দ্রুত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণ। ছবি-শাটারস্টকের সৌজন্যে।
দুই-তৃতীয়াংশ বন্যপ্রাণই হারিয়ে গিয়েছে গত ৫০ বছরে। মানুষের নির্বিচার অত্যাচারে। সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে এ কথা জানিয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড’ বা ‘ডব্লিউডব্লিউএফ’।
রিপোর্ট জানিয়েছে, প্রকৃতি আর পরিবেশকে মানুষ ধ্বংস করেছে নির্বিচারে। পাঁচ দশক ধরে। বন কেটে বানিয়েছে বসত। এও জানিয়েছে, এখন যে হারে মানুষ প্রকৃতি আর পরিবেশকে ধ্বংস করছে তা অতীতের সব রেকর্ডই ভেঙে দিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার রাষ্ট্রপুঞ্জ এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট দেবে।
আর এই ধ্বংসের ঘটনা যে অনতিদূর ভবিষ্যতে কমে যাবে, এমন কোনও ইঙ্গিতও নেই আপাতত।
কী ভাবে ধ্বংস করছি আমরা বন্যপ্রাণকে?
ডব্লিউডব্লিউএফ-এর চিফ এগজিকিউটিভ তানিয়া স্টিলে বলেছেন, ‘‘আমরা যথেচ্ছ বন পোড়াচ্ছি, বন কেটে বসত বানাচ্ছি, নতুন নতুন শিল্পের জন্য গাছপালা কাটছি, সমুদ্র থেকে দেদার মাছ তুলছি। এই ভাবেই নির্বিচারে ধ্বংস করছি প্রকৃতি আর পরিবেশকে। বুঝতে পারছি না, এর ফলে আমাদেরই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। নিজেদের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুলছি।’’
বন ধ্বংস করছি নির্বিচারে। ছবি- শাটারস্টকের সৌজন্যে।
হারিয়ে গিয়েছে ৬৮ শতাংশ বন্যপ্রাণ
বন্যপ্রাণের কী অবস্থা হয়েছে ১৯৭০ থেকে ২০১৬, এই প্রায় পাঁচ দশকে তার খতিয়ান দিতে গিয়ে ডব্লিউডব্লিউএফ-এর রিপোর্ট জানিয়েছে, স্তন্যপায়ী, পাখি, উভচর, মাছ ও সরীসৃপের ২০ হাজার প্রজাতির ৬৮ শতাংশই হারিয়ে গিয়েছে। সেই বিলুপ্তি সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত। তার পর নয়ের দশক থেকে গতি কিছুটা কমলেও সেই ধারাই মোটামুটি বজায় রয়েছে।
ভেঙে পড়বে বাস্তুতন্ত্র
‘জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন (জেডএসএল)’-এর সংরক্ষণ বিভাগের অধিকর্তা অ্যান্ড্রু টেরি বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি না বদলালে এই প্রজাতিগুলি অদূর ভবিষ্যতে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তার ফলে সার্বিক ভাবে ভেঙে পড়বে বাস্তুতন্ত্র, বেঁচে থাকার জন্য যার উপর আমাদের নির্ভর করতেই হয়।’’ তিনি এও বলেছেন, বন্যপ্রাণীদের ধ্বংসের উপর মানুষের অস্তিত্ব কতটা নির্ভরশীল, সাম্প্রতিক অতিমারির ঘটনাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
রিপোর্ট এও জানিয়েছে, মানুষের অত্যাচারে ২০০০ সাল থেকে ১৯ লক্ষ মাইল ভূমি হারিয়ে গিয়েছে। যা গোটা ব্রিটেনের ৮ গুণ। ১০ লক্ষ বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। ১৩০ কোটি টন খাদ্য ফিবছর নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে এক লক্ষ কোটি ডলার মূল্যের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)’-এর সমীক্ষা জানাচ্ছে, প্রাণী ও উদ্ভিদের ১ লক্ষ প্রজাতির মধ্যে ৩২ হাজার প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে পৌঁছে গিয়েছে।