অণুজীবগুলি থেকে এমন ১২ হাজার উৎসেচকের হদিশ মিলেছে যারা প্লাস্টিককে অনায়াসেই ভেঙে দিতে পারে। -ফাইল ছবি।
গত ৫০ বছর ধরে বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক মাটি ও মহাসাগরগুলিতে জমা হওয়ার ফলে সেগুলি খেয়ে বাঁচতে শুরু করেছে বহু অণুজীব। তারা মূলত থাকে মহাসাগরের অনেকটা গভীরতায়। থাকে মাটিতেও।
শরীর নিসৃত উৎসেচক দিয়েই তারা মাটি ও মহাসাগরের গভীরে জমা প্লাস্টিক ভেঙে ফেলে। সেই প্লাস্টিককে খায়। তাকে সহজপাচ্যও করে তোলে। এই অণুজীবগুলি থেকে এমন নতুন অন্তত ১২ হাজার উৎসেচকের হদিশ মিলেছে যারা প্লাস্টিককে অনায়াসেই খুব সামান্য সময়ের মধ্যে ভেঙে দিতে পারে। এই উৎসেচকগুলির কথা বিজ্ঞানীদের এর আগে জানা ছিল না।
এর ফলে, এই অণুজীবদের শরীরে থাকা উৎসেচকগুলি দিয়ে বা গবেষণাগারে তাদের কৃত্রিম ভাবে তৈরি করে প্লাস্টিক বর্জ্যকে আগামী দিনে ভেঙে সভ্যতার কাজে লাগানোর পদার্থে বদলে দেওয়ার পদ্ধতিগুলি সহজতর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘মাইক্রোবায়াল ইকোলজি’-তে।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, সভ্যতার বিভিন্ন কাজে সাত দশক আগে পৃথিবীতে ফিবছর প্লাস্টিক উৎপাদন হত ২০ লক্ষ টন। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩৮ কোটি টন, ফিবছরে। উৎপাদিত প্লাস্টিকের পুরোটাই আমাদের রোজকার জীবনে কাজে লেগে যায়। কিন্তু কাজ মিটলে সেগুলি আমরা ফেলে দিই। তাতে বর্জ্যের পরিমাণ উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। যে বর্জ্যকে খুব সহজ কোনও পদ্ধতিতে ভাঙা যায় না। সেগুলি ভেঙে তাদের থেকে সভ্যতার কাজে লাগানোর মতো পদার্থ বার করে আনার চালু প্রক্রিয়াগুলি যেমন জটিল, তেমনই ব্যয়সাপেক্ষ। ফলে, সেগুলি কাজে লাগানো সম্ভব হয় না।
গবেষকরা সেই অণুজীবগুলির ডিএনএ পরীক্ষা করে অন্তত ২০ কোটি জিনের সন্ধান পেয়েছেন। আর সেগুলি তৈরি করে এমন অন্তত ৩০ হাজার উৎসেচকেরও হদিশ পেয়েছেন যারা অনায়াসেই ভেঙে ফেলতে পারে ১০ ধরনের প্লাস্টিক যৌগ। তার পর তাকে মানুষের কাজে লাগার মতো অনেক পদার্থে বদলে দিতে পারে অল্প আয়াসেই। এই উৎসেচকগুলির মধ্যে কম করে ১২ হাজার উৎসেচকের কথা আগে জানাই ছিল না বিজ্ঞানীদের। এই উৎসেচকগুলি পাওয়া গিয়েছে সবক’টি মহাসাগরের ৬৭টি অঞ্চলে থাকা অণুজীবদের দেহে। মহাসাগরের তিন ধরনের গভীরতায়।
একই ভাবে ৩৮টি দেশের ১৬৯টি অঞ্চল থেকে এমন প্রায় ১৮ হাজার নতুন উৎসেচকের হদিশ পেয়েছেন গবেষকরা। এই উৎসেচকগুলিও অনায়াসে প্লাস্টিক ভেঙে ফেলতে পারে। তাকে খুব সহজেই বদলে দিতে পারে মানুষের কাজে লাগার মতো অসংখ্য পদার্থে।