-ফাইল ছবি।
ভিন্গ্রহীরাও নজর রাখছে আমাদের উপর। আর সেটা আজ-কাল-পরশুর কাহিনি নয়। তারা আমাদের উপর নজর রেখে চলেছে অন্তত ৫ হাজার বছর বা তারও অনেক আগে থেকে। যখন আধুনিক মানবসভ্যতার জন্মই হয়নি। ফলে সেই সভ্যতা আমাদের চেয়ে বেশি আধুনিক হবে, এটাই স্বাভাবিক। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীতে যে রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্ম হয়েছে মাত্র ১০০ বছর আগে, সেই সঙ্কেতও হয়তো ভিন্গ্রহীরা পেয়ে গিয়েছে অনেক দিন আগেই। আধুনিক পৃথিবীর টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থার বার্তা-চালাচালির ধরনধারণও হয়তো নজর এড়ায়নি ভিন্গ্রহীদের।সবক’টিই রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডে পৃথিবীর ঠিকানা- মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ ২৩ জুন প্রকাশিত একটি নজরকাড়া গবেষণাপত্র এ কথা জানিয়েছে।
নেচার-এর গবেষণাপত্রে ৫ হাজার বছর বা তারও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর উপর নজর রেখে চলা কাছেপিঠের ২৯টি ভিন্গ্রহকেও শনাক্ত করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। যেগুলিতে ইতিমধ্যেই উন্নততর সভ্যতার জন্ম ও বিকাশ হয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)’-র ‘গাইয়া মিশন’ এবং আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র মিশন ‘ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট (টেস)’-এর দেওয়া তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা।
গবেষকরা এমন প্রায় ১ হাজার ৭০০টি নক্ষত্রমণ্ডল খুঁজে পেয়েছেন যে মুলুকে ভিন্গ্রহীদের সভ্যতার অস্তিত্বের সম্ভাবনা যথেষ্টই জোরালো। গবেষণাপত্র জানিয়েছে, এদের মধ্যে কম করে ৩১৩টি নক্ষত্রমণ্ডলের ভিন্গ্রহীরা গত কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার বছরে পৃথিবীকে দেখেছে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে।
মানুষ যেমন তা হামেশাই দেখে সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহের ক্ষেত্রে। গত তিন দশকে যে প্রায় ৪ হাজার ভিন্গ্রহের আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে, সেটাও করা যেত না যদি না সেই ভিন্গ্রহগুলি তাদের নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণের সময় আমাদের চোখের সামনে সেই নক্ষত্রটিকে আড়াল করে না দাঁড়াত। নক্ষত্রের আলোতেই তো ঢাকা পড়ে থাকে গ্রহগুলি। তাই নক্ষত্রের মুখ না ঢাকা পড়লে গ্রহদের হদিশ পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ভাবেই ৩১৩টি নক্ষত্রমণ্ডলের ভিন্গ্রহীরা গত কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার বছরে পৃথিবীকে দেখেছে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে। আগামী ৫ হাজার বছরে আরও ৩১৯টি নক্ষত্রমণ্ডলের ভিন্গ্রহীরা পৃথিবীকে দেখবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে। সেই সব নক্ষত্রমণ্ডল যে খুব দূরে রয়েছে তা নয়।
গবেষকদের পর্যবেক্ষণ, এমন প্রায় ১ হাজার ৭০০টি নক্ষত্রমণ্ডলের ভিন্গ্রহীরা সূর্য থেকে বড়জোর রয়েছে ৩২৬ আলোকবর্ষ দূরে। এদের মধ্যে ৭৫টি নক্ষত্রমণ্ডল আবার সূর্যের থেকে রয়েছে ১০০ আলোকবর্ষেরও কম দূরত্বে।
মূল গবেষক আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ল সাগান ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা জ্যোতির্বিজ্ঞানী লিজা ক্যালটেনেগার বলেছেন, “আমাদের ব্যবহৃত রেডিও তরঙ্গ ইতিমধ্যেই ভিন্গ্রহীদের ওই সব মুলুকে আছড়ে পড়েছে। আরও পড়বে ভবিষ্যতে। শুধু তা-ই নয়, আমরা যেমন সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহ ও ভিন্গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজতে তাদের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন আর মিথেন গ্যাস আছে কি না, থাকলে কী পরিমাণে, সে সব জানার চেষ্টা করি, সেই সব সভ্যতা আরও বেশি প্রাচীন, প্রযুক্তির দিক থেকে আরও বেশি এগিয়ে থাকায় হয়তো ভিন্গ্রহীরাও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বোঝা, কী ভাবে প্রাণ ও সভ্যতার জন্ম হল পৃথিবীতে তা জানার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে কয়েক হাজার বছর আগে থেকেই।”
সবচেয়ে কাছে থাকতে পারে ভিন্গ্রহীদের কোন মুলুক, তারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ‘নেচার’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে। সেই মুলুকের নাম- ‘রোজ-১২৮’ নক্ষত্রমণ্ডল। এটি রয়েছে ভার্গো নক্ষত্রপুঞ্জে। পৃথিবী থেকে মাত্র ১১ আলোকবর্ষ দূরে। এই নক্ষত্রমণ্ডলে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভিন্গ্রহ। আর তাদের অনেকেই সেই নক্ষত্রের থেকে রয়েছে সেই নিরাপদ দূরত্বে (বিজ্ঞানের ভাষায় যা ‘গোল্ডিলক জোন’ বা ‘হ্যাবিটেবল জোন’) যেখানে অনায়াসেই হতে পারে প্রাণের জন্ম ও বিকাশ।
ষাটের দশকে বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক একটি গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে এমন উন্নততর সর্বাধিক ১০ হাজার সভ্যতার হদিশ মেলার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। গত দু’দশক ধরে পৃথিবীর আকাশে ‘ভিন্গ্রহীদের যান’ পর্যবেক্ষণ নিয়ে পেন্টাগনকে জুনেই আমেরিকার কংগ্রেসে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। নাসা-র নতুন প্রধান বিল নেলসনও তাঁর সংস্থার বিজ্ঞানীদের নির্দেশ দিয়েছেন ভিনগ্রহীদের যান নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের।