গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
ঠিক ন’দিন আগে এ বার ‘বিজ্ঞান দিবসে’র থিম ছিল ‘বিজ্ঞানের দুনিয়ায় নারী’। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর ভারতে এমন একটি বিষয়কে কেন বিজ্ঞান দিবসের থিম হিসেবে বেছে নেওয়া হল?
তার কারণটা লুকিয়ে রয়েছে কমলা ভাগবতের কাহিনীর মধ্যে। স্বাধীনতার আগেকার কথা। তখন বেঙ্গালুরুর টাটা ইনস্টিটিউটের (অধুনা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স) অধিকর্তা ছিলেন নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী সি ভি রমন। পিএইচডি করার জন্য ওই সময় আবেদন করেছিলেন কমলা। কিন্তু তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দেন সি ভি রমন। কোনও গল্পটল্প নয়। এটা ঐতিহাসিক সত্য।
কমলার পিএইচডি-র আবেদনে ‘না’ সি ভি রমনের
কেন সে দিন কমলার পিএইচডি-র আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী? কমলা মহিলা বলে! কমলা কিন্তু সে দিন হাল ছাড়েননি। রমনকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন। এমনকি, শেষমেশ হার মানতে বাধ্যও করিয়েছিলেন সি ভি রমনের মতো ব্যক্তিত্বকে।
তখন রমন নানা ধরনের শর্ত একের পর এক ছুড়ে দিয়েছিলেন কমলার দিকে। কমলা পিছিয়ে যাননি। রমনের সব শর্ত মেনে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন কমলা। ১৯৩৬-এ উত্তীর্ণ হন স্নাতকোত্তর পরীক্ষায়। ডিস্টিংশন নিয়ে। বিজ্ঞান গবেষণায় মহিলাদের উপযুক্ত মনে করতেন না যিনি, সেই সি ভি রমনই পরে কমলার কাজ দেখে নিজের মত পাল্টাতে বাধ্য হন। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটের দরজা খুলে দেওয়া হয় মেয়েদের জন্য।
রমন হয়তো বদলেছিলেন। কিন্তু তাঁর দেশের মানসিকতা তখনও বদলাতে শুরু করেনি।
নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী সি ভি রমন।
কমলা পরে আমন্ত্রণ পান কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৩৯-এ দেশে ফিরে দিল্লির লেডি হার্ডিঞ্জ কলেজে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব নেন। পরে কমলা সোহানি (বিবাহোত্তর পদবি) নামে তিনি স্বীকৃতি পান।
রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত কমলা সোহানিকে কিন্তু তার পরেও নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। দিল্লি থেকে কমলা যান মুম্বইয়ে। মুম্বইয়ের ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে প্রফেসর হিসেবে। কিন্তু পর্যাপ্ত যোগ্যতা সত্ত্বেও তাঁকে সেখানকার অধিকর্তার পদটি দেওয়া হয়নি বেশ কয়েক বছর। তা কি শুধুই মহিলা বলে নয়?
কমলা ভাগবত (সোহানি)। স্বামী মাধব সোহানি (বাঁ দিকে) ও দুই পুত্র অনিল ও জয়ন্তের সঙ্গে।
এবং অসীমা চট্টোপাধ্যায়...
ভারতের মাটিতে প্রথম মহিলা পিএইচডি আমাদের ঘরের মেয়ে অসীমা চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ যাঁর গর্বে আজও গর্বিত। তিনি ছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও সত্যেন্দ্রনাথ বোসের যোগ্য ছাত্রী। শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার, সি ভি রমন পুরস্কার, পদ্মভূষণ ও আরও অনেক পুরস্কারে সম্মানিত অসীমা আজীবন শুধুই শিক্ষকতা করে গিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার যোগ্যতা কি তাঁর ছিল না?
কী বলছেন এখনকার মহিলা বিজ্ঞানীরা?
পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার পুণে) ও অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক, ভাটনগর পুরস্কারজয়ী এল এস শশীধরা বলছেন, “মহিলারা না থাকলে বিজ্ঞানে সভ্যতার অর্ধেক অংশের সৃজনশীলতা হারিয়ে যাবে। লিঙ্গভেদ রেখে বিজ্ঞানচর্চা অনৈতিক। অকার্যকরও।”
কী বলছে পরিসংখ্যান?
স্কুল বা কলেজপড়ুয়াদের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের শতকরা হার কমে যায়। বিশেষ করে, বিজ্ঞানের বিভাগগুলিতে। স্নাতকোত্তরের তুলনায় হার আরও কমে যায় পিএইচডি-তে।
ইউনেস্কোর তথ্য বলছে, গোটা বিশ্বেই বিজ্ঞানে মহিলাদের উপস্থিতি মাত্র ৩০ শতাংশ। ভারতে সেটা আরও কম। ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান বলছে, এ দেশে সেই হার মাত্র ১৪ শতাংশ।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ইয়ং অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স (‘ইনিয়াস’)-এর কার্যনির্বাহী কমিটির প্রাক্তন সদস্য গীতাঞ্জলি যাদব বলছেন, ‘‘ভারতে অনেক কিছুই বদলেছে। শুধু একটারই অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে গিয়েছে। অনেক সময়েই স্কুলের গন্ডি পেরনোর সময় দেখা যায়, মেয়েদের পরীক্ষার ফল ছেলেদের চেয়ে ভাল। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরুষদেরই প্রাধান্য। আরও দুঃখের বিষয়, যে হারে মেয়েরা ডক্টরেট হয়, সেই তুলনায় বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণামূলক সংস্থাগুলিতে মহিলাদের নিয়োগ করা হচ্ছে না। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এখনও পিছিয়ে রাখা হচ্ছে।’’
১৭ বছর আগের প্রয়াস
বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স ২০০৩ সালে একটি কমিটি তৈরি করে। ভারতে মহিলা বিজ্ঞানীদের অবস্থান, তাঁদের কেরিয়ার গড়ে তোলার নানা প্রতিবন্ধকতা, তার প্রতিকারের মতো দীর্ঘ দিনের সমস্যাগুলি বোঝা এবং তা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষ্যে। সেই কমিটি এবং পরবর্তী কালে গঠিত ‘প্যানেল ফর উইমেন ইন সায়েন্স’-এর মূল লক্ষ্যটাই ছিল, বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ও সমাজে মহিলা বিজ্ঞানীদের তুলে ধরা। তাঁদের কাজগুলিকে তুলে ধরা। কারণ অনেক সময়ই মহিলা বিজ্ঞানীরা মুখ বুঁজে কাজ করে যান আড়ালে থেকে। মানুষের নজরে আসেন শুধুই পুরুষেরা। এর কারণ অনেকটাই সামাজিক।
শুধুই ছাত্র বা ছাত্রী, বিদ্যার্থী কেন নয়?
মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)-এর অধ্যাপক, ‘ইনফোসিস’ পুরস্কারজয়ী বিজ্ঞানী শুভা তোলে বললেন, “আমরা কারও বাড়িতে গেলে সাজানোগোছানো ঘর বা সুস্বাদু খাবারের জন্য গৃহকর্ত্রীর প্রশংসা করি। এটাই সামাজিক প্রথা। দেখা যায়, অনেক পুরুষ কোনও মহিলা সহকর্মী বা ছাত্রীর প্ৰশংসা করতে গিয়ে তাঁর জামাকাপড় বা সৌন্দর্যের প্রশংসা করেন। সেই একই সামাজিক প্রথায়। তাঁরা বোঝেন না, কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যক্তিগত কথা বেমানান। এমনকি, তা অপমানজনকও হতে পারে।”
আরও পড়ুন- ‘‘মেয়ে হয়েছিস তো কী হয়েছে? সব পারবি!’’
আরও পড়ুন- ওরা তোমার লোক? অ মা, আমরা কার লোক তবে?
ঠিক একই ভাবে, অনেক সময় দেখা যায়, কোনও মিটিংয়ের সময় ধরে নেওয়া হয়, মহিলারাই চা এগিয়ে দেবেন। সভার বিশিষ্ট অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করবেন। বা, ফিতে কাটার সময় ট্রে-তে কাঁচি সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন শাড়ি পরা, বিশেষ ভাবে সেজেগুজে আসা ছাত্রীরা।
সংখ্যাটা বাড়ছে উত্তরোত্তর, তবু লড়াই অনেক বাকি
কয়েক দশক ধরে চলে আসা এই সব ‘ঐতিহ্য’ আমরা বর্জন করব কবে?
অনেকে মনে করেন, আমরা নারীদের সম্মান জানাই, পুজো করি বলেই এই বরণ করে নেওয়ার বিশেষ দায়িত্ত্ব দেওয়া হয় মেয়েদের। কিন্তু আর কত দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক জন ‘স্টুডেন্ট’ শুধুই ‘ছাত্র’ বা ‘ছাত্রী’ বলে চিহ্নিত হবেন? কেন তাঁরা এক জন বিদ্যার্থী হিসেবে পরিচিত হবেন না?
শুধুই শিবন, কেন রিতু, বনিতা পাননি প্রচারের আলো?
