শিশুর কাছে যে মাতৃদুগ্ধের কোনও বিকল্প হয় না, তা প্রমাণ করল করোনাভাইরাসও! -ফাইল ছবি।
টিকার চেয়েও বড় অস্ত্র হতে পারে মাতৃদুগ্ধ!
শিশুর কাছে যে মাতৃদুগ্ধের কোনও বিকল্প হয় না, তা প্রমাণ করল করোনাভাইরাসও!
জানা গেল, কোভিড-আক্রান্ত মা-ই পরিত্রাতা হয়ে ওঠেন সদ্যোজাতের। মায়ের স্তন্যদুগ্ধ জন্মের পর পরই শিশুকে দিয়ে দেয় করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার— অ্যান্টিবডি। ফলে, করোনার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে নিতে শিশুর আর টিকার প্রয়োজন হয় না।
আমেরিকার ছ’টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি হাসপাতালের যৌথ গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাটি চালিয়েছে আইড্যাহো বিশ্ববিদ্যালয়, রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়, তুলেঁ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেন্স হসপিটাল। নজরকাড়া গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন ইমিউনোলজি’-তে। গত ২৩ ডিসেম্বর।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অতিমারি শুরু হওয়ার পর আমেরিকার ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ যে সদ্য প্রসূতিদের স্তন্যপান করানো অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছিল, এই গবেষণার ফল সেই সুপারিশকে যুক্তির ভিত্তিভূমিতে শক্তপোক্ত ভাবে দাঁড় করিয়ে দিল।
অন্যতম মূল গবেষক আইড্যাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশেল কে শেলি ম্যাকগুয়েরি বলেছেন, ‘‘আমরা দেখেছি, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার দু’মাস পরেও স্তন্যদুগ্ধে শিশুকে দেওয়ার জন্য অ্যান্টিবডি থাকছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। আর সেই অ্যান্টিবডিগুলি ডেল্টা, ওমিক্রন-সহ করোনাভাইরাসের প্রায় সব ক’টি রূপকেই সদ্যোজাতের শরীরে রুখে দিতে পারছে।’’ দেখা গিয়েছে, কোনও কোনও মায়ের ক্ষেত্রে সংক্রমণের এক সপ্তাহের মধ্যেই শিশুকে দেওয়ার জন্য ওই অ্যান্টিবডিগুলি তৈরি হয়ে যাচ্ছে স্তন্যদুগ্ধে।
গবেষকরা দেখেছেন, স্তন্যদুগ্ধে মূলত তৈরি হচ্ছে ইমিউনোগ্লোবিন এ শ্রেণির অ্যান্টিবডি। যারা ভাইরাসের বাইরে থাকা শুঁড়ের মতো স্পাইক প্রোটিনের বিভিন্ন অংশকে বেঁধে ফেলতে পারে। সংক্রমণের পর ভাইরাস এই স্পাইক প্রোটিন দিয়েই মানবকোষে নোঙর ফেলে। যে ৬০ জন সদ্য প্রসূতির স্তন্যদুগ্ধের নমুনা পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা তাঁদের তিন-চতুর্থাংশের মধ্যেই শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই ইমিউনোগ্লোবিন এ শ্রেণির অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে।
গবেষকরা এ-ও লক্ষ্য করেছেন, কোভিডে সংক্রমিত মায়ের স্তন্যদুগ্ধে করোনাভাইরাসের কোনও জেনেটিক পদার্থই থাকছে না। যার অর্থ, মায়ের শরীরে ভাইরাসের সেই জেনেটিক পদার্থ থাকলেও কোনও কারণে তা স্তন্যদুগ্ধে মিশতে পারছে না। এর কারণ কী, সেটা অবশ্য গবেষকরা এখনও জানতে পারেননি।
তবে কোভিডে সংক্রমিত মায়েদের স্তনের ত্বকে কিন্তু সেই ভাইরাসের জেনেটিক পদার্থের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। স্তনের ত্বক ভাল ভাবে ধুয়ে না দিলে ভাইরাসের পরিমাণ বেশি পেয়েছেন গবেষকরা। আর ধুয়ে দিলে তা পেয়েছেন খুব সামান্য পরিমাণে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, কোভিড সংক্রমিত মায়েদের হাঁচি, কাশি থেকেই ভাইরাসের জেনেটিক পদার্থগুলিকে স্তনের ত্বকে আসছে।