Skin Care

ত্বকের দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার খোঁজ বিজ্ঞানীদের

গবেষকদের দাবি, সোরিয়াসিসের বর্তমান চিকিৎসায় মূলত স্টেরয়েড, এনএসএআইডি ব্যবহার করা হয়, যা খরচসাপেক্ষ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক।

Advertisement

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১০
Share:

ভুঁইকম্বল গাছ। —নিজস্ব চিত্র।

ত্বকের দুরারোগ্য ব্যাধি সোরিয়াসিসের উপশম রয়েছে পথের ধারে অবহেলায় গজিয়ে ওঠা ভুঁইকম্বল নামের এক গাছে। এই বিষয়ক গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে মেডিক্যাল জার্নাল ‘ফাইটোমেডিসিন’-এ (পিয়ার-রিভিউড)। ভারত তথা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জনজাতি মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিক চিকিৎসা ও ওষুধের জ্ঞানভান্ডারের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষকেরা। তাঁদের সহযোগিতা করেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষকেরাও। এই গবেষণাতেই উঠে এসেছে এই তথ্য।

Advertisement

এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিপ্লবকুমার মোদক ও অধ্যাপক শঙ্কর ভট্টাচার্য। বিপ্লব জানান, তিনি ও তাঁর গবেষক-ছাত্র পার্থ গরাই পুরুলিয়ার জনজাতি চিকিৎসা ও ওষধি নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন। তাঁরা খোঁজ করেন, এই ধরনের ভেষজ ওষুধ কতটা বিজ্ঞানসম্মত। তাঁরা দেখেন, বিভিন্ন প্রদাহমূলক রোগের চিকিৎসায় জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রেমনা হের্বাসিয়া বা ভুঁইকম্বলের শিকড় ব্যবহার করার চল রয়েছে। এর পরে বিপ্লব ও শঙ্করের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল ভুঁইকম্বলের শিকড়ের নির্যাসে থাকা যৌগগুলির সন্ধান করেন। ইঁদুরের শরীরে কৃত্রিম ভাবে সোরিয়াসিস তৈরি করেছিলেন তাঁরা। তার পর ভুঁইকম্বলের শিকড়ের নির্যাস দিয়ে চিকিৎসা করা হয় অসুস্থ ইঁদুরটির। গবেষণার এই অংশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন গবেষক-ছাত্র দেবাঞ্জন সরকার। তাঁরা জানাচ্ছেন, শুধু সন্তোষজনক ফল পাওয়া গিয়েছে, তা-ই নয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও উল্লেখযোগ্য ভাবে কম।

শঙ্কর বলেন, ‘‘সাফল্য মিলতে আমরা খুঁজে বার করার চেষ্টা করি, এই গাছের শিকড়ে কী কী উপাদান রয়েছে।’’ গবেষণাগারে বিভিন্ন পরীক্ষা করে তাঁরা জানতে পারেন, শিকড়ের নির্যাসে থাকা তিনটি উপাদান সোরিয়াসিস (অটোইমিউন ডিসঅর্ডার) নিরাময়ে সাহায্য করে। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকার ‘পিনস্ট্রোবিন’ নামে একটি যৌগ।

Advertisement

গবেষণাপত্রে আরও লেখা হয়েছে, মানবদেহে উপস্থিত ম্যাক্রোফেজ নামে একটি ইমিউন কোষ সোরিয়াসিসের কারণ। ভুঁইকম্বল গাছের নির্যাস এই ম্যাক্রোফেজের একটি বিশেষ প্রোটিন ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর এন এফ কাপ্পা বিটার কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে ম্যাক্রোফেজের প্রদাহ ও সোরিয়াসিস সৃষ্টির ক্ষমতাকে কমিয়ে আনে।

গবেষকদের দাবি, সোরিয়াসিসের বর্তমান চিকিৎসায় মূলত স্টেরয়েড, এনএসএআইডি ব্যবহার করা হয়, যা খরচসাপেক্ষ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক। তাঁদের ব্যাখ্যা, প্রাকৃতিক এই উৎস থেকে যদি ওষুধ তৈরি করা যায়, তা হলে চিকিৎসার খরচ কমবে, কার্যকর ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন নিরাময় মিলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement