ছবি- নাসার সৌজন্যে।
যথেচ্ছ কাটতে কাটতে যেটুকু টিঁকে রয়েছে এখনও সেই বনাঞ্চলই ‘হরি’। সে-ই রাখছে।
এখনও যে মানুষ শ্বাসের বাতাস টেনে নিতে পারছে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ফুঁড়ে আমাদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে পুরোপুরি মারতে পারেনি অতিবেগুনি ও মহাজাগতিক রশ্মি, মহাসাগরগুলি ফুঁসে উঠে সভ্যতাকে তলিয়ে দিতে পারেনি, তার জন্য সাবাশি প্রাপ্য এখনও বেঁচে-বর্তে থাকা বনাঞ্চলেরই। নাসার নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা এই তথ্য দিয়েছে।
বাতাসের বিষ টেনে নিচ্ছে বনাঞ্চল। গাছের সালোকসংশ্লেষের জন্যই প্রয়োজন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের। গবেষকরা দেখেছেন, ২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে মোট ১ হাজার ৫৬০ কোটি মেট্রিক টন ওজনের কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস টেনে নিয়েছে বিশ্বের সবক’টি বনাঞ্চল। আর এ ব্যাপারে ‘দাদাগিরি’টা করেছে পৃথিবীর গ্রীষ্মপ্রধান এলাকাগুলির বনাঞ্চলই।
বহু বনাঞ্চল সভ্যতা নিঃশেষ করে দেওয়ার পরেও গত বছর বিশ্বের সবক’টি বনাঞ্চল বায়ুমণ্ডল থেকে টেনে নিয়েছিল ৭৬০ কোটি মেট্রিক টন ওজনের কার্বন ডাই-অক্সাইড। যা, ওই বছর আমেরিকা বাতাসে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উগরে দিয়েছিল, তার দেড় গুণ। রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য জানাচ্ছে, প্রতি বছর বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস জমা করার নিরিখে বিশ্বে সবক’টি দেশের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে চিন। তার পরেই আমেরিকা।
পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য পাঠানো নাসার বিভিন্ন উপগ্রহের তথ্যাদির ভিত্তিতে করা একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা এই খবর দিয়েছে। সোমবার। গবেষকদলে রয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরাও। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এ।
গবেষকরা বিভিন্ন উপগ্রহের পাঠানো তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এর পরেও মানুষ নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস করে চলেছে। শিল্পের প্রয়োজনে। রুটি, রুজির প্রয়োজনে। মাথা গোঁজার ঠাঁই গড়ার জন্য। প্রয়োজনে ও লোভে। সঙ্গে রয়েছে দাবানল। দাবানলের ঘটনা এখন আবার আকছারই ঘটছে।
নাসার নেতৃত্বে এই আন্তর্জাতিক গবেষণা জানিয়েছে, দাবানল, সভ্যতা বনাঞ্চল ধ্বংস করার ফলে ২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফি বছর গড়ে ৮১০ কোটি মেট্রিক টন ওজনের বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বায়ুমণ্ডলে জমা হয়েছে। বিষয়টি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মঞ্চে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।