অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা সকলেই কৌতূহলী। কেমন হবে ভবিষ্যতের পৃথিবী? আজ যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, ১০০ বছর এগিয়ে বা পিছিয়ে গেলে দেখতে কেমন হবে? ১০০ বছর পর কেমন থাকবে আমার পরিবার? এমন নানা প্রশ্ন প্রায় প্রত্যেকের মনেই রয়েছে। আর এই জল্পনা-কল্পনা থেকেই বারবার উঠে এসেছে টাইম ট্রাভেলের কথা।
এই নিয়ে প্রচুর ফিল্ম হয়েছে। রয়েছে প্রচুর প্রশ্ন এবং জল্পনা। কিন্তু টাইম ট্রাভেল কি বাস্তবেও সম্ভব? বিজ্ঞানীরা এখনও তেমন ভাবে আশার বাণী না শোনালেও, নানা সময়ে নানা লোক টাইম ট্রাভেলের ‘গল্প’ শুনিয়েছেন আমাদের। তাঁদেরই একজন আলেকজান্ডার স্মিথ। যিনি নিজেকে মার্কিন গোয়ন্দা সংস্থার সিআইএ-র টাইম ট্রাভেলের গোপন মিশনের অংশ বলে দাবি করেছেন।
বছর খানেক আগে একটা ইউটিউব ভিডিয়ো আপলোড করে সিআইএ-র গোপন মিশন এবং টাইম ট্রাভেল নিয়ে নানা ‘তথ্য’ সামনে এসেছিলেন তিনি। স্মিথের দাবি, অনেক ভেবে সিআইএ-র গোয়েন্দারা স্থির করেন ছোট বাচ্চাকেই এই মিশনের অংশ করা হবে।
যুক্তি ছিল, ছোটরা খুব তাড়াতাড়ি শিখে নেয়। টাইম ট্রাভেলের ধকল নাকি খুব সহজেই তাদের শরীর মানিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করেছিল সিআইএ। তাদের কোষ বিভাজন অনেক বেশি হয়, এবং প্রতিটা কোষই খুব সক্রিয়। তাই ব্রেনে কোনও ক্ষতির আশঙ্কা কম। প্রচুর বাচ্চার ইন্টারভিউ নিয়েছিল সিআইএ। এর পরেই নাকি স্মিথকে বেছে নেয় সিআইএ।
নিজের নামটুকু ছাড়া স্মিথ অবশ্য নিজের সম্বন্ধে আর কিছুই প্রকাশ্যে আনেননি। তিনি শুধু টাইম ট্রাভেল সম্বন্ধেই জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ১৯৮১ সালে তিনি নাকি টাইম ট্রাভেল করেছিলেন। আর পৌঁছে গিয়েছিলেন ২১১৮ সালে। অর্থাৎ ১৩৭ বছর এগিয়ে।
তাঁর দাবি, এটাই নাকি বিশ্বের প্রথম টাইম ট্রাভেলের ঘটনা। তিনি যা বলছেন, তার সত্যতা প্রমাণ করতে ‘ভবিষ্যতের ছবি’ও তিনি ইউটিউবে দেখিয়েছিলেন। কেমন ছিল সেই ছবি?
সেটা আসলে একটি শহরের ছবি। ছবিটা বেশ ঝাপসা। দেখে মনে হচ্ছে, অদ্ভুত আকারের লম্বা লম্বা কতগুলো বাড়ি দাঁড়িয়ে। স্মিথের দাবি ছিল, ওগুলোই ভবিষ্যতের বাড়ি। আঁকাবাঁকা আকারের, সবুজ রঙের। তাঁর দাবি, এই বাড়িগুলো বর্তমানের থেকে অনেক উন্নত প্রযুক্তির।
কিন্তু ছবিটা ঝাপসা কেন? তা নাকি টাইম ট্রাভেলের ফল। সে জন্যই ছবিটা পরিষ্কার ওঠেনি। স্মিথ যে ছবিটা দেখিয়েছিলেন, সেটা তাঁর তোলা ওই শহরের আসল ছবি নয়, নিজেই জানিয়েছিলেন এটা।
১৯৮১ সালে টাইম ট্রাভেল করে ফিরে আসার পরই সিআইএ-র গোয়েন্দারা তাঁর কাছ থেকে আসল ছবিটা নিয়ে নেন। তার আগেই অবশ্য তার একটা কপি করে রেখেছিলেন স্মিথ। সেটাই ভিডিয়োয় দেখিয়েছেন।
টাইম ট্রাভেল নিয়ে বহু জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। টাইম ট্রাভেলের চেষ্টাও হয়তো চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু স্মিথের কথা যদি সত্যি হয়, তা হলে এতদিন এই খবরটা কেন চেপে রেখেছিলেন তিনি?
‘আমি সঠিক সময়ের সন্ধানে ছিলাম। কারণ ১৯৮১ সালে যদি এ কথাটা আমি প্রকাশ্যে আনতাম, কেউই বিশ্বাস করতেন না। বলাটা ঠিক হবে কি না বুঝে উঠতেই পারছিলাম না এত দিন,’ ইউটিউবে ওই ভিডিয়োতে দাবি করেছেন স্মিথ।
গোপন মিশনের খবর বাইরে চলে যেতে পারে, এই সন্দেহে তাঁকে নাকি বহু দিন ধরেই খুঁজছে সিআইএ। তিনি লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও দাবি করেছিলেন স্মিথ। ওই ভিডিয়োটা যখন করেন, তখনও তিনি কোনও গোপন জায়গাতেই ছিলেন, দবি তাঁর। তবে সিআইএ এই পুরো বিষয়টাকেই অস্বীকার করেছে। টাইম ট্রাভেল এখনও কাল্পনিক, জানিয়েছিল তারা।
শুধু এই একটা ঘটনাই নয়, একাধিক ব্যক্তি টাইম ট্রাভেলের ‘সত্যতা’ আমাদের সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা যে সত্যিই ভবিষ্যৎ ঘুরে ফেলেছেন, তার প্রমাণ দেখানোর মরিয়া চেষ্টা করেছেন। স্মিথের পর যেমন সে তালিকায় রয়েছেন আর এক যুবক।
ওই যুবক আবার নিজের নাম জানাতে চাননি। তবে স্মিথের মতো ভবিষ্যতের এক শহরের ছবি তিনিও দেখিয়েছিলেন। সেই ছবিটাও স্পষ্ট ছিল না।
এই যুবকের দাবি, তিনি ৬০০০ সালের বিশ্ব দেখে ফেলেছেন। তখন কেমন হবে পৃথিবী? মানুষ তখন ভিনগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ফেলবে। এলিয়েনরা পৃথিবীতে এসে ঘাঁটি গাড়বে, দাবি করেছিলেন তিনি।
তাঁর আরও দাবি, টাইম ট্রাভেলের কাজ জোর কদমে চলছে বিজ্ঞানী মহলে। এখন হয়তো কেউ বিশ্বাস করতে পারেন না। কিন্তু টাইম ট্রাভেল যে সত্যিই সম্ভব, তা ২০২৮ সালে প্রকাশ করবেন বিজ্ঞানীরা। ওই যুবক এও দাবি করেছিলেন, ৬০০০ সালে প্রযুক্তি এতটাই উন্নতি হয়ে যাবে যে, তখন মানুষকেও চালনা করবে প্রযুক্তি।
টাইম ট্রাভেলকে সত্যি প্রমাণ করতে একাধিক ছবিও সামনে এসেছে বহুবার। যেগুলির মধ্যে অনেকে টাইম ট্রাভেলের প্রমাণ খুঁজেছেন। যেমন পাশের এই ছবিটা। ভাল করে দেখুন তো, ছবির মহিলা কি মোবাইলে কথা বলছেন?
১৯২৮ সালে চার্লি চ্যাপলিনের ফিল্ম ‘দ্য সার্কাস’। এই ফিল্মের একটি অপ্রকাশিত ছবি ঘিরে এক সময় বেশ তোলপাড় হয়েছিল। একটু আগেই যে ছবির কথা বলা হয়েছে, সেই ছবিটা এই ফিল্মেরই ছিল। ১৯২৮ সালে এরকম আধুনিক মোবাইলের ব্যবহার! তা হলে ওই মহিলা কী ব্যবহার করছিলেন? নাকি তিনি টাইম ট্রাভেল করছিলেন?