চেরনোবিল থেকে কী বিপদ ঘনাতে পারে ইউরোপে? -ফাইল ছবি।
ভয়ঙ্কর বিপদ ঘনিয়ে আসছে গোটা ইউরোপের উপর। আকাশে বাতাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে অত্যন্ত বিপজ্জনক রাশি রাশি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে বেরিয়ে আসা ভয়ঙ্কর বিকিরণ। যা গোটা ইউরোপকে কয়েক হাজার বছরের জন্য পঙ্গু করে দিতে পারে।
প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ পেরিয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের উত্তর সীমান্ত দিয়ে ঢুকে চেরনোবিলের পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের একাংশ দখল করে নেওয়ার পর এমনই সতর্কবার্তা মিলেছে ইউক্রেন সরকারের তরফে। বিজ্ঞানীদের তরফেও।
চেরনোবিলের মূল পরমাণু চুল্লির চার পাশে কয়েক হাজার মাইল জুড়ে রয়েছে যে চেরনোবিল এক্সক্লুসন জোন, তার দোরগোড়ায় গত ডিসেম্বর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অন্তত সাড়ে সাত হাজার রুশ সেনা পৌঁছে গিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের মুখ্য উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘চেরনোবিল পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। প্রচুর রুশ সেনা ঘিরে ফেলেছে কেন্দ্রটিকে। এলোপাথাড়ি গুলি, গোলা ছুড়ছে রুশ সেনারা। ছোড়া হচ্ছে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র, ছুটে আসছে কামানের গোলা। তাতে যে কোনও মুহূর্তে ফাটল ধরতে পারে পারমাণবিক বর্জ্য রাখার এলাকার প্রাচীরে। প্রকোষ্ঠগুলিতে। বেরিয়ে আসতে পারে রাশি রাশি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য।’’
রুশ অস্ত্রের আঘাতে চেরনোবিল থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বেরিয়ে আসার ভয়ে কতটা সন্ত্রস্ত ইউক্রেন, তার প্রমাণ মিলেছে দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের উপদেষ্টা প্রাক্তন ডেপুটি মিনিস্টার আন্তন গেরাশেঙ্কোর ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যেও। ফেসবুকে গেরাশেঙ্কো লিখেছেন, ‘‘অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় পারমাণবিক বর্জ্যগুলি যেখানে রাখা আছে, সেই বিশাল এলাকার বাইরে মোতায়েন ইউক্রেনের জাতীয় রক্ষীবাহিনী এখন তুমুল লড়াই করছে যাতে রুশ সেনার অস্ত্রের আঘাত থেকে এলাকাটিকে রক্ষা করা যায়। ওই সব তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের বিকিরণ ইউক্রেনের পক্ষে তো সর্বনাশা হয়ে উঠবেই, এমনকি তা প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতেও। যার ক্ষতিকর প্রভাব দেশগুলির উপর থেকে যাবে কয়েক হাজার বছর ধরে।
৩৬ বছর আগে, ১৯৮৬ সালে দু’-দু’টি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চেরনোবিলের পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র। সেই বিস্ফোরণে মুহূর্তে উড়ে যায় চেরনোবিলের পরমাণু চুল্লির উপরে থাকা প্রায় দু’হাজার মেট্রিক টন ওজনের ধাতব ঢাকনা। বেরিয়ে পড়ে রাশি রাশি ভয়ঙ্কর তেজস্ক্রিয় পদার্থ। অত্যন্ত ক্ষতিকর নানা ধরনের পারমাণবিক বর্জ্য। সেগুলি ছড়িয়ে পড়ে আড়াই হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে। তখনই বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ওই সুবিশাল এলাকা জুড়ে তেজস্ক্রিয়তার বিপদ থাকবে আগামী ২৪ হাজার বছর। ওই বিশাল এলাকা অত দিন ধরে অন্তত আর মানুষের বাসযোগ্য হয়ে উঠবে না।
সেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় চেরনোবিলের পরমাণু চুল্লি। তার চার পাশের সুবিশাল এক্সক্লুসন জোনের বেশির ভাগ এলাকাতেই প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যেখানে রাখা আছে অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় রাশি রাশি পারমাণবিক বর্জ্য।
কিন্তু এ বার বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, সেই পারমাণবিক বর্জ্য আর নির্দিষ্ট সীমানার গণ্ডিতে বেঁধে রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে। রুশ সেনাবাহিনীর এলোপাথাড়ি ছোড়া গুলিগোলা, ক্ষেপণাস্ত্র, কামানের গোলার আঘাতে সেই এলাকার প্রাচীরে ফাটল ধরতে পারে। বেরিয়ে আসতে পারে রাশি রাশি পারমাণবিক বর্জ্য। তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা ইউরোপের আকাশে, বাতাসে।