এই সেই ব্লাস্টয়েডস। কৃত্রিম উপায়ে বানানো হল মানবভ্রূণ। ছবি- গবেষণাপত্রের সৌজন্যে।
এ বার মানবভ্রূণও বানানো সম্ভব হল গবেষণাগারে। বিশ্বে এই প্রথম। গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে বানানো হল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষের ঝাঁক, যেগুলি মানবভ্রূণের একেবারে আদি পর্বের মতো কাজ করে। কৃত্রিম উপায়ে বানানো এক মিলিমিটারেরও কম ব্যাসের এই কোষগুলির নাম ‘ব্লাস্টয়েড্স’। দেখা গেল, আদত মানবভ্রূণের একেবারে আদি পর্বের কোষগুলির (‘ব্লাস্টোসিস্টস্’) কাজকর্ম, আচার আচরণের সঙ্গে ব্লাস্টয়েড-গুলির কাজকর্ম, আচার আচরণের কোনও ফারাকই নেই। আদতে মানবভ্রূণের আদি পর্বের কোষগুলিতে (ব্লাস্টোসিস্টস্) প্রায় ১০০টি কোষ থাকে। যা থেকে মানবশরীরের প্রতিটি কলা (‘টিস্যু’) তৈরি হয়।
সংশ্লিষ্ট দু’টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ। গবেষকরা দেখিয়েছেন কী ভাবে ৬ থেকে ৮ দিনের মধ্যেই বলের আকৃতির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্লাস্টয়েড-গুলি তৈরি হয়। গবেষকরা দেখছেন, আদত মানবভ্রূণের ব্লাস্টোসিস্ট-গুলির মধ্যে যে যে কোষ থাকে, সেই কোষগুলিই রয়েছে ব্লাস্টয়েড-গুলির মধ্যে। তাদের কাজকর্ম, আচার আচরণও অভিন্ন।
প্রসূতির ফ্যালোপিয়ান টিউবে ডিম্বাণু (‘এগ’) ও শুক্রাণু (‘স্পার্ম’)-র মিলনের পর ২ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই সাধারণত তৈরি হয়ে যায় মানবভ্রূণ (‘এমব্রায়ো’)। তখন থেকেই মাতৃজঠরে শুরু হয়ে যায় শিশুর শরীর গড়ে ওঠার নানা প্রক্রিয়া।
প্রায় সাড়ে ৪ দশক আগেই টেস্ট টিউব শিশুর জন্ম সম্ভব হয়েছে বিশ্বে। সে ক্ষেত্রে মানুষের ডিম্বাণু ও শুক্রাণুকে আলাদা ভাবে সংগ্রহ করে কৃত্রিম উপায়ে টেস্ট টিউবে তাদের নিষিক্ত (‘ফার্টিলাইজেশন’) করানো হয়েছে। কিন্তু তার পর আর কৃত্রিম উপায়ে মানবভ্রূণ বানানো সম্ভব হয়নি গবেষণাগারে। তাই টেস্ট টিউবে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটানোর পর নিষিক্ত ডিম্বাণুকে মাতৃজঠরে প্রতিস্থাপন করতে হয়। তার পর মাতৃজঠরেই তৈরি হয় মানবভ্রূণ।
গবেষকরা দেখেছেন আদত মানবভ্রূণের ব্লাস্টোসিস্ট গুলিকে কৃত্রিম উপায়েও বানানো যায়। সে ক্ষেত্রে ব্লাস্টয়েড (কৃত্রিম উপায়ে বানানো ক্ষুদ্রাতিক্ষদ্র কোষ) গুলি তৈরি করা যেতে পারে হয় স্টেম সেল, না হলে মানবত্বকের কোষগুলির কিছু কিছু রদবদল ঘটিয়ে।
মাতৃজঠরে ব্লাস্টোসিস্ট গড়ে ওঠার জন্য যে রাসায়নিকগুলির প্রয়োজন, একটি ত্রিমাত্রিক আধারে সেই রাসায়নিকগুলি রেখে তার মধ্যে স্টেম সেল বা মানবত্বকের কোষগুলিকে কিছু সময় রেখে তাদের বৃদ্ধি ঘটান গবেষকরা।
কৃত্রিম উপায়ে মানবভ্রূণের আদি পর্বের কোষগুলিকে বানাতে গিয়ে গবেষকরা এ-ও কিছুটা বুঝতে পেরেছেন কেন গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘মিসক্যারেজ’।