এ ভাবেই বিক্রি হচ্ছে বরফ গলা জল। ছবি: এএফপি।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বরফ গলা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদেরা। কিন্তু তারই মাঝে বরফ গলা জলকে কেন্দ্র করে কানাডার পূর্ব উপকূলে গড়ে উঠেছে ব্যবসা। এমনই এক বরফ সংগ্রাহক কানাডার এডওয়ার্ড কিন। হিমশৈলের খোঁজে প্রতিদিন তিনি পাড়ি জমান উত্তর আটলান্টিকে। গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ গলা বরফের টুকরো সংগ্রহই তাঁর উদ্দেশ্য।
প্রতিদিন সকালে তিন সহযোগীকে নিয়ে নৌকায় চেপে ‘সাদা সোনা’ অর্থাৎ হিমশৈলের খোঁজে পাড়ি দেন ক্যাপ্টেন কিন। উপগ্রহ মানচিত্র ব্যবহার করে ২৪ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয় সেন্ট জনসের বাসিন্দা কিনকে।
চিরাচরিত অভ্যাসবশত প্রথমেই দূরবীন চোখ রেখে খুঁজতে থাকেন সবুজ জল। নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল বরাবর কয়েক মিটার লম্বা হিমশৈল খুঁজে পেলেই অর্ধেক কাজ হাসিল। গত ২০ বছর ধরে এ ভাবেই বরফ সংগ্রহ করে স্থানীয় কোম্পানিতে বিক্রি করেন বরফ গলা জল। কখনও সেই জল মিশিয়ে তৈরি করা হয় মদ, আবার কখনও তৈরি করা হয় প্রসাধন সামগ্রী।
পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন, বাকি বিশ্বের তুলনায় উত্তর মেরুতে তিন গুণ দ্রুত হারে বরফ গলছে। উত্তর মেরু সংলগ্ন অঞ্চলের এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েই ফুলেফেঁপে উঠেছে কিনের ব্যবসা। কিন্তু কাজটা বেশ কঠিন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিনের মধ্যেই ফিরতে হয় কিনদের। বোনাভিস্তা উপসাগর ধরেই চলতে থাকে বরফের সন্ধান। কখনও কখনও বরফ ভাঙতে ব্যবহার করেন রাইফেলও। একের পর এক গুলিতে বরফ আলগা করার প্রয়াস চলতে থাকে। তবে রোজই যে এই পদ্ধতি কার্যকর হয়, তা নয়।
এই বরফ গলা জলের বাজারদর বোতল পিছু ১২ ডলার। পশ্চিম এশিয়ার ধনী ব্যক্তিদের কাছেই সরবরাহ করা হয় এই জল। এমনই এক জল বিক্রয়কারী সংস্থার কর্মী এলিজ়াবেথ গ্লিসন জানিয়েছেন, হিমশৈলের গলা জল পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ জল। সে কারণেই এর চাহিদা। তা ছাড়া ওক আইল্যান্ডে বেরি ও বরফ গলা জল থেকে তৈরি করা হয় মদও। যে মদ বোতল পিছু ১০ থেকে ৯০ কানাডীয় ডলারে বিক্রি করা হয়।
বরফ গলা জলের এই বিপুল ব্যবসায়িক সাফল্য সত্ত্বেও সংগ্রহকারীর সংখ্যা খুবই কম। সংগ্রহও করা হয় চিরাচরিত পদ্ধতিতে। কিনও মেনে নিয়ে জানান, পুরনো পদ্ধতিতে এই কাজটা করা হয় বলে নতুন প্রজন্মেরও তেমন উৎসাহ নেই এই কাজে।