বৃহস্পতির সেই গ্রেট রেড স্পট, যার নীচে জলের ইঙ্গিত মিলেছে।
জলে ভাসছে এই সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিও। সেই জল রয়েছে তরল অবস্থাতেই রয়েছে ‘গুরু গ্রহ’-এ।
নাসার গর্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের জ্যোতির্পদার্থবিদ গর্ডন এল বোজ.রাকেরের গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকা ‘অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নাল’-এ।
কোথায় রয়েছে সেই জল?
বোজ.রাকের জানিয়েছেন, বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের যে অংশটি সব সময় উত্তাল হয়ে থাকে উদ্দাম ঝড়ে, খুব দূর থেকে দেখলেও যে অংশটির লাল রং (গ্রেট রেড স্পট) চোখে পড়ে আমাদের, পৃথিবী থেকে স্পেকট্রোস্কোপির একটি অভিনব প্রযুক্তিতে ‘গুরু গ্রহ’-এর বায়ুমণ্ডলের সেই অংশটির গভীরে জলের অস্তিত্বের জোরালো ইঙ্গিত মিলেছে। মিলেছে তরল জলের অস্তিত্বের রাসায়নিক স্বাক্ষর।
বৃহস্পতির সেই গ্রেট রেড স্পট: দেখুন ভিডিয়ো
আরও পড়ুন- জলে ভাসছে বৃহস্পতি-শনির চাঁদ, প্রাণ মিলতে পারে এনসেলাডাস-এ
আরও পড়ুন- ঝুঁকি নিয়ে বৃহস্পতির দরজায় কড়া নাড়ল জুনো
বৃহস্পতির ওই গ্রেট রেড স্পট নিয়ে কৌতূহল ছিল সেই গ্যালিলিও গ্যালিলির আমল থেকেই। ওই ‘লাল দাগ’-এর নীচে কী রয়েছে, বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, তা জানা কিছুটা অসম্ভবই। কারণ, বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের ওই জায়গায় মেঘ (জোভিয়ান ক্লাউড) এতটাই ঘন ও পুরু যে তার গভীরে কী রয়েছে, টেলিস্কোপ দিয়ে তা জানা ও বোঝা খুবই কষ্টসাধ্য।
রয়েছে প্রচুর অক্সিজেনও
জ্যোতির্পদার্থবিদ বোজ.রাকেরের দাবি, সেই ‘অসম্ভব’ই সম্ভব হয়েছে তাঁদের অভিনব স্পেকট্রোস্কোপি প্রযুক্তিতে। তাঁরা যে রাসায়নিক মৌল ও যৌগের স্বাক্ষর পেয়েছেন বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের গ্রেট রেড স্পটে, তা জানাচ্ছে, জলের সঙ্গে সেখানে রয়েছে অক্সিজেনঘটিত কার্বনের যৌগ কার্বন মনোক্সাইডও। তাঁরা হিসেব কষে দেখেছেন, সূর্যে যে পরিমাণ অক্সিজেন রয়েছে, ‘গুরু গ্রহ’-এ তা রয়েছে ২ থেকে ৯ গুণ বেশি।
জলে ভাসছে বৃহস্পতির দুই চাঁদ
আগেই ইঙ্গিত মিলেছিল, জলে টইটম্বুর বৃহস্পতির দু’টি চাঁদ ‘ইউরোপা’, ‘গ্যানিমিদ’। কিন্তু বৃহস্পতির অন্দরে জল লুকিয়ে রয়েছে কি না, থাকলে তার পরিমাণ কতটা, সে সম্পর্কে এত দিন কোনও ধারণাই ছিল না বিজ্ঞানীদের। বৃহস্পতিকে চেনা, জানার জন্য হালে পাঠানো হয়েছে নাসার মহাকাশযান ‘জুনো’। ৫৩ দিন অন্তর সেই ‘জুনো’ বৃহস্পতির উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু প্রদক্ষিণ করছে। নাসার ওই মহাকাশযানে রয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার। সেই স্পেকট্রোমিটারেও যদি একই ইঙ্গিত মেলে, তা হলে বৃহস্পতির অন্দরে জলের অস্তিত্বের ব্যাপারে আরও বেশি নিশ্চিত হতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
ছবি ও ভিডিও সৌজন্যে: নাসা