সৌরঝড় আছড়ে পড়ার ফলে এই মেরুজ্যোতি দেখা গিয়েছে রবিবার সুইডেনে। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
দীপাবলির সময় ফের জোর ধামাকা সূর্যে!
আবার উঠেছে ভয়ঙ্কর সৌরঝড় (‘সোলার স্টর্ম’)। যা ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকেই। সেই সৌরঝড়ের সঙ্গী হয়েছে আরও এক সৌর হানাদার। সূর্যের ‘মাংস’(সৌর বায়ুমণ্ডল বা ‘সোলার করোনা’র ‘প্লাজমা’) উপড়ে আনা সেই হানাদারের নাম ‘করোনাল মাস ইজেকশান (সিএমই)’। সেটাও ধেয়ে আসছে সরাসরি পৃথিবীর দিকেই।
যা দীপাবলির দিন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ আছড়ে পড়বে পৃথিবীর উপর।
মোহনপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার কলকাতা)’-এর তরফে বুধবার ‘আনন্দবাজার অনলাইন’-কে এ কথা জানানো হয়েছে। একই খবর দিয়েছে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ওশ্নিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া)’-ও।
কোনও আদালতের নির্দেশই কার্যকর হয় না সূর্যের মুলুকে! কাউকেই রেয়াত করার দরকার নেই তার। তাই সবকিছুকে থোড়াই কেয়ার করেই সূর্যে ফের হল প্রবল বিস্ফোরণ, দীপাবলির সময়েই।
এর আগে একই রকম বিস্ফোরণ হয়েছিল সূর্যে, গত ৩০ অক্টোবর। যার সঠিক পূর্বাভাস দিতে পেরেছিলেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিব্যেন্দু নন্দী ও তাঁর গবেষক ছাত্র শুভদীপ সিন্হা।
খুব উজ্জ্বল আলোয় ঝলসে উঠবে আকাশ
প্রায় সাড়ে ন’কোটি মাইল দূরের সূর্য থেকে ছুটে আসা এই হানাদারদের হামলায় দীপাবলির দিন, বৃহস্পতিবার ভোরে ঝনঝন করে কেঁপে উঠবে পৃথিবীর চার পাশে থাকা খুব শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র। পৃথিবীর দুই মেরুতে আরও ঘনঘন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখা যাবে মেরুজ্যোতি (‘অরোরা’)। সৌরঝড়ের সঙ্গে আসা সৌরকণা (‘সোলার পার্টিকল’)-দের ঢুকতে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র বাধা দিতে চাইবে। এই সৌরকণাগুলি প্রাণের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
সৌরকণাদের সঙ্গে সেই ‘সংঘর্ষ’ই দৃশ্যমান হবে পৃথিবীর দুই মেরুতে উজ্জ্বলতর মেরুজ্যোতির মাধ্যমে।
গত শুক্রবারের সৌরঝড়ে এই মেরুজ্যোতি দেখা গিয়েছে নরওয়েতে। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
কতটা গতিবেগে আছড়ে পড়বে সেই সৌরঝড়?
আইসার কলকাতা-র ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন স্পেস সায়েন্সেস ইন্ডিয়া (সেসি)’-র তরফে দেওয়া পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ যে ভয়ঙ্কর সৌরঝড়টি আছড়ে পড়তে চলেছে পৃথিবীতে শেষ মুহূর্তে তার গতিবেগ হবে সেকেন্ডে প্রায় ৭৬৮ কিলোমিটার। তার কিছুটা কম-বেশিও হতে পারে।
গত রবিবারের সৌরঝড়ে এই মেরুজ্যোতি দেখা গিয়েছে নরওয়েতে। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
‘সেসি’-র অধিকর্তা আইসার কলকাতার অধ্যাপক সৌরপদার্থবিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দী ‘আনন্দবাজার অনলাইন’-কে বলেছেন, ‘‘যে সৌরঝড় এবং করোনাল মাস ইজেকশান এ বার আছড়ে পড়তে চলেছে পৃথিবীতে সেটি তৈরি হয়েছে মঙ্গলবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ। সূর্যের বিষূবরেখার (‘ইক্যুয়েটর’) একটু উত্তর দিকে থাকা সৌরকলঙ্ক (‘সানস্পট’) থেকে। যার নাম ‘অ্যাক্টিভ রিজিওন (এআর)-১২৮৯১’। ওই সৌরকলঙ্ক থেকে যে সৌরঝলক (‘সোলার ফ্লেয়ার’) বেরিয়ে এসেছে তা থেকেই তৈরি হয়েছে এই সৌরঝড়। তৈরি হয়েছে সিএমই-ও।’’
দিব্যেন্দু এও জানিয়েছেন, এর আগে তাঁদের দেওয়া পূর্বাভাস মিলিয়ে দিয়ে যে সৌরঝড় এবং সিএমই পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল গত শুক্রবার থেকে গত রবিবার পর্যন্ত তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী (বিজ্ঞানের পরিভাষায়, ‘কেপি ৪’ এর বেশি) হতে চলেছে বৃহস্পতিবার ভোরের সৌরঝড়টি। শক্তির নিরিখে এই সৌরঝড় হবে ‘এম’ শ্রেণির।
গত রবিবারের সৌরঝড়ে এই মেরুজ্যোতি দেখা গিয়েছে সুইডেনে। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
এর আগেও দিব্যেন্দুদের পূর্বাভাস দু’টি জায়গায় মিলে গিয়েছিল। এক, সূর্যের ঠিক কোন অংশ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে শক্তিশালী সৌরঝলক মোটামুটি কোন সময়ের মধ্যে তা অন্তত দিন তিন-চার আগেই বলে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। আর দুই, শক্তির নিরিখে এই সৌরঝলকগুলি হবে কোন কোন শ্রেণির তাও সঠিক ভাবে বলে দেওয়া গিয়েছে।