আইনস্টাইনের হাতে লেখা বিরল পাণ্ডুলিপি বিকোল প্যারিসে ক্রিস্টিজ-এর নিলামে। রেকর্ড মূল্যে। মঙ্গলবার। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
ডাস্টবিনে নানা আবর্জনার ভিড়ে হারিয়ে যায়নি চিরতরে। হাতে লেখা যাবতীয় গাণিতিক সমীকরণ আর তাদের সমাধান, বহু অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি তো ডাস্টবিনেই ফেলে দিতেন তিনি। সেটাই ছিল তাঁর অভ্যাস।
আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের একেবারে গোড়ার দিককার হাতে লেখা এই পাণ্ডুলিপিটি কিন্তু বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছিল। ১০৮ বছর আগে। আইনস্টাইনের এক অকৃত্রিম বন্ধুর সুবাদে। সেই পাণ্ডুলিপিই ছিল আইনস্টাইনের সাড়াজাগানো সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের উৎস।
আইনস্টাইনের সেই হাতে লেখা বিরল পাণ্ডুলিপি বিকোল প্যারিসে ক্রিস্টিজ-এর নিলামে। রেকর্ড মূল্যে। এক কোটি ৩০ লক্ষ ডলারে। মঙ্গলবার। ভারতীয় মুদ্রায় ৯৬ কোটি ৭৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকায়।
৫৪ পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপিটির পুরোটাই হাতে লেখা। যার মধ্যে ২৬ পাতা ধরে লিখেছিলেন আইনস্টাইন। ১৯১৩ সালের জুনে, জুরিখে বসে। আর ২৫ পাতা জুড়ে লিখেছিলেন তাঁর অকৃত্রিম বন্ধু সুইৎজারল্যান্ডের প্রযুক্তিবিদ মিশেল বেসো। সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে সেই সময় জুরিখে আইনস্টাইনের সঙ্গে বসে যিনি নানা গাণিতিক সমস্যার জট খোলার নেশায় বুঁদ হয়ে ছিলেন। আইনস্টাইন ও বেসোর যে সব গাণিতিক সমীকরণ ও তাদের সমাধান রয়েছে সেই পাণ্ডুলিপিতে তা যদিও ছিল ভুলে ভরা। ফলে, সেই গাণিতিক সমীকরণগুলি যে তাঁকে লক্ষ্য পৌঁছে দেবে না তা বুঝতে পেরেছিলেন আইনস্টাইন। কিছুটা হতোদ্যম হয়ে ইটালিতে তাঁর বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন বেসো। পরে জুরিখে বসেই অন্য পথ ধরে এগিয়ে অন্যান্য গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছে যান আইনস্টাইন। একাই। যার প্রেক্ষিতে ১৯১৫-র নভেম্বরে প্রকাশিত হয় আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ। যা ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে সেই সময়ের যাবতীয় ধ্যানধারণাই বদলে দেয়। ছ’বছর পর ১৯২১-এ নোবেল পুরস্কার পান আইনস্টাইন।
ইটালিতে ফিরে গিয়ে গাণিতিক সমীকরণগুলির কোথায় ভুল তা খোঁজা আর সেগুলি শুধরনোর চেষ্টা করেছিলেন বেসোও। পারেননি। তিনি হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু সঙ্গে রেখে দিয়েছিলেন আইনস্টাইন ও তাঁর হাতে লেখা সেই ৫৪ পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপি। মৃত্যুর আগে সেই পাণ্ডুলিপি তাঁর পুত্র ভেরোর হাতে তুলে দিয়ে যান বেসো। ভেরো তা পরে তুলে দেন আইনস্টাইন ও বেসোর হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির সম্পাদক পিয়েরি স্পেজিয়ালির হাতে। পরে আইনস্টাইনের গবেষণাপত্রগুলির সংগ্রহ প্রকাশের সময় স্পেজিয়ালি ওই পাণ্ডুলিপি তুলে দেন প্রকাশকের হাতে। ৭৬ বছর বয়সে ১৯৫৫-য় মৃত্যু হয় আইনস্টাইনের।
আইনস্টাইনের সেই হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির ৫৪ পৃষ্ঠার একাংশ। ছবি - টুইটারের সৌজন্যে।
ক্রিস্টিজ-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘‘সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের একেবারে গোড়ার দিকের যে দু’টি হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির হদিশ মিলেছে এটি তার একটি। নিলামে চড়ানোর আগে অনুমান করা হয়েছিল এর মূল্য দাঁড়াতে পারে ২৪ লক্ষ থেকে ৩৫ লক্ষ ডলারের মধ্যে। কিন্তু যাবতীয় অনুমান ভুল প্রমাণ করে তার চার গুণ বেড়ে যায় নিলামের অন্তিম পর্যায়ে। ফি-বাবদ পাণ্ডুলিপিটি বিক্রি হয় এক কোটি ৩০ লক্ষ ডলারে। আইনস্টাইনের লেখা আর কোনও পাণ্ডুলিপির নিলামে এতটা দর চড়েনি এর আগে। আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত ‘গড লেটার’ ২০১৮-য় নিলামে বিকিয়েছিল ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২০ কোটি টাকায়। আর ২০১৯-এ আইনস্টাইনের লেখা ‘লেটার অ্যাবাউট দ্য সিক্রেট টু হ্যাপিনেস’ নিলামে বিকিয়েছিল ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকায়। ’’