আটটি উপগ্রহ নিয়ে মহাকাশে নয়া উচ্চতায় ভারত

এক রকেট, দুই রুট। বাঁচল তেল, বাঁচল খরচ। সস্তায় মহাকাশে উপগ্রহ পাঠানোর দৌড়ে আর এক বড় লাফ ভারতের। মোট আটটি উপগ্রহ নিয়ে আজ সকালে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল ভারতের পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্‌ল বা পিএসএলভি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শ্রীহরিকোটা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৩
Share:

সফল উৎক্ষেপণ। আটটি উপগ্রহ নিয়ে মহাকাশে পাড়ি পিএসএলভি সি৩৫-র। সোমবার শ্রীহরিকোটা থেকে। ছবি: পিটিআই

এক রকেট, দুই রুট। বাঁচল তেল, বাঁচল খরচ। সস্তায় মহাকাশে উপগ্রহ পাঠানোর দৌড়ে আর এক বড় লাফ ভারতের। মোট আটটি উপগ্রহ নিয়ে আজ সকালে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল ভারতের পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্‌ল বা পিএসএলভি। আর তাদের মধ্যেই রয়েছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী এ দেশের উপগ্রহ স্ক্যাটস্যাট। সেই উপগ্রহগুলি দু’টি ভিন্ন কক্ষপথে স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে বলেই জানিয়েছে ইসরো।

Advertisement

সম্প্রতি ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ভেগা রকেটও এক সঙ্গে একাধিক কক্ষপথে উপগ্রহ স্থাপনের কৃত্বিত্ব অর্জন করেছে। ফলে ভারত এখন সেই তালিকায়, যারা একই অভিযানে একের বেশি কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠাতে পারে।

অধিকাংশ দেশই শুধু একটি কক্ষপথেই উপগ্রহ পৌঁছতে পারে। একাধিক উপগ্রহ পাঠালেও, সব ক’টি বসে একই কক্ষপথে। কিন্তু যদি আরও একটা কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠাতে হয়, তা হলে চাই আরও একটি রকেট। সুতরাং বাড়বে খরচ। দুই কক্ষপথে এক বারে উপগ্রহ পাঠিয়ে ভারত সেই বাধাই অতিক্রম করল এ বার। সস্তায় মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর বাণিজ্যে ভারত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে। এর জন্য ইসরোর বাণিজ্যিক শাখা ‘অ্যানট্রিক্স’ রয়েছে। উন্নত দেশগুলির অনেকেই তাই উৎক্ষেপণের দায়িত্ব ভারতকেই দিয়ে থাকে। এ বার একই গাড়িতে চাপিয়ে দু’টি ভিন্ন কক্ষপথে যাত্রীদের পৌঁছে দেওয়ার পর ভারতের মহাকাশ বাণিজ্য আরও লক্ষ্মীলাভ করবে বলেই আশা করছেন অ্যানট্রিক্স কর্তারা।

Advertisement

আজ সকাল ৯টা ১২ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে উপগ্রহগুলি নিয়ে মহাকাশে রওনা দেয় পিএসএলভি সি-৩৫ রকেট। মোট ৮টি উপগ্রহ। এক সঙ্গে সব্বার ওজন করলে হয় ৬৭৫ কিলোগ্রাম। ভারতের তিনটি। আলজেরিয়া থেকে আরও তিনটি। এবং আমেরিকা ও কানাডা থেকে ১টি করে।

এই উপগ্রহগুলির মধ্যে রয়েছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী ভারতের উপগ্রহ স্ক্যাটস্যাট। এর কাজ মূলত সামুদ্রিক আবহাওয়া, সাইক্লোন ইত্যাদির পূর্বাভাস দেওয়া। এই জাতীয় তথ্য সাধারণত আমেরিকার সঙ্গে ভাগ করে নেয় ভারত। আর তার সাহায্যেই ২০১২ সালে হ্যারিকেন স্যান্ডির গতিবিধির উপর সব সময় নজর রাখতে পেরেছিল আমেরিকা। ভারতের অন্য দু’টি উপগ্রহ (এদের নাম ‘প্রথম’ ও ‘পিস্যাট’) বানিয়েছে আইআইটি বম্বে ও বেঙ্গালুরুর পিইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।

রুদ্ধশ্বাস ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর শেষ হাসি ফুটল ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মুখে। ইসরোর চেয়ারম্যান এ এস কিরণ কুমার জানালেন, আজ একটা ঐতিহাসিক দিন। ইসরোর দীর্ঘতম মিশন। বিজ্ঞানীদের সাফল্যে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেন, ‘‘আমাদের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছেন। ১২৫ কোটি দেশবাসীর হৃদয় জয় করেছেন তাঁরা। দেশকে গর্বিত করেছেন।’’ ইসরোর গবেষকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ বছরের শেষের দিকে আরও একটা মাইল ফলক পেরোনোর আশা রাখছে ভারত। সব চেয়ে ভারী রকেট জিও-সিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্‌ল মার্ক-থ্রি উৎক্ষেপণ করা হবে। আর এর এতটাই ক্ষমতা যে ৪ টন অর্থাৎ প্রায় ৩৬২৮ কিলোগ্রাম ওজনের উপগ্রহ সে মহাকাশে বয়ে নিয়ে যেতে পারবে বলেই আশা রাখছেন বিজ্ঞানীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement