Science

মানুষ না মেরেও এক লহমায় বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেবে এই ব্রহ্মাস্ত্র!

বেঁচে থাকতে হবে মরে গিয়ে! হার্টের ‘লাব-ডুব’ থামবে না। যেতে হবে না ‘লাশকাটা ঘরে’! কিন্তু ঝুপ্‌ করে ঘন, জমাট অন্ধকার নেমে আসবে চার পাশে। আর সেই অন্ধকার ঝাঁপিয়ে পড়বে আমাদের ওপর। আমাদের গ্রাস করে নেবে। এক লহমায় অচল হয়ে যাবে একটা শহর বা একটা রাজ্যের সবক’টা পাওয়ার গ্রিড। দুম করে বন্ধ হয়ে যাবে যাবতীয় কম্পিউটার।

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ২০:৩৭
Share:

সেই মার্কিন ‘ব্রহ্মাস্ত্র’!

বেঁচে থাকতে হবে মরে গিয়ে!

Advertisement

হার্টের ‘লাব-ডুব’ থামবে না। যেতে হবে না ‘লাশকাটা ঘরে’! কিন্তু ঝুপ্‌ করে ঘন, জমাট অন্ধকার নেমে আসবে চার পাশে। আর সেই অন্ধকার ঝাঁপিয়ে পড়বে আমাদের ওপর। আমাদের গ্রাস করে নেবে। এক লহমায় অচল হয়ে যাবে একটা শহর বা একটা রাজ্যের সবক’টা পাওয়ার গ্রিড। দুম করে বন্ধ হয়ে যাবে যাবতীয় কম্পিউটার। উড়ে যেতে পারে হার্ড ড্রাইভে রাখা অনেক ‘মেমরি’ও। অনেক গোপন তথ্য। সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে গোটা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার। অচল হয়ে যাবে শেয়ার মার্কেট। অকেজো, অচল হয়ে যাবে গাড়িঘোড়া, যানবাহনের যাবতীয় ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট। আর সেই জমাট অন্ধকার আমাদের গ্রাস করে রাখবে বহু দিন ধরে।


যে কামান থেকে ছোঁড়া যাবে ওই ব্রহ্মাস্ত্র- ‘এম্পাস’

Advertisement

যেন হঠাৎই ঝুপ্ করে নিভে গিয়েছে সূর্যটা! নিভে গিয়েছে আগেই, বেশ কয়েক মিনিট পর যেন তার টের পাচ্ছি! এক জন মানুষকেও না মেরে পরমাণু বা হাইড্রোজেন বোমার চেয়েও শক্তিশালী এমন একটি ভয়ঙ্কর অস্ত্র বানানোর জোর প্রস্তুতি-তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে আমেরিকায়। ভারতের ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স উইং’ (র)-এর এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘গত দু’বছরের গবেষণা, প্রযুক্তি-প্রকৌশল উদ্ভাবনের পর ২০১৭-র শেষে বা ২০১৮-র মাঝামাঝি পরীক্ষামূলক ভাবে পৃথিবীর কোনও দেশ বা কোনও দেশের বিশেষ কোনও শহরের ওপর মানুষ-না-মারা ওই ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী অস্ত্র প্রয়োগের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে পেন্টাগন। এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে আমেরিকার বেসরকারি বিমান সংস্থা ‘বোয়িং’-এর গবেষণা ও উন্নয়ন (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা, আরঅ্যান্ডডি) বিভাগের।’’ পেন্টাগনের একটি রিপোর্টে সম্প্রতি ওই প্রস্তুতির সবিস্তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টটির নাম- ‘উইনিং দ্য এয়ারওয়েভস: রিগেইনিং আমেরিকা’স ডমিন্যান্স ইন দ্য ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম’।

সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অস্ত্রটি যেন চুপিসাড়ে এসে যাওয়া যম! কোনও বিস্ফোরণ হবে না বলে এই অস্ত্র প্রয়োগের পর শোনা যাবে না কোনও শব্দ। পরমাণু বা হাইড্রোজেন বোমা ফাটার পর যেমন বিশাল একটা এলাকা জুড়ে অসম্ভব জোরালো ভূমিকম্পের মতো থরথর করে কেঁপে ওঠে মাটি, গ্রহাণু ছুটে এসে আছড়ে পড়লে যেমন বিশাল এলাকা জুড়ে ফাটলের সৃষ্টি হয় ভূপৃষ্ঠে, তেমন কিছুই হবে না এই অস্ত্র প্রয়োগের পর। তার বদলে, একেবারেই নিঃশব্দে এই ভয়ঙ্কর শক্তিশালী ‘ব্রহ্মাস্ত্র’টি থরথর করে কাঁপিয়ে দেবে এই পৃথিবীকে চার পাশ দিয়ে ঘিরে থাকা তড়িৎ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বা ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ডটাকেই।

আরও পড়ুন: স্মার্টফোনই বলে দেবে, সারছে কি না ক্যানসার! আসছে অ্যাপ

মাটি কাঁপলে মৃত্যুর আগেও তা বুঝতে পারে মানুষ, জীবজন্তু, গাছপালা, প্রকৃতি। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অনেক অনেক ওপরের স্তরে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্রে কোনও ভয়ঙ্কর আলোড়ন হলে, সেই চৌম্বক ক্ষেত্র আচমকা ঘেঁটেঘুঁটে গেলে তার সরাসরি কোনও ‘ধাক্কা’ (শক) শারীরিক ভাবে এই বাসযোগ্য গ্রহের কোনও প্রাণের পক্ষেই বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। আগে থেকে তা টের পাওয়াটাও কারও পক্ষে অসম্ভবই।

জাপানি পদার্থবিজ্ঞানী মিশিও কাকু জানাচ্ছেন ওই ব্রহ্মাস্ত্রের কথা। ভিডিও।

কী সেই ভয়ঙ্কর শক্তিশালী অস্ত্রটির নাম?

র’-এর ওই পদস্থ কর্তা বলেছেন, ‘‘ওই মার্কিন অস্ত্রটির নাম- ‘ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক পাল্স আর্টিলারি শেল’ (ইএমপিএএস বা, ‘এম্পাস’)। যা ছোঁড়া যাবে হাউইৎজারের মতো কোনও শক্তিশালী কামান থেকে। যা এক লহমায় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে তুমুল আলোড়ন ঘটিয়ে, তাকে ঘেঁটেঘুঁটে দিয়ে কোনও একটি দেশ বা কোনও একটি দেশের বেছে নেওয়া বিশাল একটা এলাকার যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থাকে একেবারে তছনছ করে দেবে। ভাঙবে না, মচকাবেও না! ওই ভয়ঙ্কর শক্তিশালী মার্কিন অস্ত্রটি এক লহমায় (এক সেকেন্ডের একশো ভাগের এক ভাগেরও কম সময়ের মধ্যে) একেবারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেবে ওই দেশ বা ওই বিশেষ এলাকার যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থাকে। একেবারে টুঁটি টিপে শেষ করে দেবে সেই দেশ বা সেই বিশেষ এলাকার কম্পিউটার-নির্ভর যাবতীয় সিস্টেম এবং ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে। সমরাস্ত্রের গোত্রে এই ধরনের শক্তিশালী অস্ত্রকে বলে- ‘নন-কাইনেটিক ওয়েপ্‌ন’ (এনকেডব্লিউ)।’’

ওই ব্রহ্মাস্ত্রের ক্ষমতা বুঝুন এই ভিডিও’য়।

কী ভাবে কাজ করবে ওই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’টি?


বোয়িং-এর সেই ব্রহ্মাস্ত্র- ‘চ্যাম্প’। ২০১২-য় যার পরীক্ষা করেছিল বোয়িং, আমেরিকার উটায়, অত্যন্ত গোপনে

বেসরকারি মার্কিন বিমান সংস্থা ‘বোয়িং’-এর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ইঞ্জিনিয়ার অনিতা ভোগলে টেক্সাস থেকে টেলিফোনে আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘ওই নন-কাইনেটিক ওয়েপ্‌নটিকে বসানো থাকবে হাউইৎজারের মতো কামানের ১৫৫ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের গোলার মধ্যে। পরে ওই কামান থেকে পরপর ছোঁড়া সবক’টি গোলার (মালটিপ্‌ল শেল্‌স) মধ্যেই ওই নন-কাইনেটিক ওয়েপ্‌নটিকে পুরে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে জোর কদমে। তার ফলে কামান থেকে বেরিয়ে আসা একের পর এক গোলার আঘাতে একেবারে থরথরিয়ে কেঁপে উঠবে পৃথিবীকে ঘিরে থাকা তড়িৎ-চৌম্বক ক্ষেত্রটিকে। আর তাতেই ভয়ঙ্কর ওলটপালট ঘটে যাবে পৃথিবীর তড়িৎ-চৌম্বক ক্ষেত্র বা ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ডে। ওই ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ওপর ভরসা করেই চালু রয়েছে পৃথিবীর সব প্রান্তের যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থা। তাই ওই ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ডে ভয়ঙ্কর ওলটপালট ঘটে গেলেই যে দেশ বা যে এলাকাকে টার্গেট করে ছোঁড়া হবে সেই কামানের গোলা, তা সেই দেশ বা সেই বিশেষ এলাকার যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থাকেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দেবে। যাতে অনেক দূর থেকে আসার পথে পৃথিবীর অনেক বেশি এলাকার ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ডকে ঘেঁটেঘুঁটে দিতে না পারে ওই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’টি, তাই সেটিকে এমন ভাবে বানানো হচ্ছে, যাতে তা অল্প দূরত্ব থেকেই আঘাত হানতে পারে কোনও নির্দিষ্ট দেশ বা তার কোনও সুনির্দিষ্ট এলাকায়। চেষ্টা চলছে ওই অস্ত্র বানানোর খরচ আরও কমানোরও। এই বছরের মধ্যেই ওই ভয়ঙ্কর শক্তিশালী অস্ত্রের একটি ‘প্রোটো-টাইপ’ বানিয়ে ফেলার আশা করছে পেন্টাগন। ইতিমধ্যেই ওই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বানানোর প্রস্তুতি-তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে রাশিয়া, ইরান ও চিনেও। বেসরকারি স্তরে ‘বোয়িং’ ইতিমধ্যেই ‘চ্যাম্প’ নামে এমন একটি ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বানিয়েছে। ২০১২ সালে উটায় একটি মার্কিন মিলিটারি বেসে সেই ‘চ্যাম্প’-এর সফল পরীক্ষাও করেছিল ‘বোয়িং’। তবে তার শক্তি অনেকটাই কম। পেন্টাগন তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী অস্ত্র ‘এম্পাস’ বানাচ্ছে।’’

এই অস্ত্র কি নেড়ে-ঘেঁটে দিতে পারে বেতার যোগাযোগ চলে যে ‘সুপার-হাইওয়ে’ বা ‘মহা-সড়ক’ ধরে, সেই রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নেটওয়ার্ককেও ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারবে?

ঘুমিয়ে পড়বে রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি নেটওয়ার্কও।

অনিতা বলছেন, ‘‘রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নেটওয়ার্ককে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া যায় কী ভাবে, তা নিয়ে গবেষণা চলবে। সে দিনও খুব বেশি দূরে নেই, যে দিন এই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারবে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নেটওয়ার্ককেও।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement