ব্যাক্টেরিয়া মারা হল গবেষণাগারে বানানো একটি ভাইরাস দিয়ে। সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিককে নিয়ে। -ফাইল ছবি।
শুধু অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে কাবু করা গেল না ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়াকে। তিন বছর ধরে চিকিৎসা চালিয়েও। শেষমেশ ব্যাক্টেরিয়া মারা হল গবেষণাগারে বানানো একটি ভাইরাস দিয়ে। সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিককে নিয়ে।
অভিনব এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে এক মহিলার তিন বছরের ক্ষত থেকে পুঁজ বেরিয়ে আসা বন্ধ করা গিয়েছে, ক্ষত সারিয়ে ফের ত্বক বাদামি থেকে গোলাপি রঙে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বিশেষ ভাবে বানানো একটি ভাইরাস দিয়ে। করোনাভাইরাসের চালানো ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে গোটা বিশ্ব যখন দুশ্চিন্তার প্রহর গুনছে, তখন অভিনব এই চিকিৎসা পদ্ধতি শোরগোল ফেলে দিয়েছে চিকিৎসক মহলে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার কমিউনিকেশন্স’-এ। গত ১৮ জানুয়ারি।
গবেষকরা যে ধরনের ভাইরাস নিয়ে এই কাজটি করেছেন তাদের বলা হয় ‘ব্যাক্টেরিয়োফাজেস’ বা ‘ফাজেস’। মূল গবেষক ব্রাসেলসের সিইউবি-ইরাসমে হসপিটালের ইন্টারনাল মেডিসিন এবং ইনফেকশাস ডিজিজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অ্যানেইস এস্কেনাজি বলেছেন, ‘‘অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে এই ব্যাক্টেরিয়োফাজ মহিলার শরীরে ঢুকিয়ে দেখা গিয়েছে যে ক্ষত তিন বছর ধরে সারানো যাচ্ছিল না তা তিন সপ্তাহের মধ্যেই শুকিয়ে গিয়েছে। তার থেকে আর পুঁজ বেরচ্ছে না। বাদামি ত্বকও গোলাপি হয়ে উঠেছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতির আরও সাফল্য তিন বছর পরেও মহিলাকে আর ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের ধাক্কা সইতে হয়নি।’’
এই গবেষণায় যিনি জড়িত নন, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পল টার্নার বলেছেন, ‘‘এই গবেষণা দেখাল ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে যেখানে একা অ্যান্টিবায়োটিক লড়াই চালাতে পারে না তখন অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে ব্যাক্টেরিয়োফাজকে নিয়ে চিকিৎসা করা গেলে তা ফলপ্রসূ হয়।’’
এমন চিকিৎসাপদ্ধতির কথা পেনিসিলিন আবিষ্কারের সময়ই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পেনিসিলিন নিয়ে আগ্রহের আতিশয্যে এই ধরনের গবেষণা ধামাচাপা পড়ে যায়। এক দশক আগে রাশিয়ায় ফের শুরু হয় এই গবেষণা। তবে কিছু সমস্যাও দেখা দেয়। দেখা যায়, ব্যাক্টেরিয়া যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের অতি প্রয়োগে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে ওঠে, তেমনই তারা হয়ে উঠতে পারে ব্যাক্টেরিয়োফাজ-প্রতিরোধীও। তাদের জিনে কিছু রদবদল ঘটিয়ে।
তবে এই গবেষণা দেখাল, জিনের রদবদল ঘটানোর ব্যাপারে ব্যাক্টেরিয়ার থেকে অনেক বেশি দক্ষ ভাইরাস। তাই কোনও কোনও ব্যাক্টেরিয়া যদি কখনও ব্যাক্টেরিয়োফাজ-প্রতিরোধী হয়েও ওঠে সেটা খুবই সাময়িক। নিজের জিনে বদল ঘটিয়ে ব্যাক্টেরিয়োফাজের মতো ভাইরাস কিছু দিনের মধ্যেই ফের ব্যাক্টেরিয়া-বিধ্বংসী হয়ে ওঠে।
এ ক্ষেত্রে গবেষকরা দেখেছেন, বিশেষ ধরনের একটি ব্যাক্টেরিয়ার জন্য ওই মহিলার ক্ষত শুকোচ্ছিল না। এমনকি অ্যান্টিবায়াটিক তিন বছর ধরে দিয়েও তাঁর ক্ষত থেকে পুঁজ বেরনো বন্ধ করা যাচ্ছিল না ওই ব্যাক্টেরিয়া তার ক্ষতের কোষগুলিতে একটি প্রাচীর গড়ে তুলেছিল বলে। যে প্রাচীরে ছিদ্র করা অ্যান্টিবায়োটিকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তিন বছর অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও ওই মহিলার ক্ষত শুকোনো যায়নি। বন্ধ করা যায়নি পুঁজ বেরনো। ব্যাক্টেরিয়োফাজ সেই প্রাচীর ছিদ্র করতে পারে। তার ফলে, সেই ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক পৌঁছতে পারে নির্দিষ্ট জায়গায়। যার জন্য মহিলার দীর্ঘ দিনের ক্ষত শুকিয়ে গিয়েছে অভিনব এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে।