রাশিয়ার বইকাল হ্রদ। - ফাইল ছবি।
মহাকাশে নজর রাখতে রাশিয়া নামল অতলান্ত জলের গভীরে। দৈত্যাকার টেলিস্কোপ বসাল বিশ্বের গভীরতম হ্রদ বইকাল-এর সৈকতের আড়াই হাজার থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ফুট নীচে। বা ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ মিটার গভীরে। ওই গভীরতায় টেলিস্কোপটি বসানো হয়েছে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে।
সেই দৈত্যাকার টেলিস্কোপটিকে গত সপ্তাহে বসানো হয়েছে বইকালের গভীরে। যা বানানোর কাজ শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে। ২০১৫-য়।
টেলিস্কোপটির নাম ‘বইকাল-জিভিডি’। টেলিস্কোপটিকে বইকালের অতলান্ত জলের গভীরে বসানোর কারণ ব্রহ্মাণ্ডের বিশেষ ধরনের একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার সন্ধান করা। সেই কণার নাম ‘নিউট্রিনো’।
যারা আলোর কণা ফোটনের মতোই ভরহীন। ছোটেও আলোর কণার প্রায় সমান গতিবেগে। কিন্তু ব্রহ্মাণ্ডে যেমন আলোর কণার পথ বাঁকিয়ে চুরিয়ে দেয় বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু ও নানা ধরনের মাধ্যম, ‘নিউট্রিনো’র ক্ষেত্রে সেটা হয় না। উৎস থেকে বেরিয়ে তারা ছোটে একই পথ ধরে। তাই তাদের পথ ধরে প্রায় ১৪০০ কোটি বছর বয়সি ব্রহ্মাণ্ডের অনেক অজানা ইতিহাস জানা যায়। জানার চেষ্টা চালানো যায়।
বইকালের গভীর বসানোর জন্য নামানো হচ্ছে টেলিস্কোপটিকে। ছবি সৌজন্যে- টুইটার।
ছোটার পথে এই ‘নিউট্রিনো’রা কারও ধাক্কাধাক্কিরই পরোয়া করে না। আমাদের শরীরে প্রতি সেকেন্ডের কয়েক লক্ষ ভাগের এক ভাগের মধ্যে লক্ষ কোটি নিউট্রিনো এসে ঢুকছে, শরীর ফুঁড়ে বেরিয়েও যাচ্ছে। একই ভাবে ‘নিউট্রিনো’রা ব্রহ্মাণ্ডের কোনও একটি উৎস থেকে বেরিয়ে পৃথিবীতে এলে তা আমাদের গ্রহটিকেও ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়।
তবু তার মধ্যে কিছু কিছু নিউট্রিনোকে ধরাছোঁয়ার মধ্যে পাওয়া সম্ভব একমাত্র অ্যান্টার্কটিকার পুরু বরফের চাদরের গভীরে বা কোনও কোনও অতলান্ত জলের গভীরে। তাই সেই ‘নিউট্রিনো’দের ধরাছোঁয়ার মধ্যে পেতে দৈত্যাকার টেলিস্কোপটিকে রুশ বিজ্ঞানীরা বসিয়েছেন বইকালের মতো পৃথিবীর গভীরতম হ্রদের সৈকতের (‘লেক শোর’) ৭৫০ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মিটার নীচে। স্টেনলেস স্টিল দিয়ে বানানো কাঠামোটির ভিতরে রয়েছে কাচের সুবিশাল একটি বলয়। সেটিই লেন্সের কাজ করবে। গত সপ্তাহে এই কাঠামোটিকেই বইকাল হ্রদের গভীরে সফল ভাবে নামিয়ে দিতে পেরেছেন রুশ বিজ্ঞানীরা। জলের স্বচ্ছ্বতাও বইকালকে টেলিস্কোপ বসানোর জায়গা হিসাবে বেছে নেওয়ার আর একটি কারণ, জানিয়েছেন রুশ বিজ্ঞানীরা।
রাশিয়ার জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী দিমিত্রি নওমোভ বলেছেন, ‘‘কয়েক বছরের মধ্যেই টেলিস্কোপটির ক্ষমতা বাড়িয়ে এমন করা হবে যাতে বইকাল হ্রদের গভীরে এক ঘন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সেটি কার্যকর হয়ে ওঠে।’’
এমন আরও একটি টেলিস্কোপ রয়েছে অ্যান্টার্কটিকায়। তার নাম ‘আইসকিউব’। দক্ষিণ মেরুর পুরু বরফের চাদরের তলায়।