বাবার ডায়াবিটিসের ওষুধ বিপদ ডেকে আনে সদ্যোজাতের। -ফাইল ছবি।
বাবার ওষুধ খাওয়ার অভ্যাসে খুব ক্ষতি হতে পারে সদ্যোজাতের। সে জন্মাতে পারে বহু শারীরিক ত্রুটি-বিচ্যূতি নিয়ে।
সেই আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে যায় সদ্যোজাতের যদি তার বাবা টাইপ-টু ডায়াবিটিসে বহুল ব্যবহৃত ওষুধ মেটফর্মিন খুব বেশি পরিমাণে বা অনেক দিন ধরে খান।
সেই আশঙ্কা আরও বাড়ে যদি দেহে শুক্রাণু গঠনের সময়েই কেউ অত্যধিক মাত্রায় খান মেটফর্মিন। আর সেই সময়েই সঙ্গমের ফলে তাঁর স্ত্রী বা সঙ্গিনী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। সেই আশঙ্কা আরও বাড়ে পুত্রসন্তানের জন্মের ক্ষেত্রে। তাদের যৌনাঙ্গ সঠিক ভাবে গড়ে ওঠে না। যৌনাঙ্গে নানা ধরনের অসঙ্গতি থাকে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যানাল্স অব ইন্টারনাল মেডিসিন’-এ। গত ২৮ মার্চ।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, টাইপ-টু ডায়াবিটিসে চিকিৎসকরা এখন একেবারে গোড়ার দিক থেকেই যে মেটফর্মিন ওষুধ দিয়ে থাকেন তা নিয়ে এ বার ভাবনাচিন্তার সময় এসে গেল বলে বার্তা দিল আমেরিকার জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার এই ফলাফল। এ বার চিকিৎসকদের বিকল্প কোনও ওষুধের কথা ভাবতে হবে। বা সেই ওষুধ দেওয়ার আগে কোনও পুরুষ রোগীর কাছে জেনে নিতে হবে তিনি কত দিনের মধ্যে সন্তানের প্রত্যাশা করছেন। বা সেই দম্পতিকে যথাযথ ভাবে গাইড করতে হবে চিকিৎসকদের।
তবে তার আগে শুক্রাণু ও ভ্রূণ গঠনের সময় মেটফর্মিন ওষুধের উপাদানগুলির কী কী ভূমিকা থাকে তা আরও বিশদে খতিয়ে দেখতে হবে, জানিয়েছেন গবেষকরা। ফলে, আগামী দিনে এ ব্যাপারে গবেষণার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে যথেষ্টই।
এটা ঠিকই যে, মেটফর্মিন ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য খুব কার্যকরী ওষুধ। দামেও সস্তা। সহজলভ্য। নিরাপদও। কারণ, এই ওষুধের কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই বলেই এতদিন জানা ছিল।
তবে এই গবেষণার ফলাফল যে ইঙ্গিত দিল তাতে মেটফর্মিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা একেবারে নেই, তা আর বলা যাবে না।
গবেষকরা দেখেছেন, যাঁদের টাইপ-ওয়ান বা টাইপ-টু ডায়াবিটিস রয়েছে তাঁদের দেহ ইনসুলিন ক্ষরণে বাধা দেয়। তাঁরা যদি উচ্চ রক্তচাপেরও রোগী হন তা হলে বিপদ আরও বাড়ে। কারণ, তাঁদের টেস্টোস্টেরন ও শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যায়। তার ফলে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে উল্লেখযোগ্য হারে। পুরুষাঙ্গ সোজা হয় না। এগুলি হয় শুক্রাণুর কোষগুলিতে ডিএনএ-র খুব ক্ষতি হয় বলে।
১৯৯৭ থেকে ২০১৬, এই ২০ বছরে ডেনমার্কে ১১ লক্ষেরও বেশি সদ্যোজাতের উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন গবেষকরা। যে শিশুদের মায়েরা সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় বা তার আগে ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগেছেন তাদের এই গবেষণার আওতায় আনা হয়নি বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।