-ফাইল ছবি।
গাছপালার চেয়েও দ্রুত হারে। আরও বেশি পরিমাণে বাতাসের বিষ টেনে নেবে গগনচুম্বী বহুতলই! শহরে গগনচুম্বী বহুতলই হয়ে উঠবে ‘গভীর অরণ্য’।
বাসিন্দারা যতটা বিষ ঢেলে দেবেন বাতাসে, গগনচুম্বী বহুতলই পারবে অন্তত তার চার গুণ টেনে নিতে। আর টেনে নেওয়া সেই বাতাসের বিষ কাজে লাগানো হবে শিল্পে, উন্নয়নে। বানানো হবে রাস্তাঘাট, জলের পাইপ আরও কত কী!
এমন সব পদার্থ দিয়ে বানানো হবে সেই সব গগনচুম্বী বহুতল, যাতে তা আপনাআপনিই টেনে নিতে পারে বাতাসের বিষ- কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস। অন্যতম প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস। যা পৃথিবীর উত্তরোত্তর উষ্ণায়নের প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। ফি বছরে বাতাস থেকে এই পদ্ধতিতে শুধু গগনচুম্বী বহুতলগুলিই টেনে নিতে পারবে ১৬০ কোটি টন বিষাক্ত কার্বন।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় সদ্যসমাপ্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলন ‘সিওপি২৬’-এ এমন গগনচুম্বী বহুতল বানানোর বিরল নকশা পেশ করেছে স্থপতি সংস্থা ‘স্কিডমোর, ওয়িংস অ্যান্ড মেরিল (এসওএম)’। জানানো হয়েছে, এই সব গগনচুম্বী বহুতল বানানো হবে মূলত শহরগুলিতে। পরিকল্পনার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আরবান সিক্যুইয়া’।
আরবান সিক্যুইয়া: কী, কেন
রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বিশ্বে ফি বছর যে পরিমাণে বাতাসে এসে মিশছে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস, তার ৪০ শতাংশেরই উৎস নগর ও শহরগুলির বিভিন্ন গগনচুম্বী বহুতল ও আবাসন। বিশ্বের জনসংখ্যা যে হারে বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী কয়েক দশকে শহরগুলিতে জনসংখ্যার চাপ আরও অনেক গুণ বেড়ে যাবে রুটি-রুজির প্রয়োজনে। আর্থিক নিরাপত্তার সুযোগ গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরে অনেক বেশি বলে। তার ফলে, আগামী চার দশকে ২০৬০ সালের মধ্যে নগর ও শহরগুলিতে মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করে দিতে আরও ২৩ হাজার কোটি বর্গ মিটার স্থানের প্রয়োজন খুব জরুরি হয়ে উঠবে।
এসওএম-এর তরফে যে নকশা পেশ করা হয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সিওপি-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে তাতে দেখানো হয়েছে কী ভাবে গগনচুম্বী বহুতলগুলিই গাছপালার চেয়ে দ্রুত হারে ও অনেক বেশি পরিমাণে বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে টেনে নিতে পারবে। আর সেই বিষাক্ত গ্যাসকে কী ভাবে বদলে দেওয়া যাবে মানুষের উন্নয়নে। কী ভাবে তাকে কাজে লাগানো যাবে শিল্পে, উন্নয়নের নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে।
এসওএম-এর তরফে দাবি করা হয়েছে, এই নকশায় বিশেষ কয়েকটি পদার্থ দিয়ে বানানো হলে একটি গগনচুম্বী বহুতল ও শহরে ফি বছর অন্তত ১ হাজার টন ওজনের কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বাতাস থেকে টেনে নিতে পারবে। যা বাতাস থেকে টেনে নেওয়ার জন্য কম করে সাড়ে ৪৮ হাজার গাছ লাগাতে হত।
কোন কোন পদার্থে গড়া হবে গগনচুম্বী বহুতল
এই গগনচুম্বী বহুতলগুলি বানানো হবে এমন সব পদার্থ দিয়ে, যাদের তৈরি করার সময়েও ইস্পাত ও কংক্রিটের চেয়ে অর্ধেক পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের নির্গমন হয় বাতাসে। গগনচুম্বী বহুতলগুলি বানানোর জন্য সেই পদার্থগুলি হতে পারে জৈব ইট, হেম্পক্রিট, বায়োক্রিট ও ভারী কাঠ। থাকবে নানা ধরনের শৈবালও। তার ফলে, নির্মাণের সময় বাতাসের বিষ যে পরিমাণে টেনে নেওয়ার প্রযুক্তি এখন চালু রয়েছে, ৬০ বছর পর তা বেড়ে যাবে অন্তত ৪০০ শতাংশ।
টেনে নেওয়া বিষ উন্নয়নের কতখানি কাজে লাগবে
নতুন পরিকল্পনায় এও দাবি করা হয়েছে, বাতাসের বিষ টেনে নিয়ে তাকে শিল্পে, উন্নয়নে কাজে লাগানোর এখনকার প্রযুক্তিগুলির চেয়ে প্রস্তাবিত প্রযুক্তি আরও বেশি দড় হবে। এখনকার প্রযুক্তিতে প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ১২০ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে শিল্পে, উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব। প্রস্তাবিত প্রযুক্তিতে প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৩০০ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে এই সব উন্নয়নের কাজে লাগানো সম্ভব হবে।