nasa

NASA: লক্ষ্য গ্রহাণু, মহাকাশে ডার্ট ‘ছুড়ে দিল’ নাসা

নাসার এ ধরনের পরীক্ষা এই প্রথম। নিশানায় থাকা গ্রহাণুটির উপর আছড়ে পড়ে তার গতিপথ বদলে দেবে নাসার মহাকাশযানটি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৫২
Share:

ক্যালিফর্নিয়ার ভ্যাডেনবার্গ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ফ্যালকন-৯ রকেটে মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছে নাসার ‘ডার্ট’ বা ‘ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডায়রেকশন টেস্ট’ স্পেসক্রাফ্ট। পিটিআই।

‘৩,২,১... লিফ‌্ট অফ’ — ঘোষিকার কথা শেষ হতে না-হতেই গত কাল রাতের অন্ধকারে আকাশের বুক চিরে মহাশূন্যে পাড়ি দিল নাসার ‘ডার্ট’। কোনও গ্রহ, উপগ্রহ এর গন্তব্য নয়। বরং আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের ‘ছোড়া’ এই ‘ডার্ট’ সোজা গিয়ে আছড়ে পড়বে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা একটি গ্রহাণুতে। বদলে দেবে তার গতিপথ। অভিযানের নাম— ‘ডার্টমিশন’।

Advertisement

কিন্তু কেন এমন অভিযান?

কোটি কোটি বছর আগের কথা। পৃথিবীতে তখন রাজত্ব করত ডাইনোসরেরা। হঠাৎই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তারা। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, এ সময়ে একটি গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীতে। তাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল প্রাগৈতিহাসিক প্রজাতিটি। আবার যদি এমন কিছু হয়? ভবিষ্যতে ফের যদি কোনও গ্রহাণু আছড়ে পড়ে পৃথিবীর মাটিতে! এমন কিছু ঘটলে, এখনও পর্যন্ত তাকে প্রতিরোধ করার কোনও ক্ষমতা বিজ্ঞানীদের জানা নেই। এই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই নতুন অভিযানে নামল আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। পুরোটাই এখন পরীক্ষামূলক অভিযান। নাসার এ ধরনের পরীক্ষা এই প্রথম। নিশানায় থাকা গ্রহাণুটির উপর আছড়ে পড়ে তার গতিপথ বদলে দেবে নাসার মহাকাশযানটি।

Advertisement

মঙ্গলবার ক্যালিফর্নিয়ার ভ্যাডেনবার্গ মহাকাশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ইস্টার্ন স্ট্যানডার্ড টাইমে রাত ১টা ২৩ মিনিটে ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে ‘ডার্ট’ বা ‘ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডায়রেকশন টেস্ট’ স্পেসক্রাফ্ট। ঘণ্টায় প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার গতিবেগে চলা গাড়ির আকারের মহাকাশযানটি আছড়ে পড়বে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা একটি গ্রহাণুতে। তার এই প্রবল ধাক্কায় বদলে যাবে গ্রহাণুটির চলার পথ। একে বারে ‘কাইনেটিক ইমপ্যাক্ট’। পৃথিবীর নিরাপত্তায় বেছে নেওয়া হয়েছে এই প্রতিরক্ষা পদ্ধতি।

এ প্রায় যুদ্ধ ঘোষণা। নাসা টুইট করেছে— ‘‘ডাইমরফোস গ্রহাণু: আমরা আসছি তোমার খোঁজে।’’ তাদের ডার্টের লক্ষ্য হল ডাইমরফোস। ৫২৫ ফুট চওড়া ডাইমরফোসের উপরে আছড়ে পড়বে ডার্ট। তার পর কক্ষপথ থেকে সামান্য সরিয়ে দেবে তাকে। এই ডাইমরফোস আবার প্রদক্ষিণ করছে তার থেকে বহু বড় গ্রহাণু ডিডাইমসকে (২৫০০ ফুট ব্যাস)। দু’টি গ্রহাণু একত্রে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। বলা হয়, ডিডাইমসের ‘মুনলেট’ (উপগ্রহের মতো) হল ডাইমরফোস।

এই দুই গ্রহাণু অবশ্য পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর নয়। সবটাই করা হচ্ছে পরীক্ষামূলক ভাবে। তবে এরা ‘নিয়ার আর্থ অবজেক্টস’ গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে। পৃথিবীর চারপাশে ৩ কোটি মাইলের মধ্যে কোনও মহাজাগতিক পদার্থ চলে এলেই তাকে এই গোষ্ঠীতে ফেলা হয়। সেখানে এই দুই গ্রহাণু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে পৃথিবীর থেকে ৬৮ লক্ষ মাইল বা ১ কোটি ১০ লক্ষ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসবে। তখন তাদের উপরে হামলা চালাবে ডার্ট। পৃথিবী থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র ও প্ল্যানেটারি রেডার মারফত নজর রাখা হবে গোটা পর্বে।

এই পরীক্ষাটি করে দেখা হবে, যদি ভবিষ্যতে কোনও গ্রহাণু বা মহাজাগতিক পদার্থ পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, এই প্রযুক্তিতে তাকে সফল ভাবে প্রতিরোধ করা যাবে, কি না। নাসার শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী টমাস জ়ুবারচেন বলেন, ‘‘বিপদকে কী করে রাস্তা থেকে হটানো যায়, তার পদ্ধতি শেখার চেষ্টা করছি আমরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement