যখন ছাতি ফাটে তৃষ্ণায়। -ফাইল ছবি।
ক’দিন আগে কানাডায় যেমন ভীষণ তাপপ্রবাহ হয়ে গেল প্রায় এক সপ্তাহ ধরে, ভারতেও তেমনই হওয়ার আশঙ্কা। আরও ঘন ঘন। আরও বড় এলাকাজুড়ে। এবং আরও ভয়াবহ আকারে।
এ দেশে তাপপ্রবাহের নতুন নতুন এলাকা তৈরি হয়েছে। যেখানে আগামী দিনে ঘন ঘন তাপপ্রবাহের ঘটনা ঘটবে। তার মাত্রা হবে ব্যাপক। আর তা অনেক দিন স্থায়ীও হতে পারে। সেই তাপপ্রবাহে বিপদ বাড়বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের। বাড়বে মৃত্যুর সংখ্যাও। চাষবাসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। অবনতি ঘটবে নাগরিকদের স্বাস্থ্যের। প্রভূত ক্ষতি হবে বাস্তুতন্ত্রেরও। নতুন এলাকাগুলির নাম দেওয়া হয়েছে ‘হিটওয়েভ হটস্পট’।
এই অশনিসঙ্কেত সাম্প্রতিক একটি গবেষণার। যা দেশের গত সাত দশকের তাপপ্রবাহের তথ্য খতিয়ে দেখেছে।
তীব্র দহনজ্বালা। -প্রতীকী ছবি।
সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ হবে পশ্চিম মধ্যপ্রদেশে
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অর্থবরাদ্দে চালানো বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ)-এর গবেষণা জানিয়েছে, এ বার ঘন ঘন ভয়াবহ তাপপ্রবাহের কবলে পড়বে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-মধ্য প্রান্ত এবং মধ্যভাগের এলাকাগুলি। সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহের ঘটনা ঘটবে পশ্চিম মধ্যপ্রদেশে। তাপপ্রবাহের সময় ওই সব এলাকার তাপমাত্রা ৫০ থেকে ৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্টই।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ক্লাইমেটোলজি’-তে।
১৯৫১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ দেশের সর্বত্র মার্চ থেকে মে মাস (প্রি-মনসুন) ও জুন-জুলাইয়ে (আর্লি সামার) তাপপ্রবাহ ও ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মাত্রা কেমন থাকে, তার যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। দেখেছেন মাসিক রেকর্ড। মরসুমের রেকর্ড। এক দশক পর পর পরিস্থিতি কী হয়েছে সেই রেকর্ডও।
এ দেশে এত দিন ভয়াবহ তাপপ্রবাহের ঘটনা ঘটত মূলত গুজরাত, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ উত্তর ভারতের একটি বড় অংশে। এবং ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশেরও কিছু কিছু এলাকায়।
গবেষণা যদিও কিছুটা আশার কথা শুনিয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব প্রান্তের এলাকাগুলির জন্য। বলেছে, এই সব এলাকায় আগে যে মাত্রায় তাপপ্রবাহ হত, তা কিছুটা কমতে পারে। কারণ, তাপপ্রবাহের অভিমুখ সেখান থেকে দেশের মধ্যভাগ ও দক্ষিণ-মধ্যভাগে সরে যেতে শুরু করেছে। খুব দ্রুত হারে।
তাপপ্রবাহ বলা হয় তাপমাত্রার কোন অবস্থায়?
মৌসম ভবনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে গেলেই বলা হয় তাপপ্রবাহ। আর ভয়াবহ তাপপ্রবাহ বলা হয় তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে পৌঁছলে।
'হিট ডোম' বা তাপগম্বুজ।
কানাডার সাম্প্রতিক ঘটনার মতো তাপপ্রবাহ কেন হয়?
আবহবিদরা জানিয়েছেন, বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে উত্তর-পশ্চিম দিকে জমাট বেঁধে থাকা খুব উচ্চ চাপের বাতাস একটি গম্বুজ (ডোম) তৈরি করে। তাকে বলে তাপগম্বুজ ('হিট ডোম')। কানাডার ঘটনার মতো ভয়াবহ তাপপ্রবাহের কারণ এই তাপগম্বুজই।