প্রতীকী ছবি।
সার্স-কোভ-২-এর ক্রমাগত মিউটেশনই তার সংক্রমণ ক্ষমতাকে এতটা বিপজ্জনক করে তুলেছে বলে আশঙ্কা ছিল বিজ্ঞানী মহলে। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশ বলছেন, ওটা প্রাথমিক স্তরের গবেষণা ছিল। পরবর্তী গবেষণায় উঠে এসেছে, ভাইরাসটি মিউটেট করলেও তার যে ক’টি ‘ভ্যারিয়েন্ট’ রয়েছে, তাদের মূল চরিত্র একই। ফলে মিউটেশন নিয়ে এখন খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি ধারাবাহিক ভাবে মিউটেশন হতে থাকলে ভাইরাসটি নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে বিজ্ঞানী-গবেষকদের মধ্যে।
প্রতিষেধক ও সংক্রমণজনিত রোগের ওষুধ তৈরির গবেষণার ক্ষেত্রে যে বিজ্ঞানীর অন্যতম অবদান, সেই নোবেলজয়ী পিটার.সি ডোয়ার্টি এ বিষয়ে আনন্দবাজারকে বলছেন, ‘‘ক্রমাগত মিউটেশন হতে থাকলে সংশ্লিষ্ট ভাইরাসকে একটা বড় ‘ফিটনেস কস্ট’ দিতে হয়। যার অর্থ হল, মিউটেশনের ফলে অন্য ভ্যারিয়ান্টগুলি টিকে থাকার ক্ষেত্রে নির্বাচিত না-ও হতে পারে।’’ বিজ্ঞানীদের মতে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর যে কোনও ভাইরাসেই মিউটেশন হয়। ভারতে যে ক’টি স্টেন এখনও পাওয়া গিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের মূল চরিত্রে কিছু মিল রয়েছে। ২০০২-’০৩ সালের সার্স কোভ ভাইরাস মানবশরীরের প্রবেশের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করেছিল, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসও সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর এমেরিটাস বিজ্ঞানী তথা এমস-এর প্রাক্তন ডিন নরেন্দ্র কে মেহরা বলছেন, ‘‘সার্স-কোভ ও সার্স-কোভ-২, দু’টি ভাইরাসই মানবশরীরে প্রবেশের ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম-টু (এসটু) নামক রিসেপটর, যা মূলত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে টার্গেট করেছে। ফলে সেখানে কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের যে তিনটি ভ্যারিয়েন্ট এই মুহূর্তে দেশে পাওয়া গিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই বিশেষ জায়গাটিতে কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। তারা একই রয়েছে।’’
কিন্তু তা হলে কেন সার্স-কোভের থেকে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে এতটাই বিপজ্জনক?
নিউ ইয়র্কে কর্নেল ইউনির্ভাসিটির ‘মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি’ বিভাগের অধ্যাপক আভেরি অগস্ট আনন্দবাজারকে জানান, সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়টি ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট বা মিউটেশনের সঙ্গে জড়িত নয়। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক দেশে যেমন ইটালিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। আবার কোনও দেশ কী ভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে কত তাড়াতাড়ি লকডাউন করেছে বা মাস্ক, গ্লাভস পরা বা দূরত্ববিধি বজায় রাখার মতো নিয়ম বাধ্যতামূলক ভাবে পালন করেছে, এমন অনেক বিষয়ের উপরে সংক্রমণের হার নির্ভর করছে।’’ অনেক বিজ্ঞানী-গবেষক আবার ক্রমাগত মিউটেশনের তত্ত্বটি স্বীকারই করেনি। যেমন দেশের মধ্যে কোভিড-১৯-এর অন্যতম গবেষণাকেন্দ্র ‘ট্রানস্লেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-র ইমিউনোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অমিত অবস্থির কথায়, ‘‘ক্রমাগত মিউটেশনের তত্ত্বটি প্রথম থেকেই চলে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিকতম গবেষণা দেখাচ্ছে, করোনাভাইরাস ফ্যামিলির কোনও ভাইরাসেরই এত বার মিউটেশনের ক্ষমতা নেই, যা এইচআইভি ভাইরাসের রয়েছে। ফলে মিউটেশন নিয়ে এতটা হইচই করার প্রয়োজন নেই।’’