moon

Moon: জন্ম নিল অ্যারাবিডোপসিস থালিয়ানা, চাঁদের মাটিতে সর্ষের আত্মীয় ফলিয়ে চমক বিজ্ঞানীদের

অর্ধশত বছর আগে অ্যাপোলো অভিযানের সময়ে চাঁদ থেকে মাটি এনেছিলেন মহাকাশচারীরা। চাঁদের মাটিকে রিগোলিথ-ও বলা হয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২২ ০৭:০১
Share:

গবেষণাগারে অ্যারাবিডোপসিস থালিয়ানা। ছবি: নাসা

শেষ বার চাঁদের মাটিতে মানুষ পা রেখেছিল সেই ১৯৭২ সালে। পঞ্চাশ বছর পরে ফের পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে মানুষ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সেই মতো জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে। ও দিকে, চিন ও রাশিয়াও যৌথ উদ্যোগে লুনার স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছে। কিন্তু চাঁদে গিয়ে থাকতে হলে মানুষের বাঁচার জন্য চাই খাবার। জীবনধারণের সেই ন্যূনতম চাহিদা মেটানো সম্ভব কি না, তা জানতেই শুরু হয়েছিল গবেষণা। মিলল সাফল্য। চাঁদের মাটিতে জন্ম নিল এক টুকরো সবুজ!

Advertisement

অর্ধশত বছর আগে অ্যাপোলো অভিযানের সময়ে চাঁদ থেকে মাটি এনেছিলেন মহাকাশচারীরা। চাঁদের মাটিকে রিগোলিথ-ও বলা হয়। রিগোলিথের কিছু নমুনা সে সময়ে পরীক্ষাগারে ব্যবহার না-করে ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, পরে যখন আরও উন্নত হবে বিজ্ঞান, সে সময়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে। সামনে যদি ফের চন্দ্রাভিযান হয়, সে ক্ষেত্রে পুরনো নমুনা ব্যবহারের এটি আদর্শ সময়। তাই সম্প্রতি ‘তোরঙ্গ’ থেকে বার করা হয়েছিল অ্যাপোলো অভিযানের সময়ে আনা মাটির নমুনা।

গবেষণাগারে সেই মাটিতেই এই প্রথম সবুজ প্রাণের সঞ্চার ঘটালেন বিজ্ঞানীরা। নাসা জানিয়েছে, এই মাটিতে তেমন পুষ্টিগুণ নেই। তারই মধ্যে জন্মেছে অ্যারাবিডোপসিস থালিয়ানা। এদের জীবনীশক্তি খুব বেশি। অল্পেতে মরে না। গাছটিকে আফ্রিকা ও ইউরেশিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়। সর্ষের আত্মীয় বলা যেতে পারে এদের। ব্রকোলি, ফুলকপির মতো ক্রুসিফেরাস জাতের গাছ। গবেষণাগারে এই কাজটি করে দেখিয়েছে ফ্লরিডা বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

সব ঠিক থাকলে হয়তো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠাবে নাসা। এ-ও শোনা গিয়েছে এ বারে, কোনও মহিলা এবং কোনও কৃষ্ণাঙ্গ নভশ্চর চাঁদে পাড়ি দেবেন। তার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। শেষ যে বার চাঁদে গিয়েছিল মানুষ, ১২ দিন ছিল। এ বারে দীর্ঘ সফরের পরিকল্পনা। নাসার কর্তা বিল নেলসন বলেছেন, ‘‘চাঁদ কিংবা মঙ্গলে দীর্ঘ সময়কাল কী ভাবে থাকা যায়, তার ভাবনাচিন্তা চলছে বহুদিন। এ জন্য খাবারের সন্ধান চাই। সেই ব্যবস্থা করা গেলে মহাকাশচারীরা চাঁদে থেকে গবেষণা করতে পারবেন। ল্যাবে চাঁদের মাটিতে গাছের জন্ম, সেই সম্ভাবনার দরজাই খুলে দিল। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কী ভাবে গাছের ফলন সম্ভব, তা-ও বোঝা গেল।’’ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চাঁদের মাটিতে কৃষিকাজ সম্ভব। পৃথিবীর মতো অত কিছু হয়তো ফলানো যাবে না। কিন্তু গাছের জন্ম সম্ভব, সে নিয়ে নিশ্চিত তাঁরা।

অ্যাপোলো ১১, ১২ এবং ১৭ অভিযানে মহাকাশচারীরা চাঁদের মাটি নিয়ে ফিরেছিলেন। গবেষণাগারে সেই নমুনা ব্যবহার করা হয়। সামান্য রিগোলিথে (একটি গাছের জন্য এক গ্রাম মাটি) বীজ ছড়িয়ে জল দেওয়া হয়েছিল। যোগ করা হয়েছিল সারও। তাতেই গবেষণাগারের ট্রেতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সবুজ চারা। উদ্যানবিদ্যার অধ্যাপক অ্যানা-লিসা পল বলেন, ‘‘দু’দিন বাদেই বীজ থেকে কল বেরোতে শুরু করে। বলে বোঝাতে পারব না, আমরা কী পরিমাণ অবাক হয়েছিলাম! দু’রকম ট্রে ছিল। এক ধরনের ট্রেতে চাঁদের মাটিতে বীজ ছড়ানো হয়েছিল। অন্য ট্রেতে পৃথিবীর মাটিতে বীজ দেওয়া হয়। দু’ক্ষেত্রেই একই রকম গাছ হয়েছে।’’

২০ দিন বাদে ফুল আসার ঠিক আগে মাটি থেকে গাছগুলি কেটে নেওয়া হয়েছিল। তার পর তা পাঠানো হয়েছিল আরএনএ সিকোয়েন্সিং-এ। জিনের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অ্যারাবিডোপসিসের প্রতিক্রিয়া যেমন হয়, এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সামান্য দুর্বল। তবে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ‘‘আসল কথা হল, গাছ জন্মেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement