শিল্পীর কল্পনায়। সৌজন্যে- শানডং বিশ্ববিদ্যালয়, চিন।
এই প্রথম মহাকাশে হারিকেন (‘স্পেস হারিকেন’) দেখলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। উত্তর মেরুর উপর। আরও সঠিক ভাবে বললে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের উত্তর মেরুর উপর। যা পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে একটু সরে রয়েছে উত্তর কানাডার উপর।
মহাকাশে এই হারিকেন দেখা গিয়েছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে। উত্তর কানাডায় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের উপর ৬০০ মাইল বা ১ হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। বিজ্ঞান গবেষণাপত্রিকা ‘নেচার কমিউনিকেশন্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি।
গবেষকরা জানিয়েছেন মহাকাশে হারিকেনের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৪ সালের ২০ অগস্ট। টানা ৮ ঘণ্টা ধরে।
প্রতি মুহূর্তেই সূর্যের বায়ুমণ্ডল বা করোনা থেকে বেরিয়ে আসে সৌরবায়ু বা ‘সোলার উইন্ড’। তা ধেয়ে যায় পৃথিবী সহ সৌরমণ্ডলের সবক’টি গ্রহের দিকে। পৌঁছে যায় সৌরমণ্ডলের একেবারে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। এই সৌরবায়ুর সঙ্গে সূর্য থেকে বেরিয়ে আসে প্রচুর পরিমাণে সৌরকণা বা ‘সোলার পার্টিক্লস’ও।
এগুলি প্রাণের অস্তিত্ব বা তার টিঁকে থাকার পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমনকি কোনও গ্রহের বায়ুমণ্ডলকেও ছিনিয়ে নিয়ে যায় সৌরবায়ু।
এই সৌরবায়ুর হাত থেকে প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও প্রাণকে বাঁচায় পৃথিবীকে চার দিক থেকে ঘিরে রাখা অদৃশ্য চৌম্বক ক্ষেত্রের বলয়। এটাই পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র। এটা পৃথিবীর বর্মের কাজ করে। সৌরবায়ু ও সৌরকণা এর উপর এসে আছড়ে পড়লে এই চৌম্বক ক্ষেত্র ঝনঝন করে কেঁপে ওঠে। তারই জন্য মেরুতে আমরা মেরুজ্যোতি বা ‘অরোরা’ দেখতে পাই। অরোরা পৃথিবীর দুই ভৌগোলিক মেরুতেই দেখা যায় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের দু’টি মেরু তার সঙ্গে সামান্য কৌণিক অবস্থানে রয়েছে বলে।
সৌরবায়ু ও সৌরকণাদের ঠেকিয়ে রাখে, দূরে হঠিয়ে দেয় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র। চুম্বকের সমমেরু একে অন্যকে বিকর্ষণ করে বলে। তাতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বাঁচে। বাঁচে প্রাণও।
মহাকাশে যে হারিকেন এই প্রথম দেখা সম্ভব হয়েছে তারও কারণ সৌরবায়ু ও সৌরকণাই। তাদের পরিমাণ খুব বেশি হয়ে গেলেই মহাকাশে হারিকেন হয় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে। বর্ষণে যেমন থাকে জলের কণা তেমনই মহাকাশের এই হারিকেন ভরা থাকে ঋণাত্মক আধানের ইলেকট্রন কণায়।
গবেষকরা এও জানিয়েছেন মহাকাশের এই হারিকেন খালি চোখে দেখা সম্ভব হয়নি। তা পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত ৪টি উপগ্রহের ‘চোখে’ ধরা পড়েছে।