-ফাইল ছবি।
কয়েকটি ব্যায়াম, জগিং, জোরে হাঁটা বা দৌড়। অন্তত টানা দেড় ঘণ্টার। কোভিডের টিকা নেওয়ার পর টানা এক মাস এই সব অভ্যাস বজায় রাখা গেলে ওমিক্রন, ডেল্টা-সহ করোনাভাইরাসের সবক’টি রূপের বিরুদ্ধেই লড়াই করার জন্য আরও বেশি পরিমাণে, আরও অল্প সময়ে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায় মানবদেহে। টিকার সবক’টি পর্ব শেষ হওয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার জন্য মানবদেহকে আর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না করোনাভাইরাসের হানাদারির মোকাবিলা করতে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ব্রেন, বিহেভিয়ার অ্যান্ড ইমিউনিটি’-তে।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, শুধু কোভিডের ক্ষেত্রেই নয়, ব্যায়াম, জগিং, জোরে হাঁটা বা দৌড়ের এই অভ্যাস ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেওয়ার পরেও এক মাসের মধ্যেই মানবদেহে অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে উল্লেখযোগ্য হারে। খুব দ্রুত গতিতে।
ইনফ্লুয়েঞ্জার উন্নত মানের বিভিন্ন টিকার পাশাপাশি কোভিডের সবচেয়ে শক্তিশালী এমআরএনএ টিকা নেওয়ার পর এই ব্যায়ামের অভ্যাস মানবদেহে আরও অল্প সময়ে আরও বেশি পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে কতটা কার্যকরী হয়, তা নিয়ে গবেষণা চালান আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষকরা।
গবেষকরা দেখেছেন, ফ্লু বা কোভিডের টিকা নেওয়ার পর টানা এক মাসের এই সব ব্যায়ামের অভ্যাস প্রতি দিন দেড় ঘণ্টা ধরে করলেই মানবদেহে তৈরি হয় অনেক বেশি পরিমাণে অ্যান্টিবডি। এই ব্যায়ামের অভ্যাস প্রতি দিন ৪৫ মিনিটের হলে মানবদেহে অ্যান্টিবডি ততটা তৈরি হয় না। তা তৈরি হতে সময়ও লাগে বেশি।
গবেষকরা দেখেছেন, ফাইজারের এমআরএনএ কোভিড টিকার দু'টি পর্বের পর মানবদেহে যে সময়ে যে পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় ওমিক্রন, ডেল্টা-সহ করোনাভাইরাসের সবক’টি রূপের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য, ওই টিকা নেওয়ার পরের দিন থেকেই রোজ যদি কেউ দেড় ঘণ্টা ধরে টানা এক মাস ব্যায়াম, জগিং করেন বা নিয়মিত জোরে হাঁটাহাঁটি করেন বা দৌড়ন তা হলে তাঁদের দেহে আরও অল্প সময়ে তৈরি হয়ে যায় অ্যান্টিবডি। টিকা যতটা অ্যান্টিবডি তৈরি করে তার চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে। ফলে, এই এক মাসের ব্যায়ামের অভ্যাস কোভিড টিকা নেওয়ার পর সংক্রমণকে রোখার জন্য আরও বেশি সক্ষম করে তোলে মানবদেহকে। গবেষকরা দেখেছেন, টানা দেড় ঘণ্টার ব্যায়ামের অভ্যাসে হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে মিনিটে হয় ১২০ থেকে ১৪০।
ব্যায়ামে কেন বাড়ে অ্যান্টিবডির পরিমাণ? কেন বাড়ে অল্প সময়ে?
মূল গবেষক আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইনেসিওলজির অধ্যাপক মারিয়ান কোহুত বলেছেন, ‘‘এর নানা কারণ থাকতে পারে। সম্ভাব্য একটি কারণ— ব্যায়ামের ফলে মানবদেহে রক্ত ও লসিকার সংবহন মসৃণ হয়। গতি পায় সেই সংবহন। তার ফলে, দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলি দেহের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যেতে পারে। তাই দেহের যে কোনও জায়গায় বহিঃশত্রুর হানাদারির খবর পেতে মানবশরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার দেরি হয় না।’’