চাঁদের পর সূর্যে পাড়ি দেবে ইসরো। ছবি: সংগৃহীত
বুধবার সন্ধ্যায় গোটা ভারতের চোখ ছিল চাঁদের দিকে। ইসরোর পাঠানো চন্দ্রযান-৩ শেষ পর্যন্ত চাঁদে ল্যান্ডার বিক্রমকে নামাতে পারে কি না, সেই নিয়েই ছিল যাবতীয় আকর্ষণ। কিন্তু চাঁদের পাশাপাশি ইসরো নিঃশব্দে এগোচ্ছে অন্য একটি লক্ষ্য নিয়ে। তাদের ভাবনায় চাঁদের সঙ্গে রয়েছে সূর্যও। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সূর্যে পাড়ি দেবে ‘আদিত্য-এল১’। আনন্দবাজার অনলাইনকে তেমনটাই জানালেন ইসরোর বাঙালি বিজ্ঞানী শুভ্রদীপ ঘোষ।
চাঁদে চন্দ্রযান-৩ পাঠানোর নেপথ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম নিউ গড়িয়ার পঞ্চসায়রের শুভ্রদীপ। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ছেড়ে চাঁদের কক্ষপথে চন্দ্রযান-৩-কে পাঠানোর দায়িত্ব ছিল তাঁরও কাঁধে। সেই কাজে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা সফল। বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রেখেছে ভারতের বিক্রম। তার পেট থেকে বেরিয়ে এসেছে রোভার প্রজ্ঞানও। এই সাফল্যের মাঝেই শুভ্রদীপ জানালেন, সূর্যের পথে পাড়ি দেবে ভারত। শুভ্রদীপ বললেন, “প্রথম বার সূর্যের পথে পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবছি আমরা। সেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। সূর্যের পৃষ্ঠে তো নামা সম্ভব নয়, আদিত্য-এল১ নামের যে মহাকাশযান পাঠানো হবে, সেটি যাবে একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত। ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১ বলে একটা জায়গা পর্যন্ত পাঠানো হবে। ওই জায়গায় পৃথিবী এবং সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ থাকে না। ওই জায়গায় আদিত্য-এল১ পৌঁছে গেলে আজীবন থেকে যেতে পারবে। সেই চেষ্টাই করছে ইসরো। ২ অথবা ৩ সেপ্টেম্বর আদিত্য-এল১-কে পাঠানো হবে। তার কাজ চলছে এখন।”
চাঁদের মাটিতে পা রাখতে চন্দ্রযান-৩-এর সময় লেগেছে ৪০ দিন। সূর্যের পথে যেতে লাগবে ১৮০ দিন। শুভ্রদীপ বললেন, “ভারত এর আগে এত দূরে কোনও মহাকাশযান পাঠায়নি। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। আদিত্য-এল১ যাবে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। সময় লাগবে ১৮০ দিন। সেই কাজই চলছে এখন। দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করছি আমরা। শনি এবং রবিবারেও ছুটি নেই। দুটো কাজ একসঙ্গে চলছে বলে চাপ এখন আরও বেশি।”
এই কাজের মাঝেই বুধবার কি উৎসবে মেতেছিল ইসরো? সমাজমাধ্যমে হঠাৎ ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োতে ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমানাথকে নাচতে দেখা যাচ্ছে। কলকাতার পাঠভবন স্কুল থেকে পাশ করা শুভ্রদীপ বললেন, “ওই ভিডিয়োটি কিন্তু বুধবারের নয়। পুরনো একটা ভিডিয়ো। চন্দ্রযান-৩ চাঁদে নামার পর এ সব কিছুই হয়নি। হওয়ার অবকাশও ছিল না। টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে সকলে। চাঁদে বিক্রম নামার ২৪ ঘণ্টা পরেও এখনও অনেকে অফিসে রয়েছে। কোনও উৎসব হয়নি। সে সব পরে হবে। কাজ শেষ হয়নি এখনও। আগামী ১৪ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে। যে তথ্য প্রজ্ঞানের থেকে আমরা পাব, তা জানার জন্য গোটা বিশ্ব অপেক্ষা করে রয়েছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তো আমরাই প্রথম।”
শ্রীহরিকোটায় লঞ্চ প্যাডের সামনে শুভ্রদীপ ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
বুধবার চাঁদে নামার পর কেমন ছিল ইসরোর অফিসের অবস্থা? আইআইটি গুয়াহাটি থেকে পাশ করা শুভ্রদীপ বললেন, “গত বার শেষ মুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল বিক্রমের সঙ্গে। এ বার তাই উৎকণ্ঠা অনেক বেশি ছিল। শেষ ১২ মিনিট গোটা অফিসে কোথাও পিন পড়লেও শোনা যেত। আমরা তখন শূন্যের অপেক্ষায়। চাঁদে বিক্রম ঠিক মতো নামতে পারলে দূরত্ব, গতি সব কিছু শূন্য হয়ে যাবে। সেটার অপেক্ষাতেই ছিলাম আমরা। যখন সেটা হল, তখন আর আমাদের নড়ার ক্ষমতা ছিল না। স্থবির হয়ে গিয়েছিলাম কয়েক সেকেন্ড। তার পর আমরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ি। যদিও কাজ তো তখনও শেষ হয়নি। বিক্রম চাঁদে নামতেই ধুলো উড়তে শুরু করেছিল। সেই ধুলো ঝড় থামার পর রোভার প্রজ্ঞান বেরিয়ে আসে। তার পর আসল কাজটা শুরু হল। এখন চাঁদের নানা অজানা কথা আমরা জানতে পারব।”
শুভ্রদীপেরা এখন অপেক্ষায় প্রজ্ঞান কী কী তথ্য পাঠাবে। সেই সঙ্গে কাজ চলছে আদিত্য-এল১ নিয়েও। চাঁদের পর এ বার যে লক্ষ্য সূর্য। সেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ইসরো।