পৃথিবীর এই ব্ল্যাক বক্স বসানো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার টাসমানিয়া দ্বীপে। ছবি- ‘আর্থ’স ব্ল্যাক বক্স’ ওয়েবসা্ইটের সৌজন্যে।
পৃথিবীর শেষের সে দিনগুলিতে কী কী ঘটনা ঘটেছিল তা যদি কোনও পরবর্তী প্রজন্ম বা সৌরমণ্ডলের ভিন্ মুলুক থেকে আসা কেউ কখনও যাতে জানতে পারেন তার জন্য অস্ট্রেলিয়ার টাসমানিয়া দ্বীপে বসানো হচ্ছে বিশাল আকারের একটি ‘ব্ল্যাক বক্স’। যা কোনও ভাবেই ধ্বংস করা সম্ভব নয়।
একেবারে বিমানের ব্ল্যাক বক্সের মতো। বিমান ভেঙে পড়লে যেমন সেই ব্ল্যাক বক্স ভেঙে জানা যায় শেষ মুহূর্তে কী কী নির্দেশ দিয়েছিল। গ্রাউন্ড কন্ট্রোল বা পাইলটের সঙ্গে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের ঠিক কী কী কথাবার্তা হয়েছিল, কী ভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বিমানটিকে আর কেনই বা বাঁচানো যায়নি।
পৃথিবীর সেই ব্ল্যাক বক্সের ওয়েবসাইট জানিয়েছে, আগামী বছরের গোড়ার দিকেই টাসমানিয়ার কোনও এক দুর্গম জায়গায় বসানো হবে সেই বিশাল আকারের ব্ল্যাক বক্স। যা ইতিমধ্যেই বানিয়ে ফেলা হয়েছে পুরু ইস্পাত দিয়ে। তবে ঠিক কোথায় সেটিকে বসানো হবে তা গোপন রাখা হবে।
পৃথিবীতে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি রুখতে বিজ্ঞানীরা যা যা ব্যবস্থা নিচ্ছেন উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের গতিতে লাগাম পরানোর জন্য আর তার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে সব রাষ্ট্রনেতার কর্মকাণ্ড, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত তার যাবতীয় রেকর্ড একেবারে রিয়েল টাইমে ধরা থাকছে সেই ব্ল্যাক বক্সে। যার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে সৌরশক্তিতে চলা হার্ড ড্রাইভগুলি দিয়ে। যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েক বছর আগেই বসানো হয়েছে খুব গোপনে। যাতে কাকপক্ষীতেও টের না পায়।
পৃথিবীর এই ব্ল্যাক বক্সটি বানিয়েছে টাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আরও দুটি সংস্থা— ‘ক্লেমেঙ্গার বিবিডিও’ এবং ‘দ্য গ্লু সোসাইটি’র সহযোগিতায়।
ব্ল্যাক বক্সের ওয়েবসাইট জানিয়েছে, উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের কোন কোন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, কী হারে বেড়ে চলেছে পরিবেশ দূষণের মাত্রা, আর সেই সবের কী কী প্রভাব পড়ছে এই প্রজন্মের মানুষের স্বাস্থ্যে, অর্থনীতিতে, সেই সব তথ্যই এতে ধরা থাকবে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর এই ব্ল্যাক বক্স বানানো হয়েছে অনেকটা নরওয়ের সেই ‘ডুম্সডে ভল্ট’-এর আদলেই। যেখানে পৃথিবীর শেষের সে দিনের জন্য বানিয়ে রাখা হয়েছে একটি সুবিশাল দুর্গ। যার ভিতরে মজুত করা হয়েছে বিপুল পরিমাণে নানা ধরনের শস্যবীজ। আর নিয়মিত ভাবে সেখানে প্রয়োজনীয় শস্যবীজের সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মহাসাগরগুলির উপরিতল উঠে আসায় বিভিন্ন দেশ, মহাদেশ জলমগ্ন হয়ে পড়লে শস্য উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ না হয়ে গিয়ে সভ্যতার একাংশকে অনাহারের হাত থেকে কিছুটা হলেও বাঁচানো যায়।