-প্রতীকী ছবি।
ফাইজার, মডার্না বা জনসন অ্যান্ড জনসনের বানানো কোভিডের এমআরএনও টিকাই রুখে দিতে পারবে করোনাভাইরাসের নতুন পরাক্রমশালী রূপ ওমিক্রনকে। তবে তার জন্য ওই টিকাগুলি তৈরি করার পদ্ধতিতে কিছু রদবদল ঘটাতে হবে। যা করতে খুব বেশি হলে ৫২ দিন সময় লাগার কথা। তার পর গবেষণাগার থেকে বার করে সেই টিকা বানিয়ে তার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সেরে ফেলতে সব মিলিয়ে লাগবে বড়জোর ১০০ দিন সময়। কোভিডের এমআরএনএ টিকাগুলি যে অভিনব উপায়ে বানানো হয়েছে সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা এমনটাই জানিয়েছেন।
ফলে, ডেল্টার চেয়েও অনেক দ্রুত গতিতে সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা রাখলেও ওমিক্রনকে যে বাজারে চালু এমআরএনএ টিকাগুলির কিছু রদবদল ঘটিয়েই শায়েস্তা করা সম্ভব হবে, এই প্রথম সেই আশ্বাস মিলল বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে।
অতিমারি শুরুর পর ভাইরাসের এমআরএনএ ব্যবহার করে টিকা বানানোর যে গবেষণায় নামে ফাইজার, মডার্না বা জনসন অ্যান্ড জনসনের মতো সংস্থাগুলি, তার পরামর্শদাতা বিশেষজ্ঞরাই এই আশ্বাস দিয়েছেন।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক ডেবোরা ফুলার বলেছেন, ‘‘ওমিক্রন নিয়ে খুব বেশি ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। এমন নয় যে ওমিক্রনকে রোখার কোনও অস্ত্রই নেই আমাদের হাতে। যে সমস্যাটা ছিল দু’বছর আগে অতিমারি শুরুর পর থেকে টানা অন্তত মাস আটেক, সেটা এখন আর নেই। এমআরএনএ টিকাগুলিই পারবে ওমিক্রনকে রুখতে। শুধু সেগুলি তৈরি করার পদ্ধতিতে কিছু রদবদল ঘটাতে হবে। আর তার জন্য যে খুব বেশি সময় লাগবে তা-ও নয়।’’
সেই রদবদলগুলি কী কী আর তাদের প্রত্যেকটির জন্য কতটা করে সময় লাগতে পারে তা-ও স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দিতে পেরেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফুলার জানিয়েছেন, প্রথমে ভাইরাসের ডিএনএ টেমপ্লেট বানাতে হবে। তার সঙ্গে মেশাতে হবে কৃত্রিম কয়েকটি উৎসেচক। মেশাতে হবে ভাইরাসের এমআরএনএ-র মূল চারটি উপাদান ‘জি’, ‘এ’, ‘ইউ’ এবং ‘সি’-কে। এর ফলে, উৎসেচকগুলিই ডিএনএ টেমপ্লেটগুলির এমআরএনএ ‘কপি’ (অনুরূপ) তৈরি করবে। এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ট্রান্সক্রিপশন’।
ফুলারের বক্তব্য, ওমিক্রন রোখার জন্য নতুন এমআরএনএ টিকা বানাতে গবেষণাগারে ভাইরাসের ডিএনএ টেমপ্লেট তৈরি করতে সময় লাগবে বড়জোর তিন দিন। তার পর গবেষণাগারে সেই টিকাকে পরীক্ষা করার জন্য তা পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি করতে লাগবে প্রায় এক সপ্তাহ। তার পর টেস্টটিউবে রাখা মানবকোষে সেই টিকা প্রয়োগ করে প্রি-ক্লিনিক্যাল টেস্টের জন্য সময় লাগবে মেরেকেটে দেড় মাস। এর অর্থ, নতুন এমআরএনএ টিকা নিয়ে গবেষণা থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক ভাবে তা বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে সময় লাগবে ৫২ দিন। তার পর পুরোদস্তুর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে লাগবে আর মাত্র ৪৮ দিন। সব মিলিয়ে ১০০ দিন সময় লাগবে নতুন টিকা নিয়ে গবেষণা শুরু করে টিকা বাজারে আনার প্রক্রিয়ায় পৌঁছতে।
বিশেষজ্ঞরা এও জানিয়েছেন, এই সময়ও কমিয়ে আনা সম্ভব। যদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্বটি বাদ দেওয়া যায়। আর তা বাদ দিলেও কিছু যায় আসবে না। কারণ, এমআরএনএ টিকা তৈরির উপাদানে কোনও রদবদল ঘটানো হচ্ছে না। যেটুকু পরিবর্তন হবে সেটা শুধু পদ্ধতিতেই।
ফুলারের কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে পুরোদস্তর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ থাকতে পারে না। কারণ, এমআরএনএ টিকা তৈরির উপাদানে কোনও রদবদল ঘটানো হচ্ছে না। যেটুকু পরিবর্তন হবে সেটা শুধু পদ্ধতিতেই। তবে নতুন এমআরএনএ টিকার অনুমোদন দেওয়ার জন্য আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) যদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আবশ্যক বলে মনে করে তা হলে সেই ট্রায়ালের জন্য বাড়তি ৪৮ দিন সময় দিতে হবে। না চাইলে সেই সময়টুকুও খরচ না করলেও চলবে।’’