নিয়ানডার্থালদের এই কঙ্কালগুলি থেকেই মিলেছিল আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের ডিএনএ। ছবি সৌজন্যে: গবেষকদল।
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। কেউ একেবারেই ঘুমিয়ে রয়েছে। কেউ কেউ আর আগের মতো সক্রিয় নয়। আধুনিক মানুষ হোমোসাপিয়েন্স সাপিয়েন্সের পূর্বপুরুষ নিয়ানডার্থালদের কাছ থেকে পাওয়া এমন কয়েকটি জিনই আমাদের ফুসফুসকে ভয়াবহ কোভিড সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদলের সাম্প্রতিক গবেষণা এ কথা জানিয়েছে। গবেষণাপত্রটি আগামী ২ মার্চ প্রকাশিত হবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস (পিনাস)’-এ।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই জিনগুলিকে পাওয়া গিয়েছে আধুনিক মানুষের ১২ নম্বর ক্রোমোজোমের ডিঅক্সি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ)-এর মধ্যে। রয়েছে একটা ঝাঁকে (‘ক্লাস্টার’)। এই জিনগুলি ‘হ্যাপলোটাইপ’। যার অর্থ, নিয়ানডার্থালদের শরীরের কয়েকটি জিনের আর একটি রূপ (‘ভেরিয়্যান্ট’)।
গবেষকদের দাবি, জিনের এই গোটা ঝাঁকটাই আধুনিক মানুষ পেয়েছে তার পূর্বপুরুষ নিয়ানডার্থালদের কাছ থেকে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে ঝাঁকের প্রতিটি জিনের জন্য কোভিড রোগীকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন কমে যায় প্রায় ২২ শতাংশ।
একটি উদ্বেগজনক তথ্যও উঠে এসেছে গবেষণা থেকে। সেটা হল, করোনাভাইরাস-সহ সব রকমের ভাইরাসের দেহে থাকা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (আরএনএ)-কে নষ্ট করে দিতে পারে মানুষের দেহের যে জিনগুলি তাদের সক্রিয়তা কমিয়ে দিতে বা কাজ করার ধরন বদলেও দিতে পারে নিয়ানডার্থালদের কাছ থেকে আসা জিনগুলির ঝাঁক।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, নিয়ানডার্থালদের কাছ থেকে আসা এই জিনগুলির ঝাঁক সহারা মরুভূমি সংলগ্ন আফ্রিকার দেশগুলির মানুষের দেহে খুব কমই পাওয়া গিয়েছে। কারণ ওই সব দেশগুলির আধুনিক মানুষের দেহে নিয়ানডার্থালদের জিন নেই বললেই চলে।
কিন্তু এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষের দেহেই রয়েছে নিয়ানডার্থালদের বহু জিন। তাদের অনেকে ঘুমিয়ে রয়েছে (‘ডরম্যান্ট’)। কেউ কেউ কাজের ধরন বদলে ফেলেছে। নিয়ানডার্থালদের জিন শরীরে থাকায় এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলির আধুনিক মানুষের দেহে কোভিডের গুরুতর সংক্রমণ কমানোর একটা স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের শরীরেও রয়েছে নিয়ানডার্থালদের জিন।
এর আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল আধুনিক মানুষের ৩ নম্বর ক্রোমোজোমে নিয়ানডার্থালদের যে জিনগুলি রয়েছে সেগুলি বেশ কয়েকটি রোগের সংক্রমণে সহায়তা করে। এ বারের গবেষণা উদ্বেগের পরিবর্তে আশার কথাই শোনাল।