Frog

এলোমেলো বর্ষার গান, বিপদে ব্যাঙেরা

২০০৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৩০০টিরও বেশি উভচর প্রাণী অস্তিত্বসঙ্কটে। প্রতি পাঁচটি উভচর প্রাণীর মধ্যে দু’টি প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে পৃথিবী থেকে। এখনই সাবধান না হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

Advertisement

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

‘বর্ষায় ব্যাঙের ফুর্তি। বৃষ্টি শেষ, আকাশ নির্বাক, উচ্চকিত ঐকতানে শোনা গেল ব্যাঙেদের ডাক।’ বেশ কয়েক দশক আগে এই কবিতা লিখেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। বর্ষা এখন রূপ বদলেছে। সময়জ্ঞান হারিয়েছে বৃষ্টি। বর্ষায় তার দেখা নেই। অসময়ে বানভাসি পাহাড়, ভাসছে সমতলও। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এর কারণ অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন। এর জেরে প্রকৃতির গা ঘেঁষে থাকা প্রাণীগুলি অস্তিত্বসঙ্কটে। বর্ষায় ব্যাঙেদের গান ক্রমে ফিকে হচ্ছে। শুধু ব্যাঙই নয়, স্যালামান্ডার, সিসিলিয়ানের মতো উভচর প্রাণীর সংখ্যা ভয়াবহ ভাবে কমছে। এই নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’ পত্রিকায়। রিপোর্টে লেখা হয়েছে, অবিলম্বে বিপন্ন প্রাণীদের সংরক্ষণ প্রয়োজন। না হলে অচিরেই ভেঙে পড়বে প্রকৃতির ভারসাম্য।

Advertisement

সম্প্রতি ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ারভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএন)-এর উদ্যোগে বিপন্ন প্রাণীদের একটি বিপদ-তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নেচারে প্রকাশিত রিপোর্টে লেখা হয়েছে, বিশ্বের মোট ৮০১১টি প্রজাতির প্রাণীকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, এর মধ্যে ৪০.৭ শতাংশ প্রজাতিই গোটা বিশ্ব জুড়ে অস্তিত্বসঙ্কটে রয়েছে। তবে সবচেয়ে বিপন্ন উভচর। বিপজ্জনক ভাবে কমছে ব্যাঙ, স্যালামান্ডার, সিসিলিয়ানের সংখ্যা।

নেচারে প্রকাশিত রিপোর্টটির শিরোনাম: ‘অনগোয়িং ডিক্লাইনস ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’স অ্যাম্ফিবিয়ান ইন দ্য ফেস অব ইমার্জিং থ্রেটস’। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘১৯৮০ থেকে ২০০৪ সাল, এই সময়ে যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তার অন্যতম কারণ ছিল রোগ ও বাসস্থান হারানো। কিন্তু ২০০৪ সালের পর থেকে জলবায়ু পরিবর্তন চিন্তা বাড়িয়েছে। এই মুহূর্তে ক্ষতির সবচেয়ে বড় কারণ জলবায়ু পরিবর্তন (৩৯ শতাংশ)। দ্বিতীয় স্থানে বাসস্থান হারানো (৩৭ শতাংশ)।’ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ২০০৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৩০০টিরও বেশি উভচর প্রাণী অস্তিত্বসঙ্কটে। প্রতি পাঁচটি উভচর প্রাণীর মধ্যে দু’টি প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে পৃথিবী থেকে। এখনই সাবধান না হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

Advertisement

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা একত্রিত ভাবে এই গবেষণা করেছেন। সমন্বয় করেছে আইইউসিএন-এর শাখা সংগঠন ‘অ্যাম্ফিবিয়ান রেড লিস্ট অথরিটি’। হাজারের বেশি বিজ্ঞানী অংশ নিয়েছিলেন গবেষণায়। এই দলে রয়েছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরাও। এই গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন অসমের বিজ্ঞানী ও বন্যপ্রাণ বিশারদ এম ফিরোজ আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, উত্তরপূর্ব ভারত ও পূর্ব হিমালয় অঞ্চল জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ। ভারতে মোট ৪২৬টি উভচরের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে ১৩৬টি প্রজাতি সঙ্কটে। যদিও বিশেষজ্ঞেরাই জানাচ্ছেন, যে তথ্য তাঁদের হাতে রয়েছে, তা অসম্পূর্ণ। আরও গবেষণা প্রয়োজন।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ‘জ়ুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ (জ়েডএসআই)-এর উভচর ও সরীসৃপ বিভাগের বিজ্ঞানী কৌশিক দেউটি বলেন, ‘‘জঙ্গলে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। বড় গাছের চাঁদোয়া কমছে। ছায়াঘেরা ও বৃষ্টিভেজা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ব্যাঙেদের জন্য আদর্শ। গাছের নীচে জমা বৃষ্টির জলে ব্যাঙেরা ডিম পাড়ে। কিন্তু গাছ কমে যাওয়ায় চাঁদোয়া তৈরি হচ্ছে না। বৃষ্টিও যথেষ্ট হচ্ছে না। হলেও অসময়ে হচ্ছে। ফলে প্রজননের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’’ আরও কারণ রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বায়ুমণ্ডলে যে ওজ়োন ছিদ্র তৈরি হচ্ছে, তা দিয়ে প্রবেশ করছে বিপজ্জনক অতিবেগুনি রশ্মি। এই রশ্মি যেমন মানুষের ত্বকের ক্ষতি করে, তেমনই নষ্ট করে দিতে পারে ব্যাঙের ডিমের আস্তরণ। মেরে
ফেলে ব্যাঙাচিদের।’’ ফলে জলবায়ু পরিবর্তন ও গাছ কমায় বাসস্থান হারানো, এই জোড়া ফলায় বিপন্ন উভচরেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement