‘লুকোনো সংখ্যাদের’ স্বীকৃতি দিল নাসা

তাঁরা জানতেন, একটা ভুল সংখ্যা মানে বিপুল বিপর্যয়। তাই কার্যত দিন-রাত এক করে বছরের পর বছর অজস্র জটিল অঙ্ক কষে গবেষণা থেকে শুরু করে আস্ত এক একটা মহাকাশ অভিযানকে সাফল্যের পথ দেখিয়েছিলেন এই তিন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০২:২৯
Share:

পথিকৃৎ: ডরোথি ভন, ক্যাথরিন জনসন এবং মেরি জ্যাকসন।

‘পাঁচের দশকের গোড়া। আমেরিকার মতো উন্নত দেশে বিভিন্ন জটিল গবেষণায় কম্পিউটার ব্যবহার শুরু হয়েছে, কিন্তু সেই যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্যের বদলে মানুষের হাতের গণনাকেই অনেক বেশি ভরসা করা হত তখন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। মহাকাশ অভিযানের নানা জটিল গবেষণা ও গণনার কাজ তখন কাগজে-কলমেই করতেন নাসার বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞেরা। যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ক্যাথরিন জনসন, ডরোথি ভন এবং মেরি জ্যাকসন।

Advertisement

তাঁরা জানতেন, একটা ভুল সংখ্যা মানে বিপুল বিপর্যয়। তাই কার্যত দিন-রাত এক করে বছরের পর বছর অজস্র জটিল অঙ্ক কষে গবেষণা থেকে শুরু করে আস্ত এক একটা মহাকাশ অভিযানকে সাফল্যের পথ দেখিয়েছিলেন এই তিন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা।

অথচ বছর তিনেক আগে পর্যন্ত এই তিন জন ছিলেন লোকচক্ষুর একদম আড়ালে। ২০১৬ সালে এই তিন জনের জীবনের উপরে তৈরি হয় হলিউডের ছবি ‘হিড্‌ন ফিগারস’। তার পরেই গোটা দুনিয়ার সামনে আসে এই তিন ‘মানব কম্পিউটার’-এর কৃতিত্ব। এ বার সেই তিন কৃষ্ণাঙ্গকে সম্মান জানাল নাসা। গত কাল ওয়াশিংটনে তাদের সদর দফতরের সামনের একটি রাস্তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘হিড্‌ন ফিগারস ওয়ে’। টুইটারে সে কথা ফলাও করে ঘোষণাও করেছে এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। সংস্থার মুখ্য প্রশাসক জিম ব্রাইডেনস্টাইন কাল ওই অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘অ্যাপোলো-১১ চাঁদে অবতরণের ৫০ বছর পরে আমরা সেই তিন জনের কথা স্মরণ করছি, যাঁদের নিয়ে আগে কখনও হইচই হয়নি। অথচ তাঁদের যাবতীয় জটিল গণনার জন্যই আজ আমরা এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি।’’

Advertisement

মারগট লি শেটারলি নামে আর এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ২০১৬ সালেই ‘হিড্‌ন ফিগারস’ নামে বইটি লেখেন। তখনকার দিনে আফ্রো-মার্কিন পরিবারের মেয়েদের অষ্টম শ্রেণির পরে আর পড়তে দেওয়া হত না। নাসার ‘কম্পিউটার পুল’-এর এই তিন সদস্যা তখন কী ভাবে যাবতীয় বাধা টপকে নাসা-য় কাজ করার সুযোগ পান এবং সেখানে গিয়েও কী প্রচণ্ড জাতি, বর্ণ ও লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হন, তারই গল্প বলে ‘হিড্‌ন ফিগারস’।

কাল নতুন রাস্তা উন্মোচনের সময়ে উপস্থিত ছিলেন মারগট। সঙ্গে ডরোথি, মেরি আর ক্যাথরিনের পরিবারের লোকজনও। ‘‘এই রাস্তায় এলে আমরা সকলে যেন এই তিন জনের অবদান মনে করি। কী ভাবে বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসার জন্য এঁরা যাবতীয় বাধার সঙ্গে লড়ে সাম্য ও মানবিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক সময়ে,’’ বলেছেন লেখিকা।

ডরোথি এবং মেরি প্রয়াত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। কিন্তু ক্যাথরিন জনসন এখনও জীবিত। বয়স ১০০। থাকেন আদি বাড়ি ভার্জিনিয়াতেই। মূলত ক্যাথরিনের নির্ভুল গণনায় ভরসা রেখেই ১৯৬১ সালে অ্যালান শেপার্ড প্রথম মার্কিন হিসেবে মহাকাশে পাড়ি দেন। পরের বছর, জন গ্লেন তাঁর অভিযানের আগে কম্পিউটার থেকে পাওয়া তথ্যের উপরে ভরসা না করে আরও এক বার ক্যাথরিনের দ্বারস্থ হন। প্রায় দেড় দিন টানা জটিল অঙ্ক কষে ক্যাথরিন বলেছিলেন, পৃথিবীর গতিপথ নিয়ে কম্পিউটার যে তথ্য দিচ্ছে, তা নির্ভুল। তাঁর কাছ থেকে ভরসা পাওয়ার পরেই ১৯৬২ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে অভিযান করতে সম্মত হন গ্লেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement