বিক্রম আর সাড়া দিল না। ছবি: সংগৃহীত।
ইসরোর আশঙ্কাই সত্যি হল। বিক্রম আর সাড়া দিল না। চিরঘুমে চলে গেল প্রজ্ঞানও। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো আগেই বলেছিল, রাত ফুরনোর পরে ওরা যদি আর না জাগে, চিরকালের জন্য ভারতের দূত হয়ে চাঁদেই থেকে যাবে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান।
২৩ অগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছিল ইসরোর চন্দ্রযান-৩। এ সময়ই দিন শুরু হয়েছিল চাঁদে। প্রায় দু’সপ্তাহ চন্দ্রপৃষ্ঠে নানা গবেষণা চালায় বিক্রম ও প্রজ্ঞান। পৃথিবীর দু’সপ্তাহ, চাঁদের এক দিন। এর পর দিনের আলো ফুরিয়ে রাত নামে চাঁদে। তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। রাত নামার আগেই বিক্রম ও প্রজ্ঞানকে নিরাপদ জায়গায় পার্ক করে তার সব যন্ত্র বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরো। তবে আশঙ্কা ছিল, অন্ধকার কাটলেও হয়তো এই ‘শীতঘুম’ আর ভাঙবে না। প্রবল ঠান্ডায় যন্ত্রও প্রাণ হারাবে। সেটাই হল।
চন্দ্রযান-৩ অভিযানে যুক্ত ছিলেন স্পেস কমিশনের সদস্য ও প্রাক্তন ইসরো চেয়ারম্যান এ এস কিরণ কুমার। আজ একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘না। আর কোনও আশা নেই। ভাল কিছু হওয়ার হলে এত দিনে হয়ে যেত। এখন আর কোনও সম্ভাবনা নেই।’’ ২২ সেপ্টেম্বর চাঁদে ফের সূর্য ওঠে। ইসরো জানিয়েছিল, বিক্রম ও প্রজ্ঞানের সব ক’টি ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জড ছিল। তার সোলার প্যানেলগুলিও কাজ শুরুর জন্য প্রস্তুত ছিল। সূর্য উঠলেই চার্জিং শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দিনের আলো ফুটলেও বিক্রম ও প্রজ্ঞান আর সাড়া দেয়নি। তাদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগের চেষ্টা করে গিয়েছে ইসরো। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সিগন্যাল পাঠায়নি তারা। আরও দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। ফের রাত নামবে চাঁদে। অন্ধকারে আর কোনও আলো দেখতে পাচ্ছে না ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র।
তবে মন খারাপের কিছু নেই, এ কথা বলছে ইসরো-ই। তারা জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩ অভিযান সফল। তাকে দেওয়া সব দায়িত্বই নিপুণ ভাবে পালন করেছে সে। চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে সফ্ট ল্যান্ডিং করেছে, চাঁদের মাটিতে হেঁটেছে রোভার প্রজ্ঞান, লাফ দিয়েছে বিক্রম, একাধিক ইন-সিটু বিজ্ঞান গবেষণা করেছে তাদের শরীরে থাকা পেলোডগুলি। ইসরোর বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিক্রম ও প্রজ্ঞান যদি জেগে উঠত, তা হলে সেটাই হত ‘বোনাস’।