একসঙ্গে চার কোটি বছর কাটিয়ে দেওয়ার পরও একে অপরকে নিয়ে কোনও অভাব-অভিযোগ নেই, বরং প্রেম এখনও সেই আগের মতোই মাখোমাখো, এমনটা কখনও দেখেছেন বা শুনেছেন? গবেষণার কাজে গিয়ে এমনই এক মক্ষীযুগলকে আবিষ্কার করলেন জীবাশ্মবিদরা।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অটওয়ে অববাহিকায় গন্ডোয়ানা সুপারকন্টিনেন্টের দক্ষিণ অংশে জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণার কাজে গিয়ে একটি স্ফটিকের মধ্যে এই মক্ষীযুগলকে আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
গত বৃহস্পতিবার ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’-এ নিজেদের গবেষণা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। প্রকাশ করেছেন বেশ কিছু ছবিও। তাতে দেখা গিয়েছে, একে অপরের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে দু’টি মাছি।
ওই মাছি দু’টি ডলিকোপোডিডে প্রজাতির বলে জানা গিয়েছে। সাধারণ মাছির তুলনায় এদের পা বেশ লম্বা। সঙ্গমরত অবস্থায় গাছ থেকে বের হওয়া আঠালো রসে চাপা পড়ে তাদের মৃত্যু হয় বলে জানা গিয়েছে।
মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ জেফ্রি স্টিলওয়েল জানিয়েছেন, গাছ থেকে রস বেরিয়ে তা জমে স্ফটিক তৈরি হয়। প্রায় ৪ কোটি বছর আগে সে রকমই গাছের রসে আটকে যায় ওই মাছি দু’টি। তার উপর আরও রস জমে স্ফটিকটি বড় আকার ধারণ করে। যার ফলে স্ফটিকের মধ্যে মাছি দু’টি অবিকৃত অবস্থায় রয়ে গিয়েছে।
স্টিলওয়েল জানিয়েছেন, অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছি দু’টি একে অপরের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। ভাল করে দেখতে গিয়ে বোঝেন সঙ্গমরত অবস্থায় গাছের রসে সমাধি ঘটে তাদের।
তবে জীবিত অবস্থায় মাছি দু’টির মধ্যে সঙ্গম না-ও ঘটে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন স্টিলওয়েল। তাঁর যুক্তি, হতে পারে, একসঙ্গে এমন ভাবে রসে চাপা পড়ে মাছি দু’টি, যা দেখলে তারা সঙ্গমরত ছিল বলে মনে হতে পারে। এই বিষয়টিকে তিনি ‘ফ্রোজেন বিহেভিয়ার’ বলে উল্লেখ করেছেন।
সঙ্গমরত অবস্থায় মাছি দু’টি চাপা পড়ে বলে মানতে নারাজ ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের জীবাশ্মবিদ ভিক্টোরিয়া ম্যাকয়ও। তাঁর মতে, হতে পারে প্রথমে একটি মাছি গাছের রসে আটকে যায়। উৎসাহ বশে সেই অবস্থায় তার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতে গিয়ে দ্বিতীয় মাছিটিরও একই অবস্থা হয়।
তবে এই বিশেষ স্ফটিক জীবাশ্মটি ছাড়াও পশ্চিম তাসমানিয়ার ম্যাকোয়ারি, অ্যাঙ্গলসি এবং ভিক্টোরিয়া থেকেও সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৮০০ স্ফটিক জীবাশ্ম উদ্ধার করেছেন স্টিলওয়েল এবং তাঁর সঙ্গীসাথীরা।
জীবাশ্মগুলির কোনওটি ৫ কোটি ৪০ লক্ষ বছর আগের, আবার কোনওটি ৪ কোটি ২০ লক্ষ বছর আগের। ওই দু’টি মাছি ছাড়াও মাকড়সা, পিঁপড়ে-সহ নানা রকমের পতঙ্গের জীবাশ্ম উদ্ধার করেছেন তাঁরা।