করোনাভাইরাস। -ফাইল ছবি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে ভারতেই নোভেল করোনাভাইরাস রূপ বদলাচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত হারে। বদলাচ্ছে আচার, আচরণ। মানুষের ফুসফুসকে পুরোপুরি অচল করে দেওয়ার কায়দা কৌশলগুলি বদলে ফেলছে দ্রুত হারে। তার জন্য নিজেদের দেহে থাকা এমন কয়েকটি প্রোটিনকে ব্যবহার করছে নোভেল করোনাভাইরাস, যাদের কথা আগে সবিস্তারে জানা ছিল না। ভাইরাসের দেহে নতুন এমন ১৩টি প্রোটিন খুঁজে পেলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। তারা কী ভাবে কাজকর্ম করে মানুষের শরীরে তা-ও দেখাতে পারলেন ভারতীয়রা। বিশ্বে এই প্রথম। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়াই চালাচ্ছে মানুষের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে আশ্রয়দাতাদের শরীরে ৪৪১টি নতুন প্রোটিনও আবিষ্কার করেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।
ভারতে বিজ্ঞান গবেষণায় অগ্রগণ্য প্রতিষ্ঠান বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স' (আইআইএসসি)-এর একটি সাম্প্রতিক গবেষণা এ কথা জানিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অব প্রোটিয়ম রিসার্চ’-এ। গবেষণাটি চালানো হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রযুক্তিতে। যার নাম- ‘প্রোটিও-জিনোমিক ইনভেস্টিগেশন’। তার আরও একটি নাম রয়েছে-- ‘নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং' (এনজিএস)।
গবেষকদলের প্রধান আইআইএসসি-র বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক উৎপল টাটু ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে বলেছেন, ‘‘বেঙ্গালুরুতে আমরা নোভেল করোনাভাইরাসের যে নতুন ৩টি রূপ খুঁজে পেয়েছি করোনা রোগীদের হাঁচি, কাশি থেকে তাদের জিনোমে ইতিমধ্যেই ২৭ বার মিউটেশন হয়ে গিয়েছে। তার মানে করোনাভাইরাসের ওই রূপগুলিও ২৭ বার রূপ বদলেছে। অর্থাৎ, করোনাভাইরাসের ওই ৩টি রূপের প্রতিটি গড়ে ১১ বার করে রূপ বদলে নিয়েছে। বদলে নিয়েছে তাদের আচার আচরণ, মানুষের ফুসফুসকে আক্রমণ করার কায়দা কৌশলও।’’
উৎপল জানাচ্ছেন, তাঁদের গবেষণাই প্রথম জানাল ভারতে এখন আগের চেয়ে অনেক দ্রুত হারে নোভেল করোনাভাইরাস তার রূপ বদলাচ্ছে। এই হার বিশ্বের গড় হারের চেয়ে অনেকটাই বেশি।
উৎপলের কথায়, ‘‘বেঙ্গালুরু থেকে পাওয়া নোভেল করোনাভাইরাসের নতুন ৩টি রূপের জিনোমে মিউটেশন যদি গড়ে ১১ বার করে হয় তা হলে তা গোটা ভারতে হচ্ছে গড়ে ৮.৪ বার করে। আর গোটা বিশ্বে সেই হার ৭.৩।’’
বেঙ্গালুরুতে আইআইএসসি-র গবেষকরা নোভেল করোনাভাইরাসের নতুন ৩টি রূপের হদিশ পাওয়ার পর বিশ্বের অন্য কোনও দেশে তাদের জ্ঞাতিগোষ্ঠীরা আছে কি না তা জানারও চেষ্টা করেছিলেন।
উৎপল ও আর এক গবেষক ছাত্র শীতল তুষির বলছেন, ‘‘এটা জানতে আমরা একটি ‘গ্লোবাল ফাইলোজেনেটিক ট্রি’ বানিয়েছিলাম। যাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনাভাইরাসের বংশলতিকাও বলা যায়। তাতে দেখেছি, বেঙ্গালুরু থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসের ৩টি রূপের সঙ্গে যথেষ্টই সাদৃশ্য রয়েছে বাংলাদেশের করোনাভাইরাসের রূপগুলির। বাকি ভারতে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের রূপগুলি কোনও বিশেষ দেশ থেকে আসেনি। তারা এসেছে ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে।’’
শুধু তা-ই নয়, উৎপল, শীতল ও তাঁদের সহযোগীরা বেঙ্গালুরু থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ৩টি রূপের জিনোমে এমন নতুন ১৩টি প্রোটিনের হদিশ পেয়েছেন, যাদের কথা বিশ্বের কোথাও জানা ছিল না এর আগে।
উৎপলের কথায়, ‘‘এই প্রোটিনগুলির হদিশ পাওয়ায় এ বার ভাইরাসটি কী ভাবে আমাদের শরীরে ঢুকে হামলা চালাচ্ছে ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে একটি কোষ থেকে অন্য কোষে, তাদের অকেজো করে মেরে ফেলছে সেটা বোঝার কাজ সহজতর হবে।’’
তাদের মধ্যে একটি প্রোটিনের নাম- ‘ওআরএফ৯বি’। এই প্রোটিনটি কী ভাবে মানুষের শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলিকে অকেজো করে মেরে ফেলছে এই প্রথম তার প্রতিটি ধাপও দেখাতে পেরেছেন আইআইএসসি-র গবেষকরা।