এই হেলমেটের মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্ক্যানিং করা যাবে অনেক সহজে। অনেক অল্প সময়ে। ছবি- বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে।
এ বার হেলমেট দিয়েই করা যাবে মস্তিষ্কের স্ক্যানিং!
এমন এক ধরনের হেলমেট বানালেন আমেরিকার বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোটোনিক্স সেন্টারের প্রযুক্তি বিশারদরা। প্লাস্টিক টিউবকে চার পাশ থেকে তামায় জড়িয়ে।
এই হেলমেটের মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্ক্যানিং (‘ব্রেন স্ক্যান’) করা যাবে অনেক সহজে। অনেক অল্প সময়ে। এমআরআই যন্ত্রের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে। অনেক অল্প খরচে। এই পদ্ধতিতে তোলা মস্তিষ্কের ভিতরের বিভিন্ন অংশের ছবি হবে আরও ঝকঝকে। গভীরতর। নিখুঁত।
উদ্ভাবনের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যাডভান্সড মেটিরিয়াল্স’-এ। শুক্রবার।
গবেষকরা এই অভিনব হেলমেটটি বানিয়েছেন দু'টি পদার্থের বিশেষ ধরনের মিশ্রণ দিয়ে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাদের বলা হয়— ‘মেটামেটিরিয়াল্স’। এই মিশ্রণ এমন এক ধরনের পদার্থ, প্রাকৃতিক ভাবে যাদের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। তাদের ধর্মগুলিও তাই প্রাকৃতিক পদার্থগুলির থেকে একেবারেই আলাদা। ফলে, কৃত্রিম ভাবে বানানো এই পদার্থগুলি দিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক অসাধ্যসাধনের চেষ্টা বেশ কিছু দিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তি বিশারদরা।
এই ধরনের পদার্থগুলি সাধারণত বানানো হয় প্লাস্টিক ও নানা ধরনের ধাতুর সংমিশ্রণে। এই সব ক্ষেত্রে সেই সব ধাতুই গুরুত্ব পায়, যেগুলি তড়িৎ পরিবাহী।
এই ধরনের মেটামেটিরিয়াল আলোর মতো তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, শব্দতরঙ্গ বা রেডিয়ো তরঙ্গকে তাদের নির্দিষ্ট পথ থেকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাঁকাতে পারে, তরঙ্গের ওঠা-নামাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তরঙ্গগুলিকে শোষণ করতে পারে।
বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোটোনিক্স সেন্টারের অধ্যাপক শিন ঝাঙ ও তাঁর সতীর্থরা যে হেলমেটটি বানিয়েছেন মস্তিষ্কের স্ক্যান করার জন্য, সেটি তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিক ও তামা দিয়ে। তামা তড়িতের সুপরিবাহী।
গবেষকরা এই দু’টি পদার্থ দিয়ে দু’ধরনের মেটামেটিরিয়াল বানিয়েছেন। একটি— অ্যাকুস্টিক মেটামেটিরিয়াল। যা বায়ুপ্রবাহের পথ-রোধ না করে শব্দতরঙ্গকে নিজের ইচ্ছেমতো বাঁকাতে পারে, শুষে নিতে পারে, সেই তরঙ্গের ওঠা-নামাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অন্যটি, ম্যাগনেটিক মেটামেটিরিয়াল। যা সেই কাজগুলিই করে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের ক্ষেত্রে।
গবেষকদের উদ্ভাবিত প্লাস্টিক ও তামা দিয়ে বানানো ম্যাগনেটিক মেটামেটিরিয়াল মস্তিষ্কের স্ক্যানে ব্যবহৃত এমআরআই যন্ত্রের চেয়ে কাজ করতে পারে দ্বিগুণ গতিতে। অনেক নিখুঁত, গভীরতর ছবি তুলতে পারে মস্তিষ্কের। আর তা খুব অল্প সময়ে করতে পারে। প্রক্রিয়াটিও এমআরআই যন্ত্রের মতো জটিল নয়। মস্তিষ্কের স্ক্যান করার জন্য এই যন্ত্র খরচ ও সময় দুই-ই কমাবে বলে গবেষণাপত্রে দাবি করেছেন উদ্ভাবকরা।