নাকের ভিতরে গজানো দাঁত (বাঁ দিকে), (ডান দিকে) এক্স রে পরীক্ষায় ধরা পড়ল দাঁত (তির চিহ্নিত)। ছবি - ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’।
নাকেও দাঁত গজায়! ধরা পড়ল এই প্রথম।
এই বিরলতম ঘটনায় ৩৮ বছর বয়সি এক পুরুষের ডান নাসারন্ধ্রের ভিতরে ঝকঝকে সাদা একটি দাঁত গজিয়েছিল। রোগী বুঝতে পারেননি। শ্বাস নিতে তাঁর প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল। চিকিৎসকদের কাছে গেলে তাঁরা দেখেন রোগীর নাকের ভিতরে একটি দাঁত গজিয়েছে।
চিকিৎসা-বিজ্ঞানে বিরল এই ঘটনা এবং তাঁর চিকিৎসা নিয়ে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা গবেষণা পত্রিকা ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ। গবেষকদের অন্যতম ভারতীয় চিকিৎসক সাগর খন্না।
মানবশরীরের যেখানে যে অঙ্গের গজানো উচিত তা না হয়ে যদি সেই অঙ্গ কোথাও গজায় তা হলে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘এক্টোপিক অরগ্যান’ বা এক্টোপিক অঙ্গ।
মূলত দাঁতের ক্ষেত্রেই এই ঘটনা বেশি ঘটে। তবে দাঁত এক্টোপিক হলে (‘এক্টোপিক টুথ’) তা সাধারণত উপরের চোয়াল থেকে বেরিয়ে নীচের দিকে নেমে অন্য পথ ধরে এগোয়। তার ফলে উপরের মাড়ির দু’টি দাঁতের মধ্যে অবাঞ্ছিত ফাঁক তৈরি হয়। একটি দাঁত আর একটি দাঁতের ঘাড়ে চেপে বসে অনেক সময়। তবে সেই ঘটনাও খুব বিরল। মোট জনসংখ্যার ০.১ শতাংশ।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই রোগীর ক্ষেত্রে আরও বিরল ঘটনা ঘটেছিল। উপরের চোয়াল থেকে বেরিয়ে ঝকঝকে সাদা একটি দাঁত উপরের দিকে উঠে গিয়েছিল। ঢুকে পড়েছিল নাকের ভিতরের গর্তের ভিতরে। সেটাই ভিতর থেকে ফুঁড়ে উঠে রোগীর ডান নাসারন্ধ্রের ভিতরে গজিয়েছিল। যাকে বিরল ঘটনাই বলা যায়। আর তার জন্য রোগীর শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।
রোগীর এক্স-রে করে গবেষক চিকিৎসকরা দেখেন বিরল এক্টোপিক দাঁতটি উপরের চোয়াল থেকে বেরিয়ে উপরের দিকে উঠে নাসারন্ধ্রের ভিতরে ঢুকে পড়েছে।
চিকিৎসকরা পরে অস্ত্রোপচার করে দাঁতটি তুলে ফেলেন। কয়েক সপ্তাহ পরে সেই জায়গায় আর অন্য দাঁত গজাতেও দেখা যায়নি। রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যাও পুরোপুরি মিটে গিয়েছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই দাঁতটি অস্ত্রোপচার করে তুলে না ফেলা হলে তা ওই এলাকার আশপাশের কোষ, কলাগুলির ক্ষতি করত। তার ফলে আগামী দিনে আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারতেন ওই রোগী। এই সমস্যা দাঁতের বদলে যদি মানবশরীরে অন্য কোনও এক্টোপিক অঙ্গের ক্ষেত্রে ঘটে তা হলে তা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি এই সব এক্টোপিক অঙ্গ অস্ত্রোপচার করে দেহে থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল।