science news

আমার বন্ধু রজার

রজারের খুব ইচ্ছা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে যাওয়ার। ভ্যানেসাও ছিল খুব উৎসাহী।

Advertisement

পার্থ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ১৫:০৭
Share:

নোবেলজয়ী রজার পেনরোজ, (ইনসেটে) লেখক।

আমরা উঠতে যাওয়ার আগেই লঞ্চটা ছেড়ে দিল।

খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন ভ্যানেসা। মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল, ‘‘স্টপ স্টপ…।’’ কিন্তু লঞ্চচালকের কানে তা পৌঁছয়নি।

ভ্যানেসা আর দীপঙ্করকে (হোম) নিয়ে লঞ্চ ছেড়ে দিল। আর বাবুঘাটে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি আর রজার। রজার বলতে রজার পেনরোজ। মঙ্গলবার যিনি পদার্থবিজ্ঞানে পেলেন নোবেল পুরস্কার। ভ্যানেসা ওঁর স্ত্রী। আর দীপঙ্কর হোম আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের এক জন। তখন উনি বোস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক।

রজারের খুব ইচ্ছা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে যাওয়ার। ভ্যানেসাও ছিল খুব উৎসাহী।

তাই আমি আর দীপঙ্কর ঠিক করলাম রজার আর ভ্যানেসাকে নিয়ে হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনেই যাব শান্তিনিকেতনে। সকাল দশটা পাঁচের ট্রেন। আমরা ঠিক করলাম হাওড়া ব্রিজ দিয়ে না গিয়ে বাবুঘাট থেকে লঞ্চে গঙ্গা পেরিয়ে হাওড়া থেকে ট্রেনে চাপব। তাতে গঙ্গার উপর দিয়ে যাওয়ার সময় রজার আর ভ্যানেসাকে গঙ্গার এপার আর ওপারটা দেখানো যাবে।

ওঁকে আর দীপঙ্করকে নিয়ে লঞ্চ ছেড়ে দিতেই ভ্যানেসা ভেবেছিল, রজার আর আমি বোধহয় আর যেতে পারলাম না। তাই চেঁচিয়ে উঠেছিল।

১৫ মিনিট বাদে পরের লঞ্চে রজার আর আমাকে হাওড়ার ঘাটে উঠতে দেখে ভ্যানেসা আশ্বস্ত হল।

তার পর শান্তিনিকেন এক্সপ্রেসে চেপে শান্তিনিকেতন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের একটা অডিটোরিয়ামে রজারের একটা বক্তৃতা ছিল।

অডিটোরিয়ামের দিকে যেতে যেতে দেখি, আশাপাশের এলাকাগুলি থেকে বহু মানুষ আসছেন রজারকে দেখতে। তাঁর বক্তৃতা শুনতে। সকলকেই খুব বিস্ময় নিয়ে রজারের প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতা শুনতে দেখেছিলাম।

সেই সময় শান্তিনিকেতনে ওঁদের থাকার জন্য একটি হোটেল বুক করা হয়েছিল। কোনও দিন কোনও ব্যাপারেই নালিশ করার অভ্যাস নেই রজারের। তবে সে দিন ওই হোটেলে রাত্রিবাসের পর সকালে আমাকে খুব মৃদু ভাবে বলেছিলেন, ‘‘পার্থ, বিছানাটা বড়ই শক্ত!’’

এটা আজ থেকে প্রায় ২৩ বছর আগের কথা। ১৯৯৭। কলকাতা হলেও বুঝতাম, শান্তিনিকেতনের আশপাশের নানা এলাকা থেকে সে দিন যে ভাবে বহু মানুষকে আসতে দেখেছিলাম রজারের বক্তৃতা শোনার জন্য, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। রজার পেনরোজের পরিচিতি কতটা, সে দিন তার কিছুটা বুঝতে পেরেছিলাম।

Advertisement

লেখকের বাড়িতে রজার পেনরোজ। তাঁর ২০১০ সালের কলকাতা সফরে।

রজারের সঙ্গে আমার পরিচয় তারও ১৫ বছর আগে। সেটা ১৯৮২ বা ’৮৩। তখন আমি কলকাতার ব্রিটিশ কাউন্সিলের সায়েন্স অফিসার।

ওই সময়ই আমি প্রথম রজারকে দেখি কলকাতায়। এসেছিলেন রয়্যাল সোসাইটি আর ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি (ইন্‌সা)’-র একটি যৌথ কর্মসূচিতে। রজারকে তখনই লোকে একডাকে চেনেন।

সেই সময় ব্রিটিশ কাউন্সিলে আমার এক ইংরেজ সহকর্মী ছিলেন। জেরেমি এয়ার্স। রজার কলকাতায় এসেছেন শুনে জেরেমি আমাকে বললেন, ‘‘তুমি একটু অ্যারেঞ্জ কর তো রজারকে যাতে আমার বাড়িতে নিয়ে আসা যায়। আমি ওঁর সম্মানে একটা ডিনার পার্টি দিতে চাই বাড়িতে।’’

সেই মতো জেরেমির বাড়িতে ডিনার পার্টির আয়োজন করা হল। রজার এলেন। দীপঙ্কর এলেন। এলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের ডাকসাইটে অধ্যাপক অমল কুমার রায়চৌধুরীও।

আমার মনে আছে সেই পার্টিতেই প্রথম অমলবাবুর সঙ্গে মুখোমুখি আলাপ হয়েছিল রজারের। অমলবাবুকে দেখে খুব চমকে গিয়েছিলেন রজার। বলেছিলেন, ‘‘ইনিই অমলকুমার রায়চৌধুরী?’’ তার পর দীপঙ্করকে অবাক চোখে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আই সি! উনি তোমাদের কলকাতায় থাকেন?’’

অমলবাবুর নামের সঙ্গে রজার অনেক দিন ধরেই পরিচিত, সেই সুদূর অক্সফোর্ডে বসেও। ’৫৫-তেই আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ’-এ প্রকাশিত হয়েছে সেই বিখ্যাত ‘রায়চৌধুরী ইক্যুয়েশন’। যা অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার পথ দেখিয়েছে। রজারের সেই ইক্যুয়েশন জানা ছিল। সেই রায়চৌধুরীকে একেবারে সামনাসামনি পেয়ে বেশ অবাকই হয়ে গিয়েছিলেন রজার।

অমলবাবুকে আমি চিনতাম ছ’য়ের দশক থেকে। ওঁর বাড়ি ছিল বালিগঞ্জ প্লেসে। রাসবিহারীর মোড়ে এখন যেখানে কালীঘাট মেট্রো স্টেশন, সেখানে আমার বাড়ি থেকে (সতীশ মুখার্জি রোড) যে কত বার অমলবাবুর বাড়িতে গিয়েছি, মনে নেই!

কলকাতায় প্রথম সাক্ষাতের পর থেকেই রজারের সঙ্গে আমার প্রায় নিয়মিতই যোগাযোগ ছিল।

সেটা ১৯৯১। তখন আমি আর ব্রিটিশ কাউন্সিলে নেই। যোগ দিয়েছি ‘সত্যেন্দ্রনাথ বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস (এসএনবিএনসিবিএস)’-এর অধ্যাপক হিসাবে।

ওই সময় ইউরোপের কয়েকটা দেশ ঘুরে গিয়েছিলাম ইংল্যান্ডে। অক্সফোর্ডে গেলাম রজারেরই আমন্ত্রণে। রজার তখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিক্স’-এর সর্বেসর্বা। অক্সফোর্ডে ছিলাম সপ্তাহদু’য়েক।

রজার পেনরোজ তখন ব্যস্ত ছিলেন একটা দুর্দান্ত বিষয় নিয়ে। পরে যা বিখ্যাত হয় ‘পেনরোজ টাইলিং’ নামে।

গণিতের অধ্যাপক পেনরোজের বরাবরই আগ্রহ ছিল বিভিন্ন ধরনের জ্যামিতিক আকার ও আকৃতি নিয়ে। সেই সময় এক জন বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন এশার। যিনি এমন সব ছবি আঁকতেন যাতে বোঝা যেত না সিঁড়িটা উপরে উঠছে নাকি নীচে নামছে। জল উপর থেকে পড়ছে নাকি উপরে উঠছে। এশার ছিলেন পেনরোজের বাবার বন্ধু। সেই সূত্র ধরেই এশারের শিল্পকলার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই পরিচিতি ও পরে আগ্রহ বেড়েছিল পেনরোজের। এবং সেই সূত্রেই পেনরোজ পরে পেনরোজ টাইলিং-এর জন্ম দেন।

পরে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের কেলাস (‘ক্রিস্টাল’)-এর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছিল, যার ব্যাখ্যা পেনরোজ টাইলিং থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। এটাও পেনরোজের খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির অন্যতম।

সেই সময় রোজই দেখা হত, কথা হত, কিন্তু বেশ বোঝা যেত কতটা ব্যস্ত রজার।

তখন অক্সফোর্ডে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধিকর্তার পদে ছিলেন ডেভিড ব্ল্যাগব্রা। ডেভিড বেশ কিছু দিন ছিলেন কলকাতার ব্রিটিশ কাউন্সিলে। ফলে আমার খুবই বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। সেই ডেভিড অক্সফোর্ডে রয়েছেন জেনে ওঁকে ফোন করলাম। সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘‘চলে এসো আমার বাড়ি।’’

রজারকে বললাম, ‘‘যাবে নাকি ডেভিডের বাড়ি?’’ অত ব্যস্ততার মধ্যেও রজার একপায়ে রাজি। তো রজারকে নিয়ে গেলাম অক্সফোর্ডের অদূরেই ডেভিডের বাড়ি। ডেভিড তো খুব খুশি।

ডেভিড বরাবরই একটু অন্য রকম মানুষ। অক্সফোর্ড এমন একটা বাড়িতে থাকতেন যেটা এগারোশ’ বছরের পুরনো। খড়ের চালের বাড়ি। বাড়িতে ঢোকার দরজা এতটাই নীচু যে মাথা অনেকটা ঝুঁকিয়ে ঢুকতে হয়। বুঝলাম, হাজার বছর আগে যাঁরা ওই বাড়িটায় থাকতেন তাঁরা ছিলেন অনেকটাই খর্বকায়!

আমার মনে আছে অবাক চোখে ডেভিডের বাড়িটার সামনে বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম রজারকে।

সেই সময়ের আর একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। অক্সফোর্ডে এসেছিলেন এক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রিম্যান ডাইসন। একটি বক্তৃতা দিতে। রজার আমাকে ওঁর দফতরের একটি বসার ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে বসেছিলেন ডাইসন। আমার সঙ্গে ডাইসনের আলাপ করিয়ে দিলেন রজার।

Advertisement

অ্যালবামের পাতা উল্টে। কলকাতার এস এন বোস সেন্টারে পেনরোজ। ছবি- লেখক।

কথাবার্তা চলছে, এর মধ্যেই একটা কাজে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়লেন রজার। আমাকে বললেন, ‘‘তুমি ডাইসনের সঙ্গে একটু কথা বল। আমি একটা জরুরি কাজ সেরে আসছি।’’

ডাইসনের সঙ্গে আমার কথাবার্তা শুরু হল। উনি জানতে চাইলেন আমি কী নিয়ে গবেষণা করছি? বললাম, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মূল ভিত্তিটা নিয়ে। শুনেই ডাইসন বললেন, ‘‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স তো শুধু অণু, পরমাণুদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অন্য কাজে তেমন লাগে না। কাজেই তার মূল ভিত্তি নিয়ে চিন্তা করার কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।’’

এই কথাবার্তার মধ্যেই রজার ফিরে এলেন। ডাইসনের কথা শুনে অবাক হয়ে তাঁর সঙ্গে জুড়ে দিলেন তর্ক। আর সেই তর্ক করতে করতেই আমাকে আর ডাইসনকে নিয়ে কনফারেন্স হলের দিকে এগোতে থাকলেন। এর পরে ওঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল, আমি আর শুনতে পাইনি।

এর পরের বছর আবার যাই ইংল্যান্ডে। তার দু’বছর পরেই ’৯৪-এর পয়লা জানুয়ারি ছিল সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মশতবর্ষ। তার জন্য বিদেশের বিশিষ্ট অধ্যাপকদের আমন্ত্রণ জানানোর দরকার ছিল। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কিছু গবেষণাপত্র, যেগুলি কলকাতায় মিলছিল না সেগুলি ইংল্যান্ডের বিভিন্ন লাইব্রেরি থেকে জোগাড় করারও প্রয়োজন ছিল।

সেই সময়ই অক্সফোর্ডে গিয়ে আমার আলাপ হয় বিখ্যাত গণিতজ্ঞ মাইকেল আতিয়ার সঙ্গে। আতিয়া ছিলেন তখন কেম্ব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের মাস্টার। মনে পড়ছে আতিয়া বলেছিলেন, ‘‘আমি তো বোসের কাজ অত জানি না। আমি গণিতের লোক। তবে আমি এখন রয়্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট। অন্য বিজ্ঞানীরা যাতে তোমাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় যেতে পারেন তার অর্থের ব্যবস্থা আমি করে দেব।’’

তখনও এস এন বোস সেন্টারের বাড়ি সম্পূর্ণ হয়নি। কাজেই কলকাতার গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারে সেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়েছিল। রজার ছাড়াও এসেছিলেন একঝাঁক খ্যাতনামা বিজ্ঞানী। আগে-পরে বিজ্ঞানীদের এত বড় নক্ষত্র সমাবেশ কলকাতায় হয়েছে বলে আমার মনে পড়ছে না। সেই সময় সত্যেন বসুকে নিয়ে দু’টি খণ্ডে একটি বই বের করা হয়েছিল। ‘এসএনবোস: দ্য ম্যান অ্যান্ড হিজ ওয়ার্কস’। বইটির উদ্বোধন করেছিলেন রজার।

সত্যেন বসুর ১৯২৪ সালের বিখ্যাত গবেষণাপত্রের একটি সিদ্ধান্তের তাৎপর্য কতটা, সেই অনুষ্ঠানে তারও উল্লেখ করেছিলেন রজার। সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে রজারের ‘টুইস্টার থিয়োরি’-র যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, সেই কথা জানিয়ে।

রজার সে দিন বক্তৃতা শুরুই করেন এই বলে, ‘‘আমি শুনে খুবই খুশি যে বোস এটা ১৯২৪ সালেই বলেছিলেন।’’

’৯৭-এ রজারের কলকাতা সফরের আর একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। তখন এসেছিলেন বিশেষ একটি বক্তৃতা দিতে। তাঁর নতুন বই ‘শ্যাডোজ অব দ্য মাইন্ড’-এর প্রেক্ষিতে। আমরা সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম নন্দনের মূল অডিটোরিয়ামে। হল একেবারে উপচে তো পড়েছিলই, আশপাশের রাস্তাঘাটও থমকে গিয়েছিল প্রচণ্ড যানজটে। রজার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের এতটাই কৌতূহল।

সেই অনুষ্ঠানের পর রজার আমাকে বলেছিলেন, ‘‘পার্থ, আমি পৃথিবীর এত জায়গায় বক্তৃতা দিতে গিয়েছি। কোথাও মানুষের এত কৌতূহল দেখিনি। আমি অভিভূত।’’

তার পর রজারের ফের কলকাতায় আসা ২০১০/২০১১-এ। মাঝেও বোধহয় দু’-এক বার এসেছিলেন। ২০১০-এ এসেছিলেন এস এন বোস সেন্টারের একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। যার শিরোনাম ছিল- ‘সেভেন্টি ফাইভ ইয়ার্স অব এনট্যাঙ্গলমেন্ট’। রজার তো বটেই আরও অনেক নামজাদা বিজ্ঞানী সে বার এসেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে।

সে বারই রজার প্রথম আমার বাড়িতে আসেন। আমার বাড়িতে একটি গবেষণাগার আছে। অসুস্থদের চিকিৎসার। সেটা দেখার খুব আগ্রহ ছিল রজারের। ছিলেন ঘন্টাদু’য়েকেরও বেশি।

মনে পড়ছে আমার স্ত্রী রজারের জন্য পোলাও, মাছ আর বিরিয়ানি রেঁধেছিলেন। কিন্তু রজার বিরিয়ানির চেয়ে ডালটাই বেশি তৃপ্তি করে খেয়েছিলেন।

সে বারই রজার-সহ বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের জন্য একটি সান্ধ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ক্যালকাটা ক্লাবে। সেখানে ‘চণ্ডালিকা’র একটি পর্বের গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। আমার মনে আছে, রজার ও অন্যরা সেটা খুবই উপভোগ করেছিলেন। তার পর খানাপিনাটাও জোর জমেছিল।

কোনও দম্ভ তো নেই-ই, রজারকে বরাবরই দেখেছি কেউ সাহায্য চাইলেই হাত বাড়িয়ে দিতে। তা নিজে যত ব্যস্তই থাকুন।

সেই সময় কলকাতার বিশিষ্ট দার্শনিক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধে আমি একটি বইয়ের সম্পাদনা করছিলাম। একটি রেস্তরাঁয় ডিনার খেতে খেতে রজারকে আমি একটি লেখা দিতে অনুরোধ করলাম। সঙ্গে সঙ্গে রাজি। লেখাটির শিরোনাম ছিল- ‘হোয়াট ইজ রিয়্যালিটি’।

তার পর বহু দিন রজার কলকাতায় আসেননি। বন্ধুবর বিকাশ সিংহের আমন্ত্রণে রজার আবার কলকাতায় আসছেন আগামী মার্চে।

আমি নিশ্চিত, রজার একটুও বদলাবেন না নোবেল পাওয়ার পরেও। রজারকে আবার পাওয়া যাবে হাত বাড়ালেই!

লেখক ‘টেগোর সেন্টার ফর ন্যাচারাল সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিলজফি ’-র ডিস্টিংগুইশ্‌ড ফেলো।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement