মাটি খুঁড়ে জীবাশ্ম জ্বালানি খোঁজার দিন কি শেষ হয়ে আসছে? সমুদ্রের জলের মাধ্যমেই কি এ বার পাওয়া যাবে জ্বালানি! সেই বিষয়ে এক ধাপ এগোলেন নরওয়ে ও সুইত্জারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা। পরিবেশ থেকে অতিরিক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড সরিয়ে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে সমুদ্রের জলের মাধ্যমে কার্বন-ডাই অক্সাইড ও সবুজ মিথানল উৎপাদন করে তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা শুরু করলেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ছোট দ্বীপের সমান আয়তনের এক একটি ১০০ মিটারের ব্যাসার্ধের প্রায় ৭০টি প্যানেল নিয়ে একটি সৌর মিথানল দ্বীপ গড়ে তোলা হবে সমুদ্রের উপর, যা সূর্যের আলো দিয়ে বিশেষ কিছু প্রক্রিয়া ও সরঞ্জামের মাধ্যমে এই জ্বালানি উৎপাদন করবে। ঠিক কি প্রক্রিয়ায় এই সৌর প্যানেলগুলির মাধ্যমে তৈরি হবে গ্রিন মিথানল বা জ্বালানি?
বিজ্ঞানীদের মতে, এই জ্বালানি উৎপাদনে যে পরিমাণ জায়গা, সৌরশক্তি ও জলের প্রয়োজন, তা একমাত্র সামুদ্রিক অঞ্চলেই পাওয়া সম্ভব। সেই কারণে তাঁরা ইন্দোনেশিয়া, উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিলের সামুদ্রিক অঞ্চলগুলি বেছে নিয়েছেন। প্যানেলগুলি একটা মেমব্রেনের উপর সূর্যের দিকে মুখ করে বসানো হবে, যা এই প্যানেলগুলিতে ২৪ মেগাওয়াটের শক্তি দেবে।
সমুদ্রের জলে লবণ থাকায় প্রথমে সেই জলটি লবণমুক্ত করা হবে। লবনমুক্ত করার পর হাইড্রোলিসিসের মাধ্যমে সেই জলের হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনকে আলাদা করা হবে। এই প্রক্রিয়াটির জন্য একটি বিশেষ ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই ট্যাঙ্কটির সঙ্গে একটি আন্ডারওয়াটার পাইপলাইন যুক্ত করা থাকবে যা বাষ্প সঞ্চালনের জন্য ব্যবহার করা হবে।
আন্ডারওয়াটার পাইপলাইনটি তীরের স্টিম টারবাইনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে যেটি ১ গিগাওয়াটের শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হবে, যা গ্রিন মিথানল ও কার্বন-ডাই অক্সাইড উৎপাদনে সাহায্য করবে।
এ ছাড়াও এই সৌর মিথানল প্যানেলের একটি সংস্করণ মাটিতে করার পরিকল্পনায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, লক্ষ লক্ষ সামুদ্রিক ভাসমান সৌর মিথানল দ্বীপগুলি সূর্যালোকের দ্বারা চালিত হয়ে কার্বন-ডাই অক্সাইড ও গ্রিন মিথানল বা জ্বালানি উৎপাদন করবে, যা ট্রেন, প্লেন ও জাহাজ চালাতে সাহায্য করবে।
তবে আগামী দিনে এই পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে তা শুধুমাত্র সরঞ্জামের দামের উপর নয়, কতটা পরিমাণ শক্তি যানবাহনে যাবে তার উপর নির্ভর করছে। কিন্তু সামুদ্রিক অঞ্চলে এই জ্বালানি উৎপাদনের উপকরণগুলি পরিষ্কার এবং মেনটেন করাটাও একটা ভাবনার বিষয় গবেষকদের কাছে।