আদিমতম রেডিওতরঙ্গের উৎস। -প্রতীকী ছবি।
তখনও আলোই ফোটেনি ব্রহ্মাণ্ডে। চার দিক ঢাকা পড়ে রয়েছে অতলান্ত অন্ধকারে। আর অত্যন্ত ঘন ও পুরু হাইড্রোজেন গ্যাসের চাদরে। সেই আদিমতম ব্রহ্মাণ্ডের একটি মহাজাগতিক বস্তুর হদিশ মিলল।
এই বস্তু ‘থুতু’র মতো মহাকাশে ছেটাচ্ছে রাশি রাশি কণা। সেই কণাগুলি বেরিয়ে আসছে প্রায় আলোর গতিবেগে। জন্ম দিচ্ছে শক্তিশালী রেডিয়ো তরঙ্গের।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই মহাজাগতিক বস্তুর নাম ‘কোয়েজার’। নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (‘এসা’) জানিয়েছে এর বয়স প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর (ব্রহ্মাণ্ডের বয়স ১ হাজার ৩৭০ কোটি বছর)। ব্রহ্মাণ্ডে এত প্রাচীন আর এত দূরের কোনও রেডিয়ো তরঙ্গের উৎসের হদিশ মেলেনি এর আগে।
নাসার সূত্র জানিয়েছে, এই মহাজাগতিক বস্তুটির নাম- ‘পি-১৭২+১৮’। যার জন্ম হয়েছিল বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের ৭০ থেকে ৮০ কোটি বছর পরেই। তখন আলোই ফোটেনি ব্রহ্মাণ্ডে। বিস্ফোরণের পর জমাট বাঁধা অত্যন্ত পুরু গ্যাসের আস্তরণ ভেদ করে তখনও বাইরে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বার করতে পারেনি আলোর কণা ফোটন। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আদিমতম ব্রহ্মাণ্ডের ওই সময়টিকে বলেন- ‘ডার্ক এজেস’। গ্যালাক্সি বা তারা তৈরি হওয়া তো তখন স্বপ্নই।
এই কোয়েজার তৈরি হয় সাধারণত কোনও গ্যালাক্সির কেন্দ্রে। আদতে যা দানবাকৃতি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। যার জোরালো অভিকর্ষ বলের টান এড়িয়ে বেরিয়ে আসতে পারে না এমনকি আলোও। ব্ল্যাক হোলের গোগ্রাসে খাওয়ার সময় যে সব জমাট বাঁধা গ্যাসের মেঘ বা কণা চার পাশে ছিটকে ছড়িয়ে পড়ে, তারাই তৈরি করে এই রেডিয়ো তরঙ্গের।
চিলেতে ইউরোপিয়ান সাদার্ন অবজারভেটরি ও বানাদসে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমির বিজ্ঞানীরা এই মহাজাগতিক বস্তুটির হদিশ পেয়েছেন। মাগেলান টেলিস্কোপের মাধ্যমে।
পরে হাউইয়ের কেক অবজারভেটরি ও চিলের ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ জানিয়েছে, এই আদিমতম এই কোয়জারটি আমাদের সূর্যের ভরের চেয়ে ৩০ কোটি গুণ ভারী।