নিজের ধর্ম বজায় রাখতে যে কত নীচে নামতে পারে জল! -ফাইল ছবি।
না। তাপমাত্রা শূন্য ছাড়িয়ে অত নীচে নেমে গেলেও জল বরফ হয় না! বলা ভাল, সহজে কঠিন বরফ হয়ে যেতে চায় না।
থাকতে পারে তরল অবস্থাতেই। শূন্যের নীচে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও। ফারেনহাইট স্কেলে যা মাইনাস ৪৭.২ ডিগ্রি তাপমাত্রা।
একেবারেই অবাক করে দেওয়া এমন ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারলেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রথম।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার কমিউনিকেশন’-এ।
বিজ্ঞানীরা দেখিয়ে দিলেন মাইনাস ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও দিব্য তরল অবস্থাতেই থাকতে পারে জলের কণা। তরলের যা যা ধর্ম, অক্ষরে অক্ষরে সেই সব কিছুই মেনে।
বিজ্ঞানীরা এও দেখালেন, জলের কণা আকারে যত ছোট হয় ততই বাড়ে তার নিজের স্বাভাবিকতা (ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় জল থাকে তরল অবস্থায়) বজায় রেখে চলার আগ্রহ। যাকে বোধ হয় ‘জেদ’ও বলা যায়!
তরল হয়েই থাকব, বরফ হব না কিছুতেই— জলের কণার এই ‘জেদ’ কতটা বজ্রকঠিন তা বুঝতে তাপমাত্রার ‘সিঁড়ি’ ধরে পারদের ক্রমশ নীচে নামার দিকে নজর রেখেছিলেন টেক্সাসের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানীরা। তরলেই থাকব নিষ্ঠাবান হয়ে, এই ‘জেদ’ বুঝতে তাঁরা অনেক অনেক ছোট আকারের জলের কণাকে নিয়েছিলেন পরীক্ষার আতশকাচের নীচে। জলের সেই কণার ব্যাস ছিল মাত্র ১৫০ ন্যানোমিটার (এক ন্যানোমিটার বলতে বোঝায় এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ)।
রাশিয়ার একটি হ্রদে বরফ ও জলের সহাবস্থান। -ফাইল ছবি।
শুধু তা-ই নয়, দেখা যায় সেই জলের কণা কোন ধরনের তলে (খুব কঠিন না নরম) গা লাগিয়ে রয়েছে, তার উপরেও নির্ভর করে তার স্বাভাবিকতা বজায় রাখার অদম্য জেদের পরিমাণ। সেই তল যদি খুব কঠিন না হয়ে নরম হয়, তা হলে ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আকারের জলের কণার নিজের তরল-ধর্ম বজায় রাখার জেদটাও হয়ে পড়ে বজ্রকঠিন।
আগে এটা জানা ছিল, যে জল আমাদের জীবনের আর এক নাম তা আচার আচরণে খুব ‘দুষ্টু’। নানা রকমের অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটায়। অন্য পদার্থের তরলগুলির মতো আচরণ নয় তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। সে অন্য তরলগুলির চেয়ে স্বভাবে তরল হয়েও একেবারেই আলাদা। তাপমাত্রার হেরফেরে জলের আচরণও বদলায় আকছারই। কখনও কখনও শূন্যের ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নীচে নেমে গিয়েও জল বরফের কেলাস হতে চায় না সহজে। তরল হয়েই টিকিয়ে রাখতে চায় তার তরল-ধর্ম।
হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদ হাদি ঘাসেমি ও তাঁর সহযোগীরা এই প্রথম দেখিয়ে দিলেন তরল-ধর্মী হয়ে থাকার জেদে ওই তাপমাত্রার অনেক নীচে নেমেও অটল থাকতে পারে জল।
এই আবিষ্কার আগামী দিনে মানবকোষের অপমৃত্যু ঠেকানোর জন্য নতুন ওষুধ আবিষ্কারের পথ খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, জলের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাই কোষে ফাটল ধরিয়ে দেয়। কোষকে মেরে ফেলে পুরোদস্তুর ঘাতকের মতো।