হয়ত অনেকেরই এখনও ভালই মনে আছে, গত বছরের সেই রাতটা। যখন সারা দেশের মানুষ সিরিয়াল, রিয়ালিটি শো ছেড়ে টেলিভিশনের সামনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন চাঁদের পিঠে চন্দ্রযান-২-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর সফল পদার্পণের জন্য। টিভির স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছিল এক ঝাঁক বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদকে। তার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে দুনিয়ার সামনে সেই অভিযানের ‘মুখ’ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছিল শুধুই ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবনকে।
চন্দ্রযান-২-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’।
সেই তুলনায় কি প্রচারের আলোয় আনা হয়েছিল দুই মহিলা মুথাইয়া বনিতা ও রিতু কারিদহালকে? অথচ, তাঁরাই তো ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের দুই প্রধান কারিগর।
এখনও যে সমস্যাগুলি রয়েছে
একটা সময় ছিল, যখন মেয়েদের চাকরি করা, বাইরে একা চলাফেরা করা, নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে চাওয়া, এমনকি সে মা হতে চায় কি না, সেই সিদ্ধান্তগুলি নেওয়ার অধিকার ছিল না। সমাজ তো সেই অন্ধকার অনেকটাই পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে, অন্তত কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো ফুটেছে মুক্তির আলো। তাই বলে কি এখনও সমাজে মহিলাদের নিগ্রহ, নির্যাতন, অপমান, সামাজিক বৈষম্যের মতো প্রবহমান সমস্যাগুলি নেই? আছে, ভীষণ ভাবে আছে।
একই ভাবে বিজ্ঞানীরাও তো সমাজের বাইরে নন। তাই তাঁদের দুনিয়াতেও মহিলারা নানা রকমের বৈষম্যের শিকার হন। ধরুন, কোনও একটি বিজ্ঞান সংস্থায় একটি বিভাগে মিটিং ডাকা হল বিকেল পাঁচটায়। যাতে দিনের বাকি কাজ সেরে সবাই সেখানে যেতে পারেন। এক জন মহিলা জানালেন, তাঁকে সাড়ে পাঁচটায় চলে যেতে হবে। ক্রেশ্ থেকে মেয়েকে আনতে হবে বলে। অনেক জায়গাতেই তাঁকে বক্রোক্তি শুনতে হবে। বলে দেওয়া হবে মিটিংটা খুব জরুরি। না থাকতে পারলে নানা সমস্যা হবে। অথবা কিছুই না বলে, তাঁকে নানা ভাবে অসুবিধের মধ্যে ফেলা হবে।
এই ছবি আমাদের অনেকের কাছেই চেনা। যার জন্য অনেক সময় মহিলাদের পিছিয়ে পড়তে হয় কর্মক্ষেত্রে।
সমস্যা আরও আছে। মহিলাদের অনেক সময় চাকরির ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হয় তাঁরা বিবাহিত কি না। সন্তান আছে কি না, বিবাহিত হলে স্বামী কি করেন? এক শহরে থাকেন কি না, ইত্যাদি। কোনও মহিলা যদি ভদ্র ভাবে বলেন, যে এই প্রশ্নগুলোর সঙ্গে তাঁর কাজের কোনও সম্পর্ক নেই, তাতেও সমস্যা। কমিটির বিশিষ্টরা বিরক্ত হবেন। তাঁরা অনুচিত প্রশ্ন করেছেন, এ কথা তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়ার ফলে রাগটা গিয়ে পরবে সেই মহিলা চাকরিপ্রার্থীর উপরেই।
‘‘আমরা আসলে মহিলাদের ‘মা’, ‘স্ত্রী’ হিসেবেই দেখি। এক জন মানুষ হিসেবে নয়”, বললেন শুভা তোলে।
বিজ্ঞানীদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ সময়টা মোটামুটি ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়স। পিএইচডি-র মাঝামাঝি থেকে শেষ, পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা, (বেশির ভাগ ভারতীয় বিদেশে কয়েক বছর কাটান এই সময়), চাকরি জীবনের শুরু থেকে প্রথম প্রোমোশন, সবটাই ছুটে চলা। এই সময়টাতেই মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতাটা বেশি থাকে। তাই নিজের ইচ্ছে, পরিবারের চাপ, অনেক কিছু সামলে চলতে হয় তাঁদের। শিশুসন্তানকে বাড়িতে রেখে ৪/৫ দিনের জন্য চলে যাওয়া সম্ভব হয় না বলে এই সময় মহিলারা বাদ পড়ে যান অনেক কনফারেন্স থেকে। অনেক সময় চাকরির জন্য স্বামী, স্ত্রীকে আলাদা থাকতে হয়। সন্তানের ক্ষেত্রে চলে আসে স্বাভাবিকভাবেই নানা সমস্যা। অনেক মহিলা শুধু এই কারণেই চাকরি ছেড়ে দেন বা চাকরির চেষ্টাই করেন না সন্তানের জন্মের পরে।
মহিলারা উঠে আসছেন আগের চেয়ে বেশি
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক মহিলাদের এই সমস্যার কথা মনে রেখে ২০০৩-এ শুরু করে ব্যক্তিগত কারণে কেরিয়ারে ফাঁক পড়ে যাওয়া মহিলাদের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প। চালু করে কয়েকটি বিশেষ পুরস্কার। গবেষণার রসদ জোগানোর সরকারি ব্যবস্থা রয়েছে গত দশ-বারো বছর ধরে, উপকৃতও হয়েছেন এতে অনেক মহিলা। তবে এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে আমাদের।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞান সংস্থায় আজ অবশ্য মহিলাদের আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে। তবে সেটা একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। তাঁদের অসামান্য প্রতিভার স্ফূরণে।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি তার ৮৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এক জন মহিলাকে (অধ্যাপক চন্দ্রিমা সাহা) সভাপতি পদে নির্বাচিত করেছে। এ ছাড়াও রয়েছেন কেন্দ্রীয় বায়োটেকনোলজি মন্ত্রকের সচিব রেণু স্বরূপ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার উপাচার্য নাজমা আখতার, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধিকর্তা আন্নাপূর্নি, কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের অধিকর্তা আঞ্জু শেঠ, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অবস্থা বদলাচ্ছে...
ভারতে বিজ্ঞানের দুনিয়ায় মহিলাদের নিয়ে আলোচনায় এক সময় শুধুই সমস্যাগুলি তুলে ধরা হত। কিন্তু এখন উঠে আসে সমাধান। তুলে ধরা হয় ‘সাকসেস স্টোরি’। উদ্বুদ্ধ করা হয় মেয়েদের। যাতে আরও বেশি করে মেয়েরা বিজ্ঞানকে বেছে নেয় কেরিয়ার হিসেবে। তাই ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রেশের ব্যবস্থা, মহিলা সহকর্মীদের পারিবারিক দায়িত্বকে সম্মান জানিয়ে প্রয়োজনে তাঁদের কাজ একটু ভাগ করে নেওয়া। সন্ধ্যার পর বা ছুটির দিনে নিতান্তই প্রয়োজন না হলে জরুরি মিটিং না ডাকা। অন্য যে কোনও ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের মতো এই সব ক্ষেত্রেও প্রয়োজন পরিবারের সহযোগিতা, সহমর্মিতা।
বিজ্ঞানের গবেষণায় মহিলাদের আর দাবিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক, ‘ইনিয়াস’-এর সদস্য রিফৎ জন কিছুটা আশাবাদী। তাঁর কথায়, “আগেকার দিনে মেয়েদের সত্যি-সত্যিই খুব কম প্রতিনিধিত্ত্ব ছিল বিজ্ঞান গবেষণার জগতে। তবে দিনে দিনে অনেক বেশি সংখ্যায় মেয়েরা বিজ্ঞানের গবেষণায় আসছেন। তাই রুপোলি রেখা দেখা যাচ্ছে সামনে।”
প্রায় একই সুর নেচার ইন্ডিয়ার সম্পাদিকা শুভ্রা প্রিয়দর্শিনীরও। বলছেন, ‘‘ভারতের মহিলা বিজ্ঞানীরা ক্ৰমশই মানুষের নজরে আসছেন। সেটা কিছুটা নানা ধরনের সরকারি প্রকল্পের কল্যাণে। বেশ কিছুটা তাঁদের নিজেদের কাজের সচেষ্ট প্রচারে।”
উৎসাহ দিলে ক্ষতি কী, কার?
নিজেদের কাজের মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানের জগতে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন এই মহিলারা। পাশে থাকছে পরিবার, সহকর্মী, বন্ধুরা। এই পরিস্থিতিতে কৃতী মহিলা বিজ্ঞানীদের নিয়ে অনুষ্ঠান, তাঁদের কাজের, নানা কৃতিত্বের প্রচারের প্রয়োজন আরও বেড়ে গিয়েছে।
নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে, সামাজিক দায়িত্ব পালন করেও যাঁরা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, তাঁদের একটু উৎসাহ দিলে ক্ষতিটা কিসের? আগামী প্রজন্মের জন্য এই কৃতী মহিলা বিজ্ঞানীদের পথিকৃৎ হয়ে উঠতে দিতে আমাদের অসুবিধাটা কোথায়?
না দিলে কি ভারতের মহিলা বিজ্ঞানীদের জন্য গৌরব অর্জনের সুযোগটা আমরা হেলায় হারাব না?
লেখক মোহনপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (আইসার কলকাতা)’ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
ফাইল ছবি।