মঙ্গলে নামার আগে, পরে এই ছবিগুলি পাঠিয়েছে নাসার রোভার পারসিভের্যান্স। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময়)। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
লাল গ্রহের বুকে ঠিক কী ভাবে পালকের মতো আলতো পা ছোঁয়াতে পারল নাসার রোভার ‘পারসিভের্যান্স’, তার তাকলাগানো ছবি পাঠিয়েছে সে নামার অব্যবহিত আগেই। মঙ্গলে নামার সময় এমন ছবি এর আগে আর কোনও মহাকাশযানই তুলে পাঠাতে পারেনি। নামার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আবারও এল নতুন ছবি।
শুক্রবার নাসা তিনটি ছবি প্রকাশ করেছে নিজস্ব ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে।
তাদের একটিতে দেখানো হয়েছে মঙ্গলের মাটিতে ছড়ানো রয়েছে একগুচ্ছ কেব্ল বা তার। যেগুলি নাসার মহাকাশযানেই ছিল। লাল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে নাসার মহাকাশযান ঢোকার পর সেখান থেকে প্যারাসুটে গা ভাসিয়ে গতিবেগ কমাতে কমাতে একেবারে শূন্যে নিয়ে এসে নাসার ল্যান্ডার ও তার ভিতরে থাকা রোভার পারসিভের্যান্সকে মঙ্গলের বুকে অবিকল পালকের মতো পা ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে ওই একগুচ্ছ কেব্লই। তাদের জন্যই নিরাপদে মঙ্গলে নামতে পেরেছে নাসার ল্যান্ডার ও রোভার।
নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলে নামার সময় কোনও স্টিল (স্থির) ছবি পাঠায়নি মহাকাশযান। পাঠিয়েছে বেশ কিছু ক্ষণের কয়েকটি ভিডিয়ো। সেখান থেকেই স্টিল ছবিটি কেটে নিয়ে নাসা শুক্রবার প্রকাশ করেছে।
ঠিক কোন মুহূর্তে এই ছবি তুলেছিল মহাকাশযান? নাসার এ বারের মঙ্গল অভিযানের মূল কাণ্ডারি চিফ ইঞ্জিনিয়র অ্যাডাম স্টেলটজ্নার শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে বলছেন, ‘‘ছবি দেখে মনে হচ্ছে মঙ্গলের পিঠ (‘সারফেস’) থেকে যখন মাত্র ২ মিটার বা ৬ ফুট উপরে ছিল মহাকাশযান, তখনই এটি তোলা হয়েছিল। নামার সময় মহাকাশযানের জন্য মঙ্গলের মাটি থেকে ধুলোও উড়তে দেখা গিয়েছে।’’
মঙ্গলে নামার প্রাক মুহূর্তে এই ছবি পাঠিয়েছিল নাসার রোভার পারসিভের্যান্স। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময়)। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
স্টেলটজ্নার জানিয়েছেন ছবিতে যে ৩টি সাদা রঙের সরলরেখা দেখা যাচ্ছে সেগুলি আসলে যান্ত্রিক নোঙর। এইগুলিই রোভারকে লাল গ্রহের বুকে নিরাপদে ধীরে ধীরে পালকের মতো পা ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে। ছবির উপরের দিকে দড়ির মতো যে কেব্ল বা তারগুলি দেখা যাচ্ছে, সেগুলির কাজ ছিল ভিন্ন। নামার সময় এলাকার কোথায় কতটা খানাখন্দ, কোথায় কতটা সমতল সে সম্পর্কে ক্যামেরায় তোলা ছবি ও তথ্যাদি ল্যান্ডার ও রোভার পারসিভের্যান্সকে পাঠানো হয়েছে ওই দড়ির মতো কেব্লগুলি দিয়েই। অবতরণের পর এই ২১ ফুট (বা ৬.৪ মিটার) লম্বা কেব্লগুলিকে নিজেই কেটে দিয়েছিল নাসার ল্যান্ডার।
একই সঙ্গে নাসার তরফে প্রকাশ করা হয়েছে আরও দু’টি তাকলাগানো ছবি। লাল গ্রহে নামার ঠিক আগের ও পরের মুহূর্তে সেই ছবিগুলি তুলেছিল নাসার ল্যান্ডার তার মাথার উপরে থাকা সুপারক্যামে। প্রতিটিই হাই রেজোলিউশন ছবি। এর আগে শুক্রবার ভোরেই (ভারতীয় সময়) মহাকাশযানের পাঠানো মঙ্গলের প্রথম ছবি প্রকাশ করেছিল নাসা।প্যারাসুটে গা ভাসিয়ে মঙ্গলের বুকে নামতে নাসার ছ’চাকার মহাকাশযানটিকে সাহায্য করেছিল একটি ‘স্কাই ক্রেন’। মঙ্গলের আকাশে স্কাই ক্রেনের সেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সময় মহাকাশযানের গতিবেগ কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছিল ঘণ্টায় মাত্র ১.৭ মাইল বা ২.৭ কিলোমিটারে।
মঙ্গলে পা ছোঁয়ানোর সময় এই ছবি পাঠিয়েছিল নাসার রোভার পারসিভের্যান্স। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময়)। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
৪৯ কিলোমিটার ব্যাসের সুবিশাল গহ্বর ‘জেজোরো ক্রেটার’-এ নিরাপদে অবতরণের আগে রোভার পারসিভের্যান্সের উপর মঙ্গলের কক্ষপথ থেকে নজর রেখেছিল প্রদক্ষিণরত নাসার মহাকাশযান ‘মার্স রিকনাইস্যান্স অরবিটার (এমআরও)’। সেই সময়ই মঙ্গলের বিস্তীর্ণ এলাকার ছবি তোলে এমআরও।
মঙ্গলে পা ছুঁইয়েই এই ছবি তুলেছিল নাসার রোভার। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
নাসা জানিয়েছে, পরের ছবিটি নাসার ল্যান্ডার তুলেছিল নামার অব্যবহিত পরেই। যে পাথরগুলিকে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে লাল গ্রহের পিঠে, সেগুলির বয়স কম করে ৩৬০ কোটি বছর।