Science News

বৃহস্পতির সেই প্রলয় ঝড় আজ কাছ থেকে দেখবে নাসার যান

কেন গত সাড়ে ৩০০ বছর ধরে তুমুল ঝড় বয়ে চলেছে বৃহস্পতির পিঠে সুবিশাল একটা এলাকা জুড়ে, এই প্রথম এত কাছ থেকে তাকে বোঝা, তার কারণ খোঁজার সুযোগ পেল মানব সভ্যতা। ঠিক এক বছর আগেই জুনো ঢুকে পড়েছিল বৃহস্পতির পাড়ায়! ‘গুরুগ্রহ’-এর সবচেয়ে কাছে পৌঁছনোর ‘সাহস দেখিয়েছিল’!

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০৯:৩০
Share:

বৃহস্পতির সেই গ্রেট রেড স্পট! -ছবি: নাসা।

প্রত্যাশা মতোই গত কয়েক শতাব্দীর রহস্যের জট খুলতে বৃহস্পতির সেই গ্রেট রেড স্পটের উপর নজরদারি শুরু করে দিল নাসার মহাকাশযান জুনো।

Advertisement

কেন গত সাড়ে ৩০০ বছর ধরে তুমুল ঝড় বয়ে চলেছে বৃহস্পতির পিঠে সুবিশাল একটা এলাকা জুড়ে, এই প্রথম এত কাছ থেকে তাকে বোঝা, তার কারণ খোঁজার সুযোগ পেল মানব সভ্যতা। ঠিক এক বছর আগেই জুনো ঢুকে পড়েছিল বৃহস্পতির পাড়ায়! ‘গুরুগ্রহ’-এর সবচেয়ে কাছে পৌঁছনোর ‘সাহস দেখিয়েছিল’!

সেই জুনোই এ বার আরও বেশি ‘দুঃসাহসী’ হল মঙ্গলবার সাতসকালে (ভারতীয় সময় সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে)। সাড়ে ৩০০ বছর ধরে চলা বৃহস্পতির সেই প্রলয়ঙ্কর ঝড় পৃথিবী থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চোখে প্রথম ধরা পড়েছিল আজ থেকে ১৮৭ বছর আগে, ১৮৩০ সালে। এমন প্রলয়ঙ্কর, এত দীর্ঘমেয়াদী ঝড় এখনও পর্যন্ত এই সৌরমণ্ডলের আর কোথাও, অন্য কোনও গ্রহ বা কোনও ভিন মুলুকে দেখা যায়নি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতির এই প্রলয়ঙ্কর ঝড়টার নাম দিয়েছেন ‘গ্রেট রেড স্পট’ (জিআরএস)। যা দেখতে দগদগে লাল ক্ষতের মতো! অ্যারিজোনা থেকে রবিবার আনন্দবাজারকে টেলিফোনে এই খবর দিয়েছেন নাসার ‘জুনো মিশন’-এর অন্যতম কার্যনির্বাহী সদস্য, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের এমেরিটাস প্রফেসর ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

ধ্রুবজ্যোতিবাবুর কথায়, ‘‘এই প্রলয়ঙ্কর ঝড়টা খুব একটা অল্প এলাকা জুড়ে হচ্ছে না। সেই এলাকাটা কম করে ১০ হাজার বর্গ মাইল বা ১৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার! এত বিশাল একটা এলাকা জুড়ে সেই প্রলয়ঙ্কর ঝড়টা বয়েই চলেছে বৃহস্পতির পিঠে গত সাড়ে ৩০০ বছর ধরে। কিন্তু কেন সেই ঝড়টা বয়ে চলেছে এত দিন ধরে, এতটা বিশাল এলাকা জুড়ে, এত দিন তার বিন্দুমাত্র কারণও জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এর আগে কোনও মহাকাশযানই ‘গুরুগ্রহ’-এর ওই প্রলয়ঙ্কর ঝড়ের এত কাছাকাছি পৌঁছনোর সাহস দেখাতে পারেনি বলে।’’

নাসার এ বারের মহাকাশযান জুনোর ‘ভয়ডর’ কম। গত বছরের ৪ জুলাই রীতিমতো বুক ফুলিয়ে জুনো বৃহস্পতির সবচেয়ে কাছে পৌঁছে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছিল। তার পর ধীরে ধীরে সে আরও কাছে গিয়েছে ‘গুরুগ্রহ’-এর। পাশ দিয়ে বৃহস্পতিকে চক্কর মারতে মারতে গত এক বছরে আরও পাঁচ বার সে খুব কাছাকাছি এসেছে ‘গুরুগ্রহ’-এর। যেন ‘গুরু’কে অনেকটাই ছুঁতে পেরেছে! আর এ বার সাতসকালে জুনো পৌঁছে যাবে বৃহস্পতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর সেই ‘গ্রেট রেড স্পট’-এর সবচেয়ে কাছাকাছি। ওই সময় জুনো থাকবে বৃহস্পতির মেঘ-রাজ্যের শীর্ষবিন্দু থেকে ঠিক ২ হাজার ২০০ মাইল বা সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার ওপরে। চাট্টিখানি কথা! ওই প্রলয়ঙ্কর ঝড়ের অতটা কাছে যাওয়ার সাহস দেখানো কি মুখের কথা?

আরও পড়ুন- নিজের সন্তান নিজেই গিলে খাচ্ছে বিশাল একটা তারা, উবে যাচ্ছে গ্রহ!

শুধু তাই নয়, ধ্রুবজ্যোতিবাবু জানাচ্ছেন, মাত্র ১১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড সময়ের মধ্যেই জুনো ১০ হাজার বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে বয়ে চলা বৃহস্পতির ওই প্রলয়ঙ্কর ঝড়ের প্রায় অর্ধেকটাই জরিপ করে নিতে পারবে, চক্কর মারতে মারতে। জুনোক্যাম সহ তার ৮টি গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম নিয়ে।

ছবি ও ভিডিও সৌজন্যে: নাসা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement