নেট-ব্যাঙ্কিং থেকে অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ, নেটফ্লিক্স থেকে আমাজন— ব্যস্ত দুনিয়ায় মানুষের যেন একমাত্র ভরসা ইন্টারনেট। প্রযুক্তির উন্নতি যেমন আধুনিক জীবনযাত্রাকে অনেকটা সহজ করেছে, তেমনই এর হাত ধরে ঝুঁকিও উপরি পাওনা হয়েছে। আপনি কি জানেন আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাক করার জন্য প্রতি মুহূর্তে ফাঁদ পেতে রয়েছে হ্যাকাররা?
কিছু দিন আগে এক আমাজন ব্যবহারকারী একটি ইমেল পান, যাতে লেখা ছিল তাঁর রেজিস্টার করা ইমেল আইডিটি পরিবর্তিত হয়েছে। এর পরেই তাঁর আমাজন পে থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় তিন হাজার টাকার গিফট কার্ড। বিপদ বুঝে তিনি তখনই আমাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা গোটা ব্যাপারটির সামাল দেন এবং তিনি বড়সড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান।
এই রকম বিপদে পড়তে পারেন আপনিও। হ্যাক হতে পারে আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টও। সে ক্ষেত্রে কী করণীয়:
বিপদের আঁচ বুঝতে পেরে প্রথমেই যে ওয়েবসাইটের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে তাদের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে তাদের ইমেল পাঠান। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেলে অ্যাকাউন্ট সাময়িক ভাবে প্রত্যহারের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানান। মনে রাখবেন, যত তাড়াতাড়ি বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে আপনার ক্ষতির আশঙ্কাও ততই কম হবে।
যদি আপনার অ্যাকাউন্টটিতে আপনি লগ-ইন করতে সক্ষম হন, তা হলে যত দ্রুত সম্ভব আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। আপনার নতুন পাসওয়ার্ডটি কিন্তু পুরনো পাসওয়ার্ড এর থেকে একেবারেই আলাদা হতে হবে, এটি মাথায় রাখবেন।
সবশেষে যোগাযোগ করুন আপনার রাজ্যের ‘সাইবার ক্রাইম সেল’ বিভাগের সঙ্গে। সমস্যা সম্পর্কে তাদের বিশদে জানান এবং প্রয়োজনে থানায় অভিযোগ দায়ের করুন।
আপনার আকাউন্টটি হ্যাকিং হওয়া থেকে কী ভাবে রক্ষা করবেন?
যদি আপনি কোনও ‘পাবলিক-প্লেস’ অর্থাৎ কফি-শপ অথবা বিমানবন্দরের ওয়াই-ফাই কানেকশন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কিং বা কোনও কমার্শিয়াল ওয়েবসাইট–এ লগ ইন না করাই শ্রেয়। হ্যাকাররা সাধারণত এই সমস্ত বিপজ্জনক নেটওয়ার্ক থেকেই তাদের শিকার খুঁজে নেয়।
আপনার জন্মদিন, নাম, সন্তানের নাম এগুলো পাসওয়ার্ড হিসেবে না রাখাই ভাল। হ্যাকাররা সহজেই তা অনুমান করে নিতে পারে। বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা, অক্ষর মিশিয়ে পাসওয়ার্ড রাখা ভাল। ভুলেও কারও সঙ্গে পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না। মাসে অন্তত একবার আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
নিজের ল্যাপটপ হলেও কাজ হয়ে গেলে আপনার প্রতিটি অ্যাকাউন্ট লগ আউট করুন। সমস্ত ব্রাউসার যাতে আলাদা ভাবে বন্ধ করা হয়, সে দিকেও নজর রাখুন।
উন্নতমানের অ্যান্টিভাইরাস কিনুন। প্রতি মুহূর্তে তা আপডেট করুন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট তাদের নিরাপত্তা যত জোরালো করছে, তত হ্যাকারদের প্রযুক্তিও উন্নত হচ্ছে।
অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ ‘জোম্যাটো’-র সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। ২০১৭-এর মে মাসে এই অ্যাপের প্রায় ১৭ লক্ষ ব্যবহারকারীর তথ্য ‘এনক্লে’ নামক হ্যাকিং সংস্থার দ্বারা হ্যাকড হয়ে যায়। যদিও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে কোনও ব্যবহারকারীর টাকা চুরি হয়নি বলেই দাবি করেন ‘জোম্যাটো’ কর্তৃপক্ষ।
২০১৮ সালে কসমস ব্যাঙ্কের পুণে শাখা ভয়ঙ্কর সাইবার আক্রমণের শিকার হয়, যা ভারতে ঘটা প্রথম ‘ম্যালওয়ার অ্যাটাক’। প্রায় ৯৪ কোটি টাকা কসমস ব্যাঙ্ক থেকে অদ্ভুত ভাবে হংকং ব্যাঙ্কে চলে যায়। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল প্রতিটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের কোনও পরিবর্তন হয়নি।
সবার আগে নিজে সতর্ক হন। অন্যকেও সতর্ক করুন বিপদ ঘটার আগে। কে বলতে পারে হ্যাকারদের পরবর্তী লক্ষ্য হয়ত আপনি।