‘প্রোবা-৩’। —ফাইল চিত্র।
যেন ঠিক পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ! তবে প্রকৃতির নিয়ম মেনে নয়। একেবারেই প্রযুক্তির নিখুঁত কারসাজিতে। পৃথিবী থেকে সেই গ্রহণ দেখাও যাবে না। তবে পূর্ণগ্রাস গ্রহণের সময় সূর্যের ছটার (করোনা অঞ্চল) যে ছবি ধরা পড়ে, সেই একই ছবি তুলবে একটি মহাকাশযান। সূর্যে এমন অনুসন্ধানেই ‘প্রোবা-৩’ নামে মহাকাশযান পাঠাচ্ছে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইসা)। সেই মহাকাশযান পাঠানোর দায়িত্ব পেয়েছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড (এনসিল)। আজ, বুধবার বিকেল ৪টে ৮ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পিএসএলভি সি-৫৯ রকেটে চেপে মহাশূন্যে পাড়ি দেবে ‘প্রোবা-৩’।
গত বছর মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে ভারতের সৌরযান আদিত্য এল-১। সেই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী তথা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব স্পেস টেকনোলজির অধিকর্তা অধ্যাপক দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘প্রোবা-৩ মহাকাশযান আসলে দু’টি মহাকাশযানের সমষ্টি। একটির নাম করোনাগ্রাফ স্পেসক্রাফট এবং অন্যটি অকাল্ট স্পেসক্রাফট। আকাশে যে ভাবে পাখিরা দল বেঁধে ওড়ে বা যুদ্ধবিমান মহড়া দেয় (ফর্মেশন ফ্লাইং), মহাকাশে এই দু’টি মহাকাশযান সে ভাবেই একে অন্যের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলবে।’’ অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, মহাকাশে দু’টি মহাকাশযানের অবস্থানের নিখুঁত অবস্থানের ক্ষেত্রে সর্বাধিক তারতম্য হতে পারে ১ মিলিমিটার। তার ফলেই বোঝা যায় যে প্রযুক্তির কী জটিল ব্যবহার। এই প্রথম লেজ়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দু’টি মহাকাশযানের সমন্বয় করা হবে। এমন ‘ফর্মেশন ফ্লাইং’ এর আগে হয়নি।
প্রাকৃতিক নিয়মে সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝখানে চাঁদ একেবারে চাকতির মতো চলে আসে এবং সূর্যকে ঢেকে দেয়। পৃথিবীতে চাঁদের ছায়া সব থেকে গভীর যেখানে হয় সেখান থেকে সূর্যের ছটা বা করোনা দেখা যায়। মহাকাশে অকাল্ট চাঁদের মতোই সূর্যকে ঢেকে দেবে এবং করোনাগ্রাফ সেই সুযোগে ওই ছবি তুলবে। সেই তথ্য সংগ্রহ করবে ইসা এবং তাদের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য কয়েক জন বিজ্ঞানীও সেই তথ্য বিশ্লেষণের সুযোগ পাবেন। এ দেশে অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও সেই তথ্য আসবে।
আদিত্য এবং ‘প্রোবা-৩’ যৌথ ভাবে সৌরচরিত্রের কোন নতুন দিশা দেখায় আপাতত তারই অপেক্ষা।