ঘণ্টার অপারেশনের মধ্যে দিয়ে ওই মহিলার দেহ থেকে গর্ভাশয় বের করা হয়েছিল। তাঁর গর্ভাশয়ের ওজন ছিল ২২৫ গ্রাম। দাতা ওই মহিলা ইতিপূর্বেই তিনটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। যে ব্রাজিলীয় মহিলার দেহে ওই গর্ভাশয়টি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল তাঁর বয়স ছিল ৩২ বছর। জন্ম থেকেই তাঁর দেহে গর্ভাশয় ছিল না। দেহের এই খামতিকে চিকিত্সার ভাষায় বলা হয় ‘মেয়ার রকিটান্সকি কাস্টার হাউজার সিনড্রোম’।
গর্ভাশয় প্রতিস্থাপনের প্রায় পাঁচ মাস পর গ্রহীতা মহিলার শরীরে অঙ্গ প্রত্যাখ্যান জনিত কোনও সমস্যা দেখা যায়নি। আলট্রা সাউন্ড স্ক্যানের রিপোর্টও ছিল স্বাভাবিক। এমনকি তাঁর নিয়মিত ঋতুস্রাবও হচ্ছিল। এই লক্ষণগুলি দেখে চিকিত্সকরা কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন।
তবে ওই ব্রাজিলীয় মহিলার গর্ভাশয় না থাকলেও ডিম্বাশয় ছিল। তাই তাঁর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু সংগ্রহ করে ‘আইভিএফ’ বা ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয়ে রোপন করা হয়েছিল ভ্রূণ। গর্ভাশয় প্রতিস্থাপনের সাত মাস দশ দিন পর এই ভ্রূণ রোপনের কাজটি হয়েছিল।
এর আগে মৃত মহিলার গর্ভাশয় প্রতিস্থাপন করে সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আমেরিকা, চেক প্রজাতন্ত্র ও তুরস্কের চিকিত্সক-গবেষকরা। কিন্তু তাঁরা সে কাজে সাফল্য পাননি। অবশেষে ব্রাজিলের সাও পাওলোর চিকিত্সকদের হাতে ধরা দিল সাফল্য।
আরও পড়ুন: গাঁজা চাষে প্রচুর চাকরি, ডাকছে কানাডা
এর আগে প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয় থেকে সন্তানের জন্ম হয়নি, তা নয়। কিন্তু সেই প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয়ের দাতারা ছিলেন জীবিত।জীবিত মহিলার গর্ভাশয় প্রতিস্থাপন করে প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছিল সুইডেনে, ২০১৩ সালে। তখন থেকে মোট ৩৯ বার এই পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের চিকিত্সক-বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সাফল্য পেয়েছেন মাত্র ১১ বার। সেদিক থেকে দেখলে, মৃত মহিলার গর্ভাশয় থেকে সন্তানের জন্ম দেওয়া আধুনিক চিকিত্সা বিদ্যার এক অভূতপূর্ব সাফল্য